জ্যাকলিন কাব্য
আপডেট: ২৩:২৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সবুজে শান্তির জাফলং

ছবি: জ্যাকলিন কাব্য, লেখক ও কবি সাহিত্যিক
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রকৃতি যেন পরম যত্নে সাজিয়েছে আমার এই দেশকে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে আর্শিবাদী। অপরূপ সৌন্দর্য্য যেন দুহাতে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি। দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমার মতো ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে যায় বিভিন্ন প্রান্তে। আমি বরাবর পাহাড়, নদী, ঝর্না পছন্দ করি। অসীম সবুজের প্রাণবন্ত পরিবেশে হারিয়ে যাওয়ার জন্য আমি মুখিয়ে থাকি। তাই এবার পরিকল্পনা করেছিলাম এবার দেখে আসব প্রকৃতিকন্যা জাফলং।
জাফলং, প্রকৃতির কন্যা হিসাবে পরিচিত। সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে জাফলং সবার পছন্দ। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রকৃতির দানে রুপের পসরা সাজিয়ে আছে জাফলং। পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে অনন্য। যা পর্যটকদেরকে ভ্রমণের জন্য সারাবছরই আগ্রহী করে রাখে।
আশেপাশে একটু ঘুরে দেখলেই পেয়ে যাবেন বিস্তৃত চা বাগান। বিকেলে হালকা রোদের পড়ন্ত আলোতে দেখতে পারেন জাফলং ব্রিজের সৌন্দর্য। পিয়াইন নদী পার হলেই পেয়ে যাবেন খাসিয়া পুঞ্জি, সংগ্রাম পুঞ্জি। খাসিয়া পুঞ্জির মনোরম বাড়িঘরগুলো আপনাকে মুগ্ধ করবে। রাস্তা ধরে যতদুর যাবেন কেবল সুপারি আর পানের বরজ। কিংবদন্তি আছে, সোনাটিলা গ্রামে প্রতিদিন বৃষ্টি হয়। সেই বিস্ময়কর ঘটনা চাক্ষুষ করতে এখনো কৌতূহলী চোখে ঘুরে বেড়ান ভ্রমণপিপাসুরা। নদীপথে কিছুক্ষণ ভ্রমণ করেই চলে যেতে পারেন মায়াবী ঝর্ণা। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসে শীতল পানির ঝর্না। মায়াবী ঝর্ণা পাদদেশে পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকার পরে আমার মনে হয়েছে আমার এই দেশ আসলেই সকল দেশের রাণী।
এছাড়াও পিয়াইনের শাখা ডাউকি নদীর অববাহিকাও প্রবল আকর্ষণ করে পর্যটকদের ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ দুই পাহাড়কে জুড়ে দিয়েছে। প্রকৃতি ও কাঠামোর অদ্ভুত মিলন এই সেতু। ঐতিহ্যবাহী এই ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ হয়েছে বিট্রিশ আমলে যা ১৮৯৭ সালে ভুমিকম্পে সৃষ্ট হওয়ার ডাউকি ফল্টের স্বাক্ষী। স্বচ্ছ কাঁচের মতো ডাউকির জল..! এই অপার মুগ্ধতা ছেড়ে আমার ফিরে আসতেই ইচ্ছে হচ্ছিল না। এই ঝর্নার শীতল জলে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেই যেন একটা জীবন পার করে দেয়া যাবে! উদাস কবিমন আনমনে গেয়ে উঠে, “এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে নাকো তুমি সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি”।
প্রকৃতিকন্যা জাফলং এর সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। তাই এবার বলব যাতায়াত, থাকার ব্যবস্থা, খরচ, নিরাপত্তা, সতর্কতা নিয়ে।
জাফলং যেতে হলে আপনি বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে করে সোজা চলে যাবেন চায়ের দেশ সিলেটে। আমি খুব সহজেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কেটে ট্রেনে সিলেটে চলে গেছি। সিলেটের কদমতলী এবং সোবহানীঘাট থেকে জাফলংয়ের বাসগুলো ছাড়ে। এগুলোতে ভাড়া নেয় জনপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বাস বাদে জাফলং যাওয়ার সিএনজি ও লেগুনা সার্ভিস রয়েছে। এছাড়াও সিলেটের প্রায় সব জায়গাতেই রিজার্ভ করার জন্য গাড়ি পাওয়া যায়। তবে যে যানবাহনেই যাওয়া হোক না কেন, সরাসরি জাফলং পৌঁছতে প্রায় দেড় থেকে ২ ঘণ্টা সময় লেগে যাবে। এখন জাফলং যাওয়ার রাস্তাগুলো আগের থেকে বেশ উন্নত হয়েছে।
জাফলং এ বিজিবি ক্যাম্প, মামার বাজারের কাছে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫-১০ মিনিট এর দুরত্বে মোটামুটি ভালো মানের বেশ কিছু হোটেল পাওয়া যাবে যাতে খরচ পড়বে ১৫০০-৩০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া জাফলং এর খুব কাছে ‘জৈয়িন্তা হিল রিসোর্ট’ খুব সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ ভিউ দিবে। জিরো পয়েন্ট থেকে খুব কাছে হওয়ায় আমি ‘জাফলং গ্রিন রিসোর্ট’ নামে একটি রিসোর্টে উঠেছিলাম যাদের এক রাত থাকার খরচ রুম অনুযায়ী ১৫০০-৩০০০ টাকার মধ্যেই। আশেপাশে খাবারের ছোট ছোট অনেক রেস্টুরেন্ট আছে। প্রতি বেলা খাবার খরচ পড়বে ১৫০/২০০ টাকা। জাফলং ভিউ, সীমান্ত ভিউ, সাম্পান এই রেস্টুরেন্ট গুলোতে তুলনামূলক খাবার মান ভালো এবং দামে সাশ্রয়।
জাফলং টুরিস্ট পুলিশ বর্তমান খুব শৃঙ্খল ও তৎপর। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেক বক্স রয়েছে। এছাড়া যাতে পর্যটকরা লোকাল যানবাহন, নৌকা, ক্যামেরা এসব নিয়ে দামাদামির মধ্যে না পড়ে তাই তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে লকার, ওয়াসরুম, চেঞ্জ রুম ইত্যাদি স্থাপনা রয়েছে। বর্তমানে জাফলং টুরিস্ট পুলিশ প্রশংসনীয় কাজ করছে। অপরাধ কমিয়ে এনে পর্যটক বান্ধব জাফলং গড়ে তুলতে তাদের ভুমিকা অপরিসীম।
যেকোনো ট্যুরেই বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আপনার ব্যাগ , মোবাইল, টাকা পয়সা এগুলো আপনাকে হেফাজত করতে হবে। লোকাল বাজারে কেনাকাটা করলে অবশ্যই দাম ও কোয়ালিটি সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। রোদ থেকে বাঁচতে পানি, ছাতা, সানগ্লাস, ক্যাপ রাখবেন। সাথে ছোট বাচ্চা থাকলে অবশ্যই তার পকেটে/ব্যাগে নিজের মোবাইল লিখে একটা ছোট্ট চিরকুট দিয়ে রাখবেন। বাচ্চার প্রতি বিশেষ নজর রাখবেন।
ভ্রমণ মানুষকে আনন্দ দেয়। মনকে প্রফুল্ল করে। তরুণ সমাজের মধ্যে অবসন্ন, অলসতার যে প্রবণতা বেড়েছে তার একমাত্র মোক্ষম ওষুধ হলো ভ্রমণ।
লেখক : জ্যাকলিন কাব্য
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ