Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ০১ অক্টোবর ২০২৫,   আশ্বিন ১৫ ১৪৩২

জিএম ইমরান

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
আপডেট: ১৫:০৫, ১ অক্টোবর ২০২০

১৩ গণধর্ষণসহ ৪০ ধর্ষণে শেষ হলো সেপ্টেম্বরের ৩০ দিন

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

চলতি বছরের জানুয়ারীর ১ তারিখের ভোর ৪টার দিকে নাশতার ‍জন্য স্বামীর হাত ধরে রেস্তেরার উদ্দেশ্য রাজধানীর কাফরুলের এক গলি দিয়ে হাঁটছিলেন এক গৃহবধূ। এ সময়  মুরগি জনি ও আতিক দেওয়ান তাদেরকে পথ আটকে নিয়ে যান পার্শ্ববর্তী দলীয় কার্যালয়ে।

সেখানে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে তার বাসায় নিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ করেন মুরগি জনি, আতিক দেওয়ান ও নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম। এ ঘটনার মাধ্যমে শুরু হওয়া ২০২০ সালের ধর্ষণ ঘটনা যেন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত আট মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৮৯ জন নারী । তারমধ্যে ধর্ষণের পর মারা যান ৪১ জন নারী । এবং ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করেন ৯ জন নারী । এছাড়া, ১৯২ জন নারীকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়।

ধর্ষণ ঘটনার এ ধারাবাহিকতা সেপ্টেম্বরেও চলেছে লাগামহীনভাবে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আইনিউজের এক হিসেব অনুযায়ী শুধুমাত্র সেপ্টেম্বরই ৪০ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৩ টি। এবং এককভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৭টি।

এরমধ্যে আলোচিত কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা হল- ২৫ সেপ্টেম্বরে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে খাগড়াছড়িতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণ, ২৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে গৃহবধূকে গণধর্ষণ,বান্দরবানে বিয়ের জন্য ডেকে ৬ জন মিলে ধর্ষণ।

আর এককভাবে ঘটিত কয়েকটি আলোচিত ধর্ষণ ঘটনা হল- ০৭ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জে ঘরের সিঁদ কেটে ঘুমন্ত শিশুকে ধর্ষণ, ১০ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে ধর্ষণের পর শিশুকে হত্যার অভিযোগ, ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে হাতেনাতে ধরা ধর্ষককে কাউন্সিলর ছেড়ে দিলে গৃহবধূর আত্মহত্যা,১৪ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, রাজশাহীর তানোরে গির্জায় কিশোরীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করেন গীর্জার ফাদার।

তবে ক্রমাগতভাবে ধর্ষণের হার বেড়ে যাওয়ার পিছনে সমাজের রাজনৈতিক অবক্ষয়কে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করেন ‘সচেতন নাগরিক কমিটি’ (সনাক) এর সিলেট জেলার সভাপতি আজিজ আহমেদ সেলিম। আইনিউজকে তিনি বলেন, প্রায় প্রতিটা ধর্ষনের ঘটনায় ধর্ষকেরা রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয় পেয়ে তাকে। ফলে বিচার প্রক্রিয়া কলুষিত হওয়ায় এ ধরণের ঘটনা বেড়েই চলছে। এজন্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতাদের উচিত হবে, যার যার দলে ধর্ষকদের প্রশ্রয়দাতাকে চিহ্নিত করে আইনের আওয়তায় আনা।

অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে শাজজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানী ও নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী আইনিউজকে বলেন, আমারা যে শিক্ষাটা দিচ্ছি, তারমধ্যে নৈতিক শিক্ষা কতটুকু দিচ্ছি সেটা ভাবার সময় এসে গেছে। তাছাড়া, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানী বন্ধে বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে। সেগুলো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আছে কিনা দেখতে হবে। আর যেসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো যৌন হয়রানী বন্ধে কতটুকু কার্যক ভূমিকা রাখছে সেটি মনিটরিং করতে হবে।পাশাপাশি ধর্ষকদের ও ধর্ষকদের প্রশ্রয়দাতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, প্রশ্রয়দাতাদের উৎসাহে ধর্ষকরা এ ধরণের কাজ করার সাহস পায়। 

জিএম ইমরান/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ সিলেট/ আইনিউজ

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়