হাসানাত কামাল
আপডেট: ২৩:৪৫, ১১ অক্টোবর ২০২৫
বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় মাছ ও জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার হাকালুকি

একসময় জল ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর হাকালুকি হাওর— ভরাট হয়ে হারাচ্ছে তার প্রকৃত রূপ। ছবি- হাসানাত কামাল
দেশের সর্ববৃহৎ এবং এশিয়ার অন্যতম মিঠাপানির জলাভূমি হাকালুকি হাওর। যেটি মাছ, পাখি, জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার এবং পরিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে স্বীকৃত। পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড় ও পূর্বে পাথারিয়া পাহাড় বেষ্টিত হাকালুকি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বৃহদাংশ মৌলভীবাজারে অর্থাৎ ৮০ শতাংশ এবং সিলেট জেলায় ২০ শতাংশ অবস্থান। সরকারি তথ্যমতে হাওরটির আয়তন প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর, বর্ষাকালে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর এলাকায় পরিণত হয়। এই সময় পানির গভীরতা হয় ২-৬ মিটার।
- জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওর মাছ ও পাখির আবাসস্থল
- ভরাটে অস্তিত্ব সংকটে হাকালুকি
- হাওরের ২৭৬টি বিল কমে এখন ২৩৮টি
- আগামী ৫০ বছর পর হাকালুকি বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা
- হাওর সংস্কার-খনন ও জলাবন স্থাপনে গুরত্বারোপ
হাকালুকি হাওরকে এখন রামসার সাইট ঘোষণা করে সংস্কার ও সংরক্ষণ করতে হবে। নতুবা আগামী ৫০ বছর পর দেখা যাবে হাওর আর হাওর নেই। আবাসিক ও শিল্পাঞ্চল হয়ে গেছে।
স্থানীয় অধিবাসীদের মতে হাওরটিতে ছোট বড় মিলিয়ে ২৭৬টি বিল রয়েছে। তবে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে ২৩৮টি বিল সরকারি নথিভুক্ত। তাছাড়া হাওরের ছোটো-বড় প্রায় ৮০টি বিলে আন্তসংযোগ রয়েছে। স্থানীয় জেলেরা বলেন, বর্ষাকালে হাওরের সবক’টি বিল ও নদী একীভূত হয়ে সাগরের ন্যায় এক বিশাল জলাশয়ের রুপ ধারণ করে। পরিবেশকর্মীরা জানান, এই হাওরে বাংলাদেশের মোট জলজ উদ্ভিদের অর্ধেকেরও বেশী এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটাপন্ন উদ্ভিদ পাওয়া যায়। মাছ ও ধানের ভাণ্ডার হিসেবেও পরিচিত হাকালুকি।
জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হাকালুকি হাওর
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মীরা জানান, এই হাওরে বছর জুড়ে চারশতাধিক প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। হাকালুকিতে বিলুপ্ত প্রায় ও বিপন্ন পাখিদের দেখা মেলে বলে জানিয়েছেন- দেশের খ্যাতিমান পাখি বিশেষজ্ঞ ড. ইনাম আল হক। শীত মৌসুমে স্থানীয় আবাসিক পাখিদের সাথে লক্ষাধিক পরিযায়ী পাখি এসে যোগ দেয়। এতে একদিকে স্বর্গীয় আবহ তৈরি করে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্থানীয় জেলে ও মৎস্য কর্মকর্তারা জানান- এই হাওর যেসব মাছের জন্য বিখ্যাত এর মধ্যে অন্যতম পুটা (দেশীয় স্বরপুটি), গুতুম, আইড়, বোয়াল, মধু পাবদা, রাণী মাছ, চিতল, কৈ, মাগুর, শিং ইত্যাদি। হাওরে ১০৭ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান- মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, বেজি, সাপ, বনরুই, কচ্ছপসহ ১৪১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী নিজেদের আপন ভূবন তৈরি করে নিয়েছে হাকালুকিতে। দেখা মেলে ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ।
বর্ষা মৌসুমের শেষ সময়ে টইটম্বুর হাকালুকি হাওর, কিন্তু বর্ষা শেষে এই জলাভূমি হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক রূপ—ভরাট আর দখলে বিপন্ন মাছ ও জীববৈচিত্র্য। ছবি- মো, মোস্তফা
ভরাট হয়ে যাচ্ছে হাকালুকি
মৎস্য বিভাগ, স্থানীয় জেলে ও কৃষকেরা জানান, পলি জমে হাওরটি ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পানি ধারণ করতে পারছে না দেশের বৃহৎ এই জলাভূমি। শুকনো মৌসুমে হাওরের অধিকাংশ জায়গা মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষায় পানি উপচে আশপাশ এলাকায় গিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে, দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা তৈরি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এই অঞ্চলে। কোনো মৌসুমে বর্ষায় হাওর-নদীর দুইকূল ভাসিয়ে নিয়ে যায়, আবার কোনো মৌসুমে ধূ-ধূ বালুচর।
সম্প্রতি হাকালুকি হাওর পরিদর্শনকালে চোখে পড়ে বর্ষা মৌসুমে পানি সংকটের চিত্র। সাধারণত জুন-জুলাই মৌসুমে যেসব জায়গায় পানি থাকার কথা সেখানে পানি নেই। কুলাউড়া উপজেলার গৌরকরণ গ্রাম অতিক্রম করলেই চোখে পড়ে বিস্তীর্ণ হাওর। তবে, হাওরের ভাসান পানি চোখে পড়ে না। কাঁচা সড়ক দিয়ে এগোতেই ফেলুন জাল (ত্রিভূজ আকৃতির মাছ ধরার ছোট জাল) কাঁধে করে হেঁটে আসছিলেন ষাটোর্ধ্ব কটু মিয়া। সময়টা জুন মাস। বর্ষা মৌসুমের এই সময়ে হাওরে পানি নেই কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে সড়কে দাঁড়িয়ে আছি, এই সময়ে গলা পর্যন্ত পানি থাকার কথা। হাওরে অনেক মাছ থাকার কথা। রুই, মৃগেল, কাতল, শোল-গজার, টেংরা, পুটি সব ধরনের মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু মাছ নেই, মাছের পোনাও নেই। যেখানে পানি থাকার কথা সেখানে গরু-মহিষ চড়াচ্ছে। গৌরকরণ থেকে এক মাইল দূরে হাওরপারে ইসলামপুর মোহনা। সেখানে বসে আছেন অনেক মাছ ব্যবসায়ী। অপেক্ষা করছেন হাওর থেকে জেলেরা মাছ নিয়ে আসে কি-না। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে কোনো মাছ পেলেন না। নৌকা নিয়ে প্রায় সবাই খালি হাতে পারে উঠলেন। কারো কারো নৌকায় অল্প কিছু ছোট চিংড়ি, পুটি আর বড় মাছের পোনা। এ সময় কথা হয় ৬৫ বছর বয়সী করিম মিয়ার সাথে। তিনি বলেন- ‘হাওরে পানি নেই, তাই মাছও নেই।’ পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিলম্বে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টে পানির দেখা মিলেছে, শেষ সময়ে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে হাওর। এটা ২০২৫ সালের চিত্র।
ভরাট হয়ে হাকালুকি হাওরের অভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলো ছোট হয়ে আসছে। ছবি- হাসানাত কামাল
করিম মিয়া বলেন, এক বছর খরা, তো আরেক বছর বন্যা। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে তো বন্যায় সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ২০১৮ সালেও দীর্ঘমেয়াদি বন্যা দেখা দেয়। তখনও কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। কিন্তু ২০২১ সালে হাওরে পানিই আসেনি। এগুলো মূলত বাংলাদেশে বন্যা ও খরার চিত্র।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের সাবেক জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, জলবাযু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া হাওর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এটা তারই প্রতিফলন।
হাকালুকি হাওরের জলাবন
হাওর-বিল-জলাভূমির নানা সংকট ও নেতিবাচক বিষয়ের মধ্যে কিছু চিত্র আশার সঞ্চার করে। মরুভূমিতে একগুচ্ছ সবুজ প্রাণের মতো হাকালুকি হাওরে দেখা মেলে জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট।
সরেজমিনে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মৌসুমে হাকালুকি হাওর ঘুরে দেখা যায়, উচ্চতায় মাথার ওপর ছাড়িয়ে গেছে দীর্ঘ সবুজ জলাবনের বৃক্ষ। সেখানে গরু রাখছিলেন আশরাফ মিয়া নামে এক তরুণ। তিনি বলেন, ‘এই জঙ্গলে এসে কত মানুষ হারিয়ে যায়। মোবাইলের নেটওয়ার্কও থাকে না। একবার দুই সাংবাদিক বড়লেখার তালিমপুর হয়ে এদিকে আসেন। পথ হারিয়ে কয়েকঘন্টা পর ফেঞ্চগঞ্জ দিয়ে বের হন।’ হাকালুকি ভ্রমণকালে এরকম অনেক সোয়াম্প ফরেস্টই চোখে পড়ে।
পরিবেশ কর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, হাকালুকি প্রতিবেশগত বিপন্ন এলাকা বা ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ)। পরিবেশ অধিদফতরের সহযোগিতায় হাওরের আশপাশ গ্রামের মানুষ ২০০৩ সালে চাতলা ও দহবিলে হিজল, করচ, শ্যাওড়া, বরুন, মাটনা, আড়াং, মুর্তাসহ জলাভূমির উপযোগী বিভিন্ন উদ্ভিদের ডাল রোপণ করে ও বীজ ছিটিয়ে দেয়। সেই বৃক্ষগুলো এখন ১৫-২০ফিট উচ্চতা ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে আশ্রয় নেয় মেছো বিড়ালসহ বন্যপ্রাণী। বাসা বাঁধে পাখি। এছাড়া তিনটি বিলে পাকা খুঁটি বসিয়ে তার ওপর জারুল কাঠের তৈরি পাখির কৃত্রিম বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ বেড়ে ওঠেছে। যা হাকালুকি হাওরের ইসিএ এলাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবরোধে বিশেষ অবদান রাখছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলার হাল্লা এলাকায় ১৫০ হেক্টর এবং কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা এলাকায় ১৫০ হেক্টর জমিতে হিজল ও করচের চারা লাগানো হয়েছে। প্রতি হেক্টরে রোপণ করা হয় আড়াই হাজার চারা। সেই হিসাবে লাগানো হয়েছে সাড়ে সাত লাখ চারা।
স্থানীয়রা জানান, সেই জলাবনের বৃক্ষগুলোও কেটে চুরি করে নিয়ে যায় কেউ কেউ। আবার কিছু লোক সেটা আবার পাহাড়া দেন।
হাকালুকি হাওরের উল্লেখযোগ্য বিলসমূহ
স্থানীয় অধিবাসি ও মৎস্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হাকালুকি হাওরে উল্লেখযোগ্য বিলসমূহ হলো- দহবিল, হাল্লাজিল্লা, হারামডিঙ্গা, নাগোয়া, লবিরই, চাতলা, চকিয়া, ডুলা, পিংলারকোণা, ফুটি, তুর, তেকুনি, পাওল, জুয়ালা, কইয়ারকোণা, বালিজুড়ি, কুকুরডুবি, কাটুয়া, রঞ্চি, বিরাই, রাহিয়া, চিনাউরা, দুধাল, মায়াাজুরি, পলোভাঙা, জুড়ী, মালাম, বারজালা, পারজালা, মুছনা, লাম্বা, দিয়া, তুরল ও গড়কুড়ি ইত্যাদি।
হাকালুকি হাওরে জাল ফেলে এখন আগের মতো মাছ ধরা পড়ে না। ছবি - মো. আমির
জেলা মৎস্যবিভাগ জানায়, হাকালুকি হাওরের নথিভুক্ত ২৩৮টি বিলের মধ্যে কমপক্ষে ২১টি বিল সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া বাকিগুলোর অধিকাংশ এবং আংশিক ভরাট হয়েছে।
সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে যাওয়া বিলের মধ্যে কুলাউড়া উপজেলার বইশমারা বিল, ধলিয়া হাওর, চিকনমাটি, আদা চাপড়া, বিলাইয়া ও মেদি বিল।
আর কোনোভাবে অস্তিস্ব টিকে আছে- ফুটি বিল, হিংলি, ডুলা, পিংলারকোণা, তেকুনি, পাওল, চিনাউরা, দুধাল, বারজালা, মুছনা, পারজালা ও লাম্বা বিল।
সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে- জুড়ী উপজেলার তুরল, হুগলা, লামা তুরল, উপর তুরল, লাড়ির ডাক ও বালিয়াজুড়ি বিল এবং বড়লেখা উপজেলার- মালাম, ফুয়ালা, জল্লা, হাওর খাল, বালিয়া ও মাইজলা বিল।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় তথ্যমতে হাকালুকির সাথে যুক্ত ছিলো অনেকগুলো ছোট-বড় নদী। এর মধ্যে- কণ্ঠিনালা, জুড়ী, মরা জুড়ী, সুনাই, ফানাই, নিকড়ি, ষাটমা, বড়দল, বিলাম, এবং সুনাই নদী। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে টিকে আছে জুড়ী উপজেলার জুড়ী নদী ও কণ্ঠিনালা, কুলাউড়া উপজেলায় ফানাই নদী আর বড়লেখায় সুনাই নদী। বাকিগুলো পরিণত হয়েছে ছোট খালে। সিলেট বিভাগের প্রধান দুটি নদী কুশিয়ারা ও সুরমা হাকালুকির মূল প্রবেশপথ, যেখান থেকে জলধারা হাওরে এসে মেশে। মৌলভীবাজার জেলার প্রধান দুটি নদী মনু ও ধলাই হাকালুকির সাথে সংযুক্ত এবং হাওরের জলচক্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে হাকালুকি হাওরের বিশাল জলরাশির উৎস ও প্রবাহের জলাধার হলো এই নদীগুলো। এই নদীগুলোর উৎপত্তি পাহাড় থেকে। প্রতিবছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে প্রচুর পলি পরিবহন করে নিয়ে আসে, যা ধীরে ধীরে হাওরকে ভরাট করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সেন্টার ফর ন্যাচারাল স্টাডিজ (সিএনআরএস) ২০০৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত হাকালুকিতে যৌথভাবে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সেই প্রকল্পের তথ্যমতে একসময় এই হাওরকে ঘিরে ছোট-বড় তিনশতাধিক ছড়া ও খাল প্রবাহিত হতো। সেটা কমে বর্তামানে টিকে আছে মাত্র ৮১ টি। বাকিগুলো বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হওয়া ছড়া-খালের মধ্যে সারর খাল, চান্দর খাল, গোগালী ছড়া, কচমার খাল, লামাই লঙ্গির খাল, জামলার খাল, কাটুয়া খাল ও পনার খাল উল্লেখযোগ্য।
হাওর আন্দোলন মৌলভীবাজারের সভাপতি আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, ‘আমরা জানি হাকালুকি হাওর মিঠাপানির অন্যতম জলাভূমি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত জলজ উদ্ভিদ প্রজাতির অর্ধেকেরও বেশি হাকালুকিতে জন্মে। হাওরতীরের প্রায় দুই লাখ মানুষ জীবন ও জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই হাওরের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় আমরা দেখি হাওরে ১৫০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছের মধ্যে বর্তমানে ১১২ প্রজাতি টিকে আছে। ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ১২০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ও সরীসৃপ এখন বিলুপ্তপ্রায়। এখানে প্রতি বছর শীতকালে প্রায় ২০০ বিরল প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসতো। এখন আর আসেনা। বিল, খাল ও নদী ভরাটের ফলে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে।’ এদের রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
হাকালুকি হাওরে সারাদিন জাল টেনে চাপিলাসহ ছোট মাছ ও আর অল্প কয়েকটা বোয়াল মাছ নিয়ে পারে উঠছেন জেলেরা। ছবি- মো. আমির
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘হাকালুকি হাওরকে এখন রামসার সাইট ঘোষণা করে সংস্কার ও সংরক্ষণ করতে হবে। নতুবা আগামী ৫০ বছর পর দেখা যাবে হাওর আর হাওর নেই। আবাসিক ও শিল্পাঞ্চল হয়ে গেছে।’
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, জেলায় মাছের চাহিদা ৪৬,২২০ মেট্রিক টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন হয়েছে ৫৭,৩০৫ মেট্রিকটন। এরমধ্যে প্রতি বছর ১৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয় হাকালুকিতে। বিল ভরাটের কারণে মাছের উৎপাদন কমেছে। তবে, মৎস্য বিভাগ উৎপাদন বাড়াতে বিল নার্সারি স্থাপনসহ নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।
উপসংহার
হাকালুকি হাওরকে বাংলাদেশের মিঠাপানির গুরুত্বপুর্ণ জলাভূমি হিসেবে মনে করেন পরিবেশ কর্মী ও জলাভূমি বিশেষজ্ঞরা। এখনই হাওর খনন ও জলজ-বৃক্ষায়নে উদ্যোগ নেওয়া অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করেন তারা, এ বিষয়টাকে জোর সমর্থন দিচ্ছেন স্থানীয় জেলে ও কৃষকেরা। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে হাওর বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যা হবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। এছাড়া মাছের উৎসও ধ্বংস হয়ে যাবে, যা আমিষ ও খাদ্য সংকট তৈরি করবে।
পড়ুন বিশেষ প্রতিবেদন: হুমকির মুখে জলাভূমি – বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া হাওর ও বিল রক্ষার উদ্যোগ
আরো পড়ুন:
- ‘হাওরকে ঢাকা শহর করতে চাইলে সব ধ্বংস হয়ে যাবে’ - সজল কান্তি সরকারের সাক্ষাৎকার
- জলাভূমি রক্ষায় অভয়াশ্রম স্থাপনই টেকসই সমাধান - অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানের সাক্ষাৎকার
- প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় শ্রীমঙ্গলের তরুণেরা
- বাংলাদেশে মাছ উৎপাদনে নীরব বিপ্লব, জলাভূমি রক্ষায় শঙ্কা
- জমি কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে ধান উৎপাদন
- ফুল | Flower | Eye News
- বিলুপ্ত প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার; লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত
- ফ্রি ডাউনলোড-গোলাপ ফুলের ছবি
- শাপলা ফুলের ছবি বৈশিষ্ট্য উপকারিতা ও বর্ণনা
- সুন্দরবন সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী
- জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ছড়াচ্ছে রোগবালাই
- শুশুক বাঁচলে বেঁচে যায় গোটা জলজ জীবন চক্র
- টর্নেডো: কি, কেন কীভাবে?
- ফুল ছবি | Flower Photo | Download | Eye News