প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১৭ জুন ২০১৯
আপডেট: ১৪:৫৩, ১ জুলাই ২০১৯
আপডেট: ১৪:৫৩, ১ জুলাই ২০১৯
ধাতব মুদ্রার শৈশব ও মৃত্যু
সজীব তুষার: দেশের মুদ্রাব্যবস্থা থেকে দিন দিন লুপ্ত হচ্ছে খুচরো পয়সা। অচল পয়সার মতোই মূল্যহীন হয়ে পড়েছে সচল ধাতব মুদ্রাগুলো। পঁচিশ পয়সার পলিথিনে মোড়া হলুদ চকলেট কিনে একটা ইটে রেখে অন্য ইটের আঘাতে গুড়ো করে ভাইবোন মিলে খাওয়ার স্মৃতি বেশিদিন আগের না। এইতো ২০০০-২০০৭ এর কথা। হাই স্কুলে যেতে যে চার টাকা পেতাম তার থেকে আট আনার পিঠা, আট আনার ঝালমুড়ি খেয়ে ২ টাকায় রিক্সা চড়ে বাড়িতে আসতাম। আর রইলো ১ টাকা। মোটর সাইকেল কেনার জন্য অনেক যত্ন করে রেখে দিতাম মেলা থেকে বাবার কিনে দেওয়া মাটির ব্যাংকে।
অবারিত স্মৃতি ঘেরা এসব খুচরো পয়সার প্রচলন স্বাভাবিকভাবেই কমছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে । দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদগণ এমনটাই ধারণা করছেন। তবে তাঁদের মতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এদেশেও ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবস্থা থাকলে এসব খুচরো কয়েনের ব্যবহার ধরে রাখা যেত। এছাড়া নোট ছাপানোর ব্যয় কমাতে নোটের পরিবর্তে বেশি করে এক টাকা থেকে দশ টাকা পর্যন্ত কয়েন তৈরির পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
আমাদের ছোটবেলায় ভাংতি পয়সার অনেক দাম ছিল। ছোটবেলা যখন প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হই তখন দুই টাকা পেতাম স্কুলে যেতে। ওই দুই টাকা কখনো পেতাম চার টা আট আনার মুদ্রা অথবা দুইটা আট আনা আর চারটা চার আনার মুদ্রায়। ওই টাকাগুলো দিয়েই দিব্যি কেটে যেতো সারাটা দিন। আমার একটা লাল রঙের মাটির ব্যাংক ছিলো। বাবার কাছে মোটর গাড়ি কেনার বায়না করার পর এক মেলা থেকে বাবা কিনে দিয়েছিলেন। আমি রোজ চার আনা,আট আনা, স্কুল বন্ধ থাকলে এক টাকা বা পুরো দুই টাকাই জমিয়ে রাখতাম। সেই মোটর গাড়ির স্বপ্ন ভেঙে দিতো বড় ভাইরা। হঠাৎ কোন দিন উঠে টাকা রাখতে এসে দেখতাম ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে। সারাদিন কান্না করতাম তখন। সেইসব স্মৃতি আজও অমলিন।
কয়েক বছর আগে বাজারে এক টাকা এমনকি ভাংতি পয়সা দিয়ে কিছু না কিছু পাওয়া যেত। একসময় ১০ পয়সা দিয়ে পাওয়া যেত হাওয়াই মিঠাই, ২৫ পয়সা দিয়ে পাওয়া যেত কাঠি লজেন্স। এক দশক আগেও এক খিলি পানের দাম ছিল ৫০ পয়সা। দাম বাড়ার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এসবের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। একইসঙ্গে হারিয়ে গেছে ভাংতি পয়সা। একইভাবে উধাও হয়ে গেছে কম মূল্যের অনেক পণ্যও।
বাসায় মা’র সিকি-আধুলির একটা মাটির ব্যাংক ছিল। যেখানে পয়সা জমিয়ে মা’কে অনেক সাংসারিক জিনিস কিনতে দেখেছি। তারপর টাকার মান কমতে কমতে একসময় পাঁচ টাকা, দশ টাকাও গুরুত্বহীন হয়ে গেল। আর সিকি–আধুলি রীতিমতো উধাও হলো আমাদের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেন থেকে। বড় হতে হতে কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে রাখা পয়সা কোথায় যেন পালিয়ে গেল!
দশ পয়সায় হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার দিন হাওয়া হয়ে গেছে অনেক আগেই। পঁচিশ পয়সায় চকোলেট-আইসক্রিম, পঞ্চাশ পয়সার খিলি পানও ইতিহাস হয়ে গেছে। একইসঙ্গে ইতিহাস হয়ে গেছে ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা ও ৫০ পয়সার মুদ্রাও। এসব মুদ্রার প্রচলন এখন আর নেই বললেই চলে।
দ্রব্যমূল্য বিরামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণেই বর্তমানে ভাংতি পয়সা অচল হয়ে গেছে। লেনদেন হয় না বলেই এসব খুচরো মুদ্রা হারিয়ে গেছে। দু'একটি পয়সা হাতে এলেও তা কেউ গ্রহণ করতে চান না। মুদি দোকানদার, বাস কন্ডাক্টর, এমনকি ভিক্ষুকও ভাংতি পয়সা নিতে চান না।
কিছুদিন আগে মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনায় দেখা হয় ষাটোর্ধ ভিক্ষুক রফিক মিয়ার সাথে। ভাংতি পয়সা ভিক্ষা দিতে গেলে ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ভাংতি পয়সা ভিক্ষা করলে সারা দিনের ভিক্ষার টাকায় দু'বেলা খাবারও পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, এক কেজি মোটা চালের দাম ৩৫ টাকার বেশি। ডাল, আলু, তরিতরকারির আকাশ ছোঁয়া দাম। ভাংতি পয়সা ভিক্ষা করলে সংসারের চালও কেনা যাবে না।
অন্যদিকে ফার্স্ট কান্ট্রি গুলোতে এখনও ধাতব মুদ্রার প্রচলনের বিষয় গুলো আমাকে অবাক করে। ইংল্যান্ডে এক পেন্স, দুই পেন্স দিয়েও এখনো সক্রিয় লেনদেন হয়। সুপার স্টোরে বিল মিটিয়ে মানুষ রীতিমতো এক পেন্স ফেরত পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে! অবশ্য কারও অপেক্ষার সীমা দীর্ঘ হওয়ার আগেই তা ফেরত দেওয়া হয়! এক পেন্স ফেরত পাওয়ার হলে বিনাবাক্যেই আপনি তা ফেরত পাবেন—এটাই সেখানকার স্বাভাবিক নিয়ম ও সংস্কৃতি। প্রতিটি সুপার স্টোরেই 'কয়েন কনভার্টার' আছে! মানুষ তাদের জমানো কয়েন নিয়ে আসে সেখানে, তা নোটে পরিণত করার জন্য! সামান্য কিছু ফি দিয়ে এই কাজ সম্পন্ন করা যায় মেশিনেই। কেউ আবার ভাংতি থেকে পাওয়া পুরো টাকাটা দিয়ে দেয় পছন্দের চ্যারিটিতে।
শুধু লেনদেনে নয়, পশ্চিমা জীবনে এই কয়েন সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়! এয়ারপোর্টে নেমে ট্রলি নেওয়া থেকে শুরু করে গাড়ি পার্কিং বা পাবলিক টেলিফোন-টয়লেট ব্যবহার করার জন্য এই কয়েন অনিবার্য। পশ্চিমা জীবনে প্রায় প্রতিটি মানুষের ওয়ালেটে/পার্সে কয়েন রাখার একটা বিভাগ থাকে! সার্ভিস ভেদে সেখানে নানা জাতের কয়েন প্রয়োজন হয়।
কিন্তু আপনি যখন আমাদের দেশের কোনো দোকানে নয় টাকার কিছু কিনতে যাবেন তখন আপনাকে দশ টাকাই দিয়ে আসতে হবে। এখানে এক টাকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলে কৃপন সম্বধোন নিয়ে নত মুখে ফিরে আসতে হবে আপনাকে। এর উল্টোটিও হয় যখন আপনি কিছু ক্রয় করলেন আর বিল হল একশত এক টাকা তখন আপনি একশত টাকা দিয়েই চলে আসতে পারেন।
এক দোকানদারের সাথে তো আমার ঝগড়াই হয়ে গিয়েছিলো এই কয়েন নিয়ে। এক কাপ চা’ পান করে পাঁচটাকার কয়েন দিতে গিয়েই বাঁধলো ঝগড়া। দোকানদার এই পাঁচটাকার ধাতব মুদ্রা নেবে না। আমিও আর কাগজের নোট দোকানদারকে দিচ্ছি না । এই নিয়ে ঘটে গেল এক তুমুলকালাম কাণ্ড। শেষমেশ আমার প্রতিবাদের সামনে দোকানদার এই কয়েন নিতে বাধ্য হয় । কিন্তু আমার নিজের কাছে খুবই খারাপ লাগছিল দোকানদারের সাথে ঝগড়া করছিলাম তার জন্য। কেন না, আমি নিজেও তো একজন কয়েন সমস্যায় ভুক্তভূগী।
আমরা সাধারণ মানুষ কার কাছে দাবি জানাতে পারি যে, মহোদয় আপনি এই দেশে দুইটাকা আর পাঁচটাকার কাগজের নোট থাকতে আর কোনো ধাতব মুদ্রা বাজারে ছাড়বেন না । যেগুলি আছে, সেগুলি থেকেও কিছু পরিমাণ ধাতব মুদ্রা উঠিয়ে নিন, দোকানদার সহ সাধারণ ব্যবসায়ী বাঁচান, সাধারাণ মানুষের ঝামেয়া মুক্ত করুণ । দাবি জানাই কার কাছে? কে শুনবে আমাদের কথা?
কথা হয় শহরের সুমা স্টোরের দোকানি সুমনের সাথে। তিনি জানান, এক খিলি পানের দাম চার টাকা। তার ভাষায়, জিনিস বেচে ভাংতি পয়সা নিলে তা রাখতে ক্যাশবাক্সের বদলে বিশাল সিন্দুক লাগবে। আবার এসব ভাংতি পয়সা গুনতে লাগবে কয়েকজন কর্মচারী।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মুদ্রারও পরিবর্তন ঘটে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বর্তমান সময়ে একদিকে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অপরদিকে মানুষের আয়ও বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে খুচরা পয়সা অচল হয়ে যাচ্ছে। কম মূল্যমানের এসব পয়সা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে এটিই অর্থনীতির স্বাভাবিক ধর্ম বলা চলে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসেব মতে জানা গেছে, গত কয়েক বছর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিন বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতিতে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে সদ্যসমাপ্ত ২০১০-১১ অর্থবছরে। জুন মাসের সর্বশেষ হিসেব মতে জাতীয়ভাবে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশে, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রেও রেকর্ডের ধারা অব্যাহত। গত অর্থবছরে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, তার আগের বছর ৮ দশমিক ৫৩ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড.সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, টাকার মান এত কমে গেছে যে, পাঁচ পয়সা দশ পয়সা তো দূরের কথা এক টাকা দুই টাকাতেও তেমন কিছুই পাওয়া যায় না। এ কারণে সাধারণ মানুষ কোন জিনিস কিনতে গেলে যদি ৯১ টাকা দাম হয় তাহলে ৯০ টাকা দিয়ে দেয়। বিক্রেতারাও এটি মেনে নেন। অথবা ৮৯ টাকা খরচ হলেও দোকানদাররা ৯০ টাকাই নিয়ে নেন, এৰেত্রে ক্রেতারাও মেনে নেন। এসব কারণে খুচরা পয়সার ব্যবহার কমে যাচ্ছে। তবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে যদি বিমানবন্দর, রেল স্টেশন, বাস স্টপেজসহ বিভিন্ন স্থানে ভেন্ডিং মেশিন বসানো থাকতা তাহলে হয়ত কয়েনের ব্যবহারটা কমত না। কেননা এসব মেশিনে কয়েন ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ চকোলেট, পত্রিকা, কোকাকোলা, সিগারেট, ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করত পারত। খুচরা পয়সার প্রচলন কমার অন্য একটি কারণ হচ্ছে মানুষের আয় বেড়ে যাওয়ায় এখন সবাই রাউন্ড ফিগারে খরচ করতে ভালোবাসে। তিনি আরও বলেন, খুচরা পয়সার ব্যবহার কমলেও কয়েনের ব্যবহার যাতে কমে না যায় সেদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নজর দিতে হবে। এৰেত্রে এক টাকা থেকে দশ টাকার পর্যন্ত কয়েন ছাপানো যেতে পারে। এতে করে টাকা ছাপানোর পর যে সময় পর্যন্ত তা ব্যবহার করা যায় কয়েন হলে তার চেয়ে অনেক বেশি সময় ব্যবহার করা যাবে। টাকা ছাপানোর ব্যয় কমে যাবে।
এ ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কয়েন উঠিয়ে দেওয়া এবং বেসরকারি পর্যায়ে দুইশত নয় টাকা বা এক হাজার নিরানব্বই টাকা জাতীয় রেট নির্ধারণের পশ্চিমা অনুকরণ বাদ দিয়ে সবকিছুর এমন একটা দাম নির্ধারণ করা যেতে পারে, যাতে এক টাকা বা কয়েনই আর ফেরত দিতে না হয়। এবং রাষ্ট্র-সরকারেরই আসলে উচিত এ বিষয়ে যথাযথ সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া। আর নইলে কয়েন রেখে দেওয়া এবং এর একটা বিশ্বাসযোগ্য ব্যবহার বা আদান-প্রদানও নিশ্চিত করা। কিন্তু এখন যা চলছে তা রীতিমতো অস্বস্তিকর এবং কিছুটা অন্যায়ও বটে! এই যে আমার প্রাপ্য এক টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না, এটা তো রীতিমতো অপরাধ! এবং আমরাও যে এই ফেরত না দেওয়া মেনে নিয়েছি, সেটাও কিন্তু এক সামাজিক অপরাধ! আর সমাজ-সরকার যে এই বিষয়গুলো শনাক্তই করতে পারে না এবং পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ তা তো সমাজ-রাষ্ট্রীয় অযোগ্যতার এক লজ্জা!
তবে আরেকটি বিষয়ও মাথায় আসে, যে সমাজে টাকার মূল্য কমতে কমতে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে পথেঘটে দুই-পাঁচ টাকার নোট ধুলায় গড়ালেও কেউ তুলে নেয় না বা ভিখারির ভিক্ষাও ন্যূনতম পাঁচ-দশ টাকার নোট, সেখানে কয়েন তো অসহায় হয়ে এ রকম নির্বাসিত হবেই! আমার কাছে কিন্তু আরেকটি বিষয়ও মনে হয়েছে! আসলে এই পুরো লেখাটির সূত্রপাত সেই বোধ থেকেই! সেটা হচ্ছে আমাদের সমাজে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি-অন্যায়ের মাত্রা যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি মানুষের নৈতিক বোধ এবং অনুভূতির, স্পর্শকাতরতার জায়গাটাও দিন দিন বোধহীন-ভোঁতা হয়ে পড়েছে অনেকটাই। গোটা জীবনটাই যেখানে বড় বড় অনিময়-অন্যায়-বোধহীনতার চাদরে মোড়ানো, সেখানে আর ১ টাকার কয়েন ফেরত দেওয়া বা ফেরত পাওয়ার ছোট্ট বিষয়টির জায়গা হয়? মানে আমরা সার্বিক অর্থেই টাকা এবং জীবনের মান এবং সূক্ষ্ম অনুভূতির জায়গাটা এমন কমিয়েছি যে নিজেদের অর্জিত টাকাগুলোকেও একটা অর্থহীন জায়গায় নিয়ে গেছি। ১ টাকা, ২ টাকা নিয়ে কথা বলাটাকেও একটা অপমানকর-উপহাসময়-অপ্রয়োজনীয় জায়গায় নিয়ে ঠেকিয়েছি আমরা। উন্নত বিশ্ব যেখানে ১ পেন্স ২ পেন্সের সযত্ন-প্রয়োজনীয় ব্যবহার করছে, সেখানে আমাদের ২–৫ টাকার নোট তুলে নেওয়ার অযোগ্য হয়ে ধুলায় গড়াচ্ছে।
তবে আশার বিষয়টি হচ্ছে এখনো অনেকের শখের মাঝে মাটির ব্যাংক বিশাল জায়গা জুড়ে আছে! এখনো আমার মানিব্যাগে থাকা এক টাকা,দুই টাকা কিংবা পাঁচ টাকার কয়েন আমি যত্ন করে রেখে দেই! পাঁচ টাকার নোটের বদলি কয়েন জোগাড় করে টুপ করে মাটির ব্যাংকে ফেলি! কয়েনের ঝনঝন শব্দ এখনও আমার ভালো লাগায় রয়ে গেছে! সমাজের নির্বাসিত-ফেরারী সিকিগুলো (ধাতব মুদ্রা) পরম যত্নে আমার ব্যাংকে কিছুটা হলেও ঠাঁই পেয়ে থাকে! পুরোনো জীবনকে আমি নতুন জীবনেও জাগ্রত রাখছি। আমার মা এখনো আমাকে কিছু কয়েন দিয়ে যান মাটির ব্যাংকটাতে রাখার জন্য, হয়তো তারও এক সময় যে সিকি-আধুলির একটা মাটির ব্যাংক থাকত—সেই কথাটা মনে থাকে। আমি আমার কয়েনগুলো জমিয়ে রাখি কোনো এক অনাগত কালের কিছু একটা প্রয়োজন মেটাব বলে। কয়েনের মতো জীবনের এই সব সামান্য-অনালোচিত বিষয় নিয়ে ভাবতে-ব্যাপ্ত থাকতেও দারুণ ভালো লাগে আমার।
এসটি/ইএন














আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের
সর্বশেষ
জনপ্রিয়