নিজস্ব প্রতিবেদক
তারেক রহমানকে ঘিরে ভিড়, নিরাপত্তা শঙ্কা: মোস্তফা ফিরোজ
মোস্তফা ফিরোজ। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই সৃষ্টি হচ্ছে উপচে পড়া ভিড়। এই বিপুল জনসমাগমের ভেতরে কারা লুকিয়ে আছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর পর্যাপ্ত আস্থা রাখার মতো কারণও নেই। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি এখনো থেকেই যাচ্ছে। এমন মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোস্তফা ফিরোজ।
শুক্রবার ‘ভয়েস বাংলা’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিও বিশ্লেষণে তিনি এসব কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, দর্শক একটা শিরোনাম দেখে একটি খবর বিশ্লেষণ করতে চাই। তিনি বলেন, যেমন তারেক রহমানের বাসার সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়। গণসংবর্ধনায় সরাসরি নেতাকে ভালোভাবে দেখতে না পেয়ে নেতাকর্মীরা গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসা, যেখানে তারেক রহমান অবস্থান করছেন, সেই বাসার সামনেই সকাল থেকে ভিড় জমাচ্ছেন। এই ভিড় ধারণা করা হচ্ছে নিয়মিতই চলবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর নেতাকে দেখার সুযোগ পাওয়ায় নেতাকর্মীদের আবেগ-উচ্ছ্বাস স্বাভাবিক। তবে এই আবেগ-উচ্ছ্বাসের ভিড়ে নিরাপত্তার বিষয়টি কি আড়ালে পড়ে যাচ্ছে না, এ প্রশ্ন তোলা জরুরি। এই উচ্ছ্বাসের ফলে বড় কোনো বিপদের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে কি না, সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
বিশ্লেষণে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও তারেক রহমান দেশে ফেরেননি, এমনকি মায়ের মৃত্যুর সময়ও নয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও তারেক রহমান বারবার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত শুধু ব্যক্তিগত নয়, দল, সরকার ও সর্বোপরি নিরাপত্তার ওপর নির্ভরশীল।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, তারেক রহমানের নিরাপত্তা ঝুঁকি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দুই দিক থেকেই রয়েছে। অতীতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি প্রায় পঙ্গু অবস্থায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। সেই গোষ্ঠীগুলো এখনো সক্রিয়, বরং তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চরমপন্থী ও উগ্রপন্থীরা। তারা মনে করে, তারেক রহমান দেশে ফিরলে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
এছাড়াও বিদেশি কিছু শক্তি রয়েছে, যারা ‘দশ ট্রাক অস্ত্র’ মামলাকে সামনে এনে তারেক রহমান ও বিএনপিকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা চালাতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সব মিলিয়ে একাধিক শক্তি এই প্রেক্ষাপটে সক্রিয় রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এমন যে সাধারণ মানুষ নিজেকেও নিরাপদ মনে করছে না। এই অবস্থায় তারেক রহমান কেন অযথা ঝুঁকি নেবেন? তার লক্ষ্য হয়তো ছিল নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর দেশে ফেরা।
ঘটনাক্রমে ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণা আসে। তিনি দেশে ফিরে ব্যাপক জনসমর্থন ও আবেগ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে এক অর্থে ‘বাংলাদেশ জয়’ করেছেন। এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এই উচ্ছ্বাসের ভিড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বারবার ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মোস্তফা ফিরোজ।
তিনি বলেন, বিমানবন্দর থেকে শুরু করে মঞ্চ পর্যন্ত সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের নিরাপত্তা বলয় থাকলেও নেতাকর্মীদের আবেগে তা বারবার চাপে পড়েছে। স্টেজের সামনের নিরাপত্তা বেষ্টনীও উচ্ছ্বাসের কারণে ভেঙে পড়ে। এটি পরিকল্পিত নয়, আবেগপ্রবণ আচরণ কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের ওপরই বর্তায়।
তারেক রহমানকে মঞ্চে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। মায়ের চিকিৎসাধীন এভারকেয়ার হাসপাতালে যেতে, যা খুব কাছেই, সেখানেও পৌনে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জিয়ার রহমানের কবর জিয়ারতের সময়ও দেখা গেছে বিপুল জনসমাগম।
এই প্রতিটি স্থানে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে কারা রয়েছে, তা কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না। বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন মোস্তফা ফিরোজ। ফলে সার্বিকভাবে একটি শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হলো এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কীভাবে আরও কার্যকর ও নিশ্চিন্ত করা যায়। এটি এখন শুধু সরকারের নয়, রাষ্ট্র ও দলেরও যৌথ দায়িত্ব। আবেগ ও উচ্ছ্বাসের ভিড়ে যেন নিরাপত্তা হারিয়ে না যায়। সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। নইলে সামনে বড় ধরনের বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে।
ইএন/এসএ
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ

























