প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১৫ জুন ২০১৯
আপডেট: ১১:০৯, ১৫ জুন ২০১৯
আপডেট: ১১:০৯, ১৫ জুন ২০১৯
ভয়াবহ খরায় পুড়ছে ভারত
বিশ্ব ডেস্ক: ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছে। পানি সংকটে ভারতের হাজার হাজার মানুষ অন্যত্র চলে গেছে। খরায় পোড়ে বিরান হয়ে গেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের শত শত গ্রাম।
গার্ডিয়ান সূত্র জানায়, কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে, কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছে। বিশেষত দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে খরা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত সোমবার(১০ জুন) ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি জুনের সর্বোচ্চ। এদিকে একই দিনে রাজস্থানে ৫০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এত উচ্চ তাপমাত্রা বিশ্বের খুব কম স্থানেই রেকর্ড হয়ে থাকে।
ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই থেকে প্রায় ২৫০ মাইল দক্ষিণের এলাকায় গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়েছে। পানিশূন্যতায় মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র সরে গেছে। যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, এসব এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দা নিজেদের বসতিবাড়ি ছেড়েছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, মহারাষ্ট্রের ২০ মাইল দূরবর্তী বিদ অঞ্চলের হাতকারওয়াদি নামক গ্রামটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
গড়পড়তা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের কূপ ও চাপকলগুলো শুকিয়ে যায়। সম্প্রতি তীব্র আকার ধারণ করা চলমান খরা গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে। ১৯৭২ সালে ভারত ইতিহাসের ভয়ংকরতম খরার মুখোমুখি হয়েছিল। সে বছর খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আড়াই কোটি মানুষ। চলতি বছরের মে মাসের শেষ নাগাদ হাতকারওয়াদি গ্রামের ১০-১৫টি পরিবার ছাড়া প্রায় দুই হাজার বাসিন্দা অন্যত্র চলে গেছে।
কর্ণাটকের পার্শ্ববর্তী ৮০ শতাংশ ও মহারাষ্ট্রের ৭২ শতাংশ জেলায় খরার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ দুটি রাজ্যের ৮০ লাখ কৃষককে বেঁচে থাকতেই মরণপণ সংগ্রাম করতে হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছয় হাজারের অধিক ট্যাংকার প্রতিদিন জল সরবরাহে নিয়োজিত রয়েছে। এ দুটি রাজ্যে পানিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ক্রমেই বাড়ছে।
তীব্র পানি সংকটের কারণে খরাপ্রবণ অঞ্চলগুলোয় ভারতের কৃষিভিত্তিক জীবিকা প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। পানিস্বল্পতায় ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে ও মারা যাচ্ছে। পানির অভাবে মারা যাচ্ছে অজস্র গবাদি পশু। অভূতপূর্ব চলমান খরায় আক্রান্ত অঞ্চলগুলোয় ভুট্টা, সয়া, তুলা, মিষ্টি চুন, ডাল ও বাদামের মতো প্রধান অর্থকরী ফসলগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলছেন, বিশ্বের সর্বত্র এল নিনো নামের এক ধরনের শুষ্ক আবহাওয়া ও চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব দিনে দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তীব্র হচ্ছে। এল নিনো আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্প্রতি বিশ্বের নানা জায়গায় ঘন ঘন খরা ও রুক্ষ আবহাওয়া দেখা দিচ্ছে, বিশেষত ভারত এসবের অন্যতম শিকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারতের অঞ্চলগুলোর মধ্যে মারাঠওয়াদা সবচেয়ে খরাপ্রবণ। ক্রমবর্ধমান খরার কারণে গত পাঁচ বছরে এ অঞ্চলে ৪ হাজার ৭০০-এর বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন, এর মধ্যে গত বছরই আত্মহত্যা করেছেন ৯৪৭ কৃষক। ভারতে খরার অবস্থা দিন দিন আরো গভীর হচ্ছে। এদিকে বিদ অঞ্চল পানীয় জলশূন্য হয়ে পড়েছে। রান্নাবান্না, কাপড় কাচা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এমনকি পয়োনিষ্কাশনের জন্যও পানি নেই এ অঞ্চলে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে তাপমাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে বলে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে। ভারত আগামীতে এসব প্রতিকূল আবহাওয়ার আরো বেশি মুখোমুখি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই দেশটিকে সবার জন্য পানি নিশ্চিত করতে টেকসই সমাধান বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহল থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের
সর্বশেষ
জনপ্রিয়