Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫,   পৌষ ১২ ১৪৩২

কাজল হাজরা

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

চা-বাগানের কুয়াশায় হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন

নিম্ন মজুরিতে থমকে থাকা চা শ্রমিক সন্তানদের ভবিষ্যৎ

চা বাগানে রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে এক স্কুল পড়ুয়া শিশু। ছবি: কাজল হাজরা

চা বাগানে রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে এক স্কুল পড়ুয়া শিশু। ছবি: কাজল হাজরা

চা-বাগানের ভোর মানেই কুয়াশায় ঢাকা এক নিঃশব্দ দৃশ্য। সূর্য ওঠার অনেক আগেই কাঁধে ঝুড়ি তুলে কাজে নামেন চা শ্রমিকরা। এখানে স্বপ্নের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার দায়। এই বাগানেই জন্ম নেয় হাজারো শিশুর আশা, আবার এখানেই ধীরে ধীরে ঝরে পড়ে তাদের স্বপ্ন।

চা শ্রমিকদের নিম্ন মজুরি শুধু দৈনন্দিন ক্ষুধাই বাড়ায় না, কেড়ে নেয় তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎও। পারিবারিক আর্থিক সংকট সামাল দিতে না পেরে স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ কন্যাশিশু। বই-খাতা আর স্কুলব্যাগের জায়গায় তাদের হাতে উঠে আসে চা-পাতার ঝুড়ি। স্কুলের ঘণ্টার বদলে কানে বাজে বাগানের সাইরেন।

বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের চাপ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, এইচএসসি, অনার্স, ডিগ্রি এমনকি মাস্টার্স পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরাও শেষ পর্যন্ত মাথা নত করে দৈনিক মাত্র ১৮৭ টাকার মজুরিতে চা-বাগানে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। শিক্ষার আলো থাকলেও ঘরে খাবারের অভাব তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প পথ খোলা রাখে না।

সরকার নির্ধারিত মাসিক ন্যূনতম মজুরি যেখানে ১২ হাজার টাকা, সেখানে চা শ্রমিকদের জীবনে সেই ঘোষণা যেন কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে এই অমানবিক নিম্ন মজুরিতে সন্তানের পড়াশোনার খরচ বহন করা তো দূরের কথা, অনেক পরিবারকেই প্রতিদিন একবেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমসিম খেতে হয়।

তবুও প্রতিদিন ভোরে কুয়াশা ভেদ করে বাগানের পথে হাঁটেন তারা—এই আশায় যে, কোনো একদিন সময় বদলাবে, ফিরবে হারানো স্বপ্ন। কিন্তু ততদিনে চা-পাতার মতো ঝরে পড়ে কত যে স্বপ্ন, তার হিসাব রাখার কেউ কি আছে?

ইএন/এসএ

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়