Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ০৬ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২১ ১৪৩২

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ২৪ মার্চ ২০২২
আপডেট: ১৩:৩০, ২৪ মার্চ ২০২২

আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস

‘যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসের রোগ নয়’

১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কচ যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ‘মাইকোব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস’ আবিষ্কার করেন। এই জীবাণু আবিষ্কারের ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জীবাণু আবিষ্কারের দিনটিকে স্মরণীয় করতে এবং যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর এই দিনে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়ে আসছে। 

এ বছর বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিনিয়োগ করি যক্ষা নির্মূলে,জীবন বাচাই সবাই মিলে’। সারা পৃথিবীতে যত যক্ষা রোগী আছে তার প্রায়  অর্ধেক আছে এই ভারতীয় উপমহাদেশে। এ অবস্থার জন্য দায়ী যক্ষ্মা  সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং সঠিক সময়ে টিকা না দেয়া। তাই অজ্ঞতা দূর করে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে আজকের দিনে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

ফুসফুসে যক্ষ্মা হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি তথা শতকরা ৮৫ ভাগ হওয়ায় জনমনে সবার ধারণা যে যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসের রোগ। কিন্তু আসলে তা না। দুই-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের শরীরে এমন কোনো অঙ্গ নাই, যেখানে টিবি রোগ হয়না। 

গ্লান্ড টিবি কি, কিভাবে বুঝা যাবে? 

নাক-কান-গলার চিকিৎসক হিসেবে প্রায়ই আমাদের কাছে হাসপাতাল  এবং চেম্বারে রোগী  ঘাড়ে বা গলার চারপাশে কয়েকদিন ধরে ফুলে গেছে এমন গুটা নিয়ে আসেন । ইতিহাস নিলে দেখা যায় গুটি আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে,সাথে সন্ধ্যার পর জ্বর ঊঠে এবং ওজন কমছে।

আমাদের শরীরে বিভিন্ন স্থানে এই গুঁটি বা লসিকা গ্রন্থি (লিম্ফ নোড) থাকে। যার মধ্যে ঘাড়ের দুইপাশে তিনশো'র মতো লিম্ফ নোড রয়েছে।  সাধারণ ভাষায় এগুলোর মূল কাজ রক্ত পরিষ্কার রাখা। যক্ষ্মার কারণে যাদের ঘাড়ের লসিকা গ্রন্থি ফুলে তাদের গুটিগুলোতে ব্যথা থাকে না। বরং একটার সাথে আরেকটা দলা পাকিয়ে থাকে। কারো কারো গুঁটি ফেটে রস (ডিসচার্জিং সাইনাস) বের হয়।

লসিকা গ্রন্থি ফোলা নিয়ে আসা রোগীদের ক্ষেত্রে রোগ নিরূপণের জন্য সাধারণ রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি আক্রান্ত গ্রন্থি থেকে সূচের মাধ্যমে কোষকলা নিয়ে 
আমরা এফ.এন.এ.সি নামক সাইটোপ্যাথলজিক্যাল  পরীক্ষা করে থাকি, যার মাধ্যমে সহজে গ্লান্ড টিবি নির্ণয় করা সম্ভব। অনেক সময় ক্ষেত্র বিশেষে বায়োপসি লাগতে পারে।

গ্লান্ড টিবির চিকিৎসা 

রোগ নির্ণয় সম্পন্ন হলে গ্লান্ড টিবির ক্ষেত্রে ওষুধ ওজন অনুযায়ী ছয়মাস থেকে নয়  মাস, এমনকি এক বছর পর্যন্ত খেতে হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে গ্লান্ড টিবি হতে ফোড়া (Abscess) হলে অবশ্যই সার্জারি করে ফোড়া (abscess) কেটে ফেলতে হবে । কারণ পূজ থাকলে টিবির ওষধ কাজ করবে না। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলে রাখা দরকার, চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর প্রথমদিকে আক্রান্ত গ্রন্থি হঠাৎ আরেকটু বড় হয়ে যেতে পারে বা নতুন করে কোনো গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে—এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। টিবির ওষুধ চলাকালে পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া প্রয়োজন। ওষুধের কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে যেমন জন্ডিসের ভাব দেখা দিলে / চোখে ঝাপসা দেখলে  তা অবিলম্বে ডাক্তারকে জানানো দরকার। রোগী যেন কখনওই নিজে থেকে ওষুধ বন্ধ না করেন। দারিদ্র্যের কারণে অনেকেই রোগের লক্ষণ গোপন করে যায়। মানুষকে ব্যাপকভাবে জানানো দরকার যে যক্ষার চিকিৎসার সুযোগ আছে বিনামূল্যে।

একসময় বলা হত - ‘যার হয় যক্ষ্মা, তার নাই রক্ষা’। এরপর চিকিৎসাবিজ্ঞানের উত্তরোত্তর উন্নতির ফলে এই ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। এখন বলা হয় ‘যক্ষা হলে রক্ষা নাই, এই কথার ভিত্তি নাই’। তবে অবহেলা করা যাবে না। আসুন ভালো থাকি,ভালো রাখি।

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী) ; এফসিপিএস (ইএনটি), নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল  হাসপাতাল।

 

ডা. মো. আব্দুল হাফিজের আরো লেখা-

থাইরয়েড গ্লান্ডের ক্যান্সার 

ব্রেইন স্ট্রোক: আদ্যোপান্ত জানুন এবং প্রতিরোধ করুন

করোনার নতুন ঢেউয়ের আশংকা : মাস্ক আমার, সুরক্ষা সবার

শিশুর নাকের পিছনে মাংস বাড়া এবং শ্বাসকষ্টে করণীয়

মাথা ঘোরার সমস্যা সমাধানে ১০ ঘরোয়া টিপস

 

আইনিউজ ভিডিও 

মানসিক চাপ কমাবেন যেভাবে

বয়স পঞ্চাশের আগেই বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা

খালি পেটে ঘুমালে যেসব ক্ষতি হয়

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়