Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ অক্টোবর ২০২৫,   আশ্বিন ১৭ ১৪৩২

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ১৫ মে ২০২০
আপডেট: ০২:৪৮, ১৬ মে ২০২০

সকালে করোনা জয়, সন্ধ্যায় মারা গেলেন শাহ আলম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জমাদ্দারকান্দি গ্রামের শাহ আলম জমাদ্দার (৮৭)। এর চিকিৎসা নিতে তিনি ঢাকায় যান। কিন্তু তাকে ধরে ফেলে আতংক সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস। এরপর তিনি বাড়ি ফিরে চিকিৎসা নেন। সুস্থও হন। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।

শাহ আলমের ছেলে বাদল জমাদ্দার জানিয়েছেন, তার বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান জানান, শাহ আলম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। সকালেই তার পরিবারকে সুস্থ হওয়ার খবর দিয়েছি। এ খবরে সবাই খুশি হয়েছিলেন। হায়াতের মালিক সৃষ্টিকর্তা। কার কখন মৃত্যু তিনিই জানেন।

পরপর দুবার করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন নেগেটিভ আসায় তার করোনা নেই নিশ্চিত হই।

তাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দাফন দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, শাহ আলম বার্ধক্যজনিতসহ হৃদরোগ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। এ কারণে প্রায়ই তাকে হাসপাতালে নিতে হতো। অসুস্থতা বেশি হওয়ায় এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়। ২১ এপ্রিল ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে শাহ আলমের করোনা পরীক্ষা করা হয়। ২৩ এপ্রিল তার প্রতিবেদন ‘পজিটিভ’ আসে। 

বাড়ি ফিরে তার সংস্পর্শে আসা আটজনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে তার স্ত্রী ফতেজা বিবির (৭৫) করোনা শনাক্ত হয়। তাদের বাড়িতে আলাদা (আইসোলেশন) রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। তারা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। পরপর দুই দফায় তাদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল ‘নেগেটিভ’ আসে। 

গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেনু দাস, জাজিরা থানার ওসি আজহারুল ইসলাম সরকারসহ কর্মকর্তারা বাড়িতে গিয়ে তাদের করোনামুক্ত ঘোষণা করেন। তাদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। ফলমূলসহ উপহারসামগ্রী দেয়া হয়। বিকেলে শাহ আলম অসুস্থ হয়ে পড়েন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি মারা যান।

শাহ আলমের ছেলে বাদল জমাদ্দার বলেন, বৃহস্পতিবার যখন ইউএনও, ওসি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এসে মা–বাবার করোনা মুক্তির খবর দেন, সবাই খুশি হয়েছিলাম। তারা যখন ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান, বাবা খুশি হয়ে বলেছিলেন, এখন মরেও শান্তি পাব যে করোনা জয় করেছি। আল্লাহ হয়তো বাবার কথাই রেখেছেন, করোনা জয়ের পরই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। করোনা নিয়ে মারা গেলে সারা জীবন আমাদের আক্ষেপ থাকত। রাত ১১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে বাবাকে দাফন করা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, উপজেলা সদর থেকে শাহ আলমের বাড়ি অন্তত ১৫ কিলোমিটার দূরে। ওই গ্রামে গিয়ে শাহ আলম ও তার স্ত্রী ফতেজাকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। তারা যেহেতু বয়স্ক ছিলেন, তাদের নিয়ে আমাদেরও দুশ্চিন্তা ছিল। যখন তাদের বাড়ি গিয়ে করোনামুক্ত হওয়ার খবর দিই, সবাই অনেক আনন্দিত হন। ৮-৯ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই আনন্দ বেদনায় রূপ নিল। তিনি করোনা জয় করলেও মৃত্যুকে জয় করতে পারলেন না। তবে করোনা জয়ের আনন্দ নিয়েও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন।

আইনিউজ/এসবি

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়