Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ০১ অক্টোবর ২০২৫,   আশ্বিন ১৬ ১৪৩২

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০
আপডেট: ২০:০৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

ভাসানচর নিয়ে রোহিঙ্গারা- ‘ছোট ঘরে থাকবো কিভাবে?’

গত শনিবার নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ছোট্ট দ্বীপ ভাসানচর পরিদর্শন করেছে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল। পরিদর্শন শেষে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে আসেন।

ফিরে এসে সেখানকার সার্বিক অবকাঠামোকে ভালো বললেও থাকার ঘরের আকার নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন৷ তাদের মতে, ওই ঘরে দুই-তিন জনের বেশি থাকা সম্ভব নয়।

রোহিঙ্গা শরণার্থী দলের সদস্যরা বলছেন, ‘‘আমরা সাত-আট জনের একটি পরিবার সেখানে গিয়ে কিভাবে থাকবো? আর সেখানে গিয়ে থাকলেই বোঝা যাবে বাস্তব পরিস্থিতি কী৷’’

তাদের কেউই এখনো ভাসানচরে গিয়ে থাকার পক্ষে মত দেননি। তারা বলছেন, ‘‘পরিবারসহ সবার সঙ্গে কথা বলে তারপর দেখা যাবে। এই নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে নানা মত আছে৷ নানামুখী চাপও আছে।''

এ ব্যাপারে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেছেন, ‘‘যারা ভাসানচর দেখে এসেছেন, তাদের কেউ কেউ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ তবে তাদের মধ্যে ভিন্নমতও আছে৷’’

সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় গত শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) টেকনাফ থেকে ভাসানচরে যান ৪০ রোহিঙ্গা প্রতিনিধি। তাদের মধ্যে দুজন মোহাম্মদ নূর ও মোহাম্মদ মোস্তফা। বৃহস্পতিবার ওই দুইজনসহ মোট তিনজন জানালেন ভাসানচর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা।

মোহাম্মদ নূর বলেন, ‘‘সেখানে অনেক কিছুই আছে৷ স্কুল, সাইক্লোন সেন্টার, অফিস৷ কিন্তু আটটি পরিবারের জন্য একসাথে যে থাকার ঘর করা হয়েছে তা অনেক ছোট৷ প্রত্যেক পরিবারের জন্য একটি রুম৷ আট ফুট বাই নয় ফুট৷ তাতে দুই-তিন জনের বেশি থাকা সম্ভব নয়৷ আমরা কী করে ছয়-সাত সদস্যের একটি পরিবার ওই একটি রুমে থাকবো?’’ তার দাবি, ‘‘ভাসানচরের চেয়ে কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে থাকার ঘর বড়৷ এখানে সুবিধা বেশি৷’’

ভাসানচরে যাবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত এখনো নেননি তিনি৷ সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জনাবেন৷ কবে আলাপ-আলোচনা করবেন তারও ঠিক নেই৷ আরো দু-একটি ক্যাম্পের যারা ভাসানচরে গিয়েছেন, তাদের ফোন করে হুমকি দেয়ারও অভিযোগ করেন তিনি৷ তাদের কথা বলতে নিষেধ করা হচ্ছে৷ তবে নিজে কোনো হুমকি পাননি বলে জানান মোহাম্মদ নূর৷

মোহাম্মদ মোস্তফাও একই কথা বলেন, ‘‘থাকার ঘর ছোট। তবে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভালোই আছে৷’’ কিন্তু ভাসানচরে যাওয়ার ব্যাপারে তিনিও কোনো মতামত জানাননি৷ তারও একই কথা, ‘‘সবার সঙ্গে কথা বলি৷ দেখি তারা কী বলেন৷’’

হাফিজুর রহমানের সঙ্গেও কথা হয় বৃহস্পতিবার৷ তিনি সেখানকার রাস্তাঘাট, স্থাপনা, পুকুর এগুলোর বর্ণনা দেন৷ কিন্তু সেখানে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তিনি বলেন, ‘‘যা দেখেছি তাতে ভালোই মনে হয়ছে৷ কিন্তু সবাই সেটা বুঝতে চায় না৷ তাই এখন সবার সাথে বসে যে সিদ্ধান্ত হয় তা-ই হবে৷’’

শরণার্থী কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘‘আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের সেখানে নিয়ে গিয়েছিলাম৷ তারা নিজ চোখে দেখে আসুক সরকার তাদের যেখানে থাকতে দিতে চায় সেই জায়গাটি কেমন৷ তারাই নিজ চোখে দেখে সিদ্ধান্ত নিক৷ আমাদের কাছে ভাসানচর দেখে তাদের কেউ কেউ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ কেউ কেউ নেগেটিভও আছেন৷ এখন তারা তাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলুক৷ তারপর সিদ্ধান্ত নিক৷ আমরা তো কাউকে জোর করে পাঠাবো না৷’’

‘‘তবে তাদের কেউ কেউ হুমকি দিচ্ছে বলে শুনেছি৷ এটা হতে পারে৷ কারণ, তাদের মধ্যে নানা মত ও নানা গ্রুপ আছে,’’ বলেন শরণার্থী কমিশনার৷

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো, রোহিঙ্গাদের যত জন ভাসানচরে যেতে চায়, তাদের সেখানে বসবাসের ব্যবস্থা করা৷ যে দলটি ভাসানচরে গিয়েছিল, তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷ এখন তাদের সঙ্গে বসা হবে৷ বিস্তারিত কথা হবে৷ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (ট্রিপল আরসি), পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন৷’’

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ভাসানচরের অবস্থান৷ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ৷ জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে৷ এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের জন্য ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে সেখানে৷

সূত্র: ডয়েচ ভেলে

আইনিউজ/এসডিপি

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়