Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ১০ অক্টোবর ২০২৫,   আশ্বিন ২৫ ১৪৩২

হাসানাত কামাল

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ৯ অক্টোবর ২০২৫
আপডেট: ২২:০৯, ৯ অক্টোবর ২০২৫

প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় শ্রীমঙ্গলের তরুণেরা

লোকালয়ে আটকে পড়া অজগর উদ্ধার করছেন সিউ সদস্যরা।

লোকালয়ে আটকে পড়া অজগর উদ্ধার করছেন সিউ সদস্যরা।

বাংলাদেশের জলাভূমি প্রাণবৈচিত্র্যের এক অপূর্ব সম্ভার বলে মনে করেন পরিবেশ কর্মী ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মীরা। তবে প্রায়ই লোকালয়ে সাপসহ বন্যপ্রাণী বেরিয়ে বিপাকে পড়ে আহত বা মারা যাওয়ার খবর আসে সংবাদ মাধ্যমে। তবে, এসব বন্যপ্রাণী উদ্ধারে তৈরি হয়েছে সামাজিক সচেতনতা।

কোথাও কোনো পশুপাখি বিপদগ্রস্ত হলে আমরা ছুটে যাই, উদ্ধার করি, সেবশুশ্রুষা দিয়ে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করি। পরে সেটা অবমুক্ত করে দেওয়া হয়। পাখিসহ বন্যপ্রাণী রক্ষায় আমরা ভবিষ্যতে আরো বেশি করে কাজ করে যেতে চাই।

স্ট্যান্ড ফর আওয়ার অ্যানডেজার্ড ওয়াইল্ডলাইফ- সিউ [Stand for Our Endangered Wildlife - SEW] নামে এমনই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার তরুণেরা। তারা সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন জলাভূমি, বনাঞ্চল ও লোকালয়ে বিপন্ন পাখি, সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও সেবা পরবর্তী অবমুক্ত করার কাজ করেন। 

বনপ্রাণের সুরক্ষা ও সংরক্ষণে কাজ করা এই সেচ্ছাসেবী সংগঠনের অন্যতম ফাউন্ডার সোহেল শ্যাম ও খোকন থৌনাউজাম। সোহেল শ্যাম বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে আমরা এই সংগঠন থেকে হাজারের অধিক পাখি, সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে, প্রয়োজনীয় সেবাশুশ্রুষা দিয়ে অবমুক্ত করেছি। বনবিভাগের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১টি চিতাবিড়াল, ৭-৮টি লজ্জাবতী বানর, ২টি বনরুই, ১০-১২টি অজগর, ১০-১২টি বনবিড়াল, পদ্মগোখরা, ফণীমনশা, ওয়াটার স্ন্যাক, পিট ভাইপার, বেত আচড়াসহ ৮-১০ প্রজাতির ৪০-৫০টি সাপ। পাখিদের মধ্যে রয়েছে ৪-৫ প্রজাতির পেঁচা, ঈগল, মদনটাক, ধনেশ, চিল, শালিক, বহুরুপি ঈগল, ময়না, টিয়া, বিভিন্ন প্রজাতির বক, জলময়ূর, কালেম ও বনমোরগ। রয়েছে ৫-৬ প্রজাতির কচ্ছপ ও তক্কক। দুইটি বিন্টুরং, শকুন, ও অতি বিপন্ন বানরসহ অনেক প্রাণী উদ্ধার করেছি।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কিশোরদের সচেতন করছেন সিউ-এর সংগঠকেরা। পাখির বাসা না ভাঙতে, ডিম ও ছানা না ধরতে তাদের সচেতনতা করা হয়। ছবি: আই নিউজ

সোহেল শ্যাম বলেন, আমরা বনবিভাগের সাথে পাখি শিকারীদের ধরতেও অভিযান করি। পাশাপাশি সচেতনতার কাজও করি। মাঠে আমাদের সক্রিয় সদস্য রয়েছেন ১২ জন। এছাড়া ফেসবুক গ্রুপে ২৫০০ সদস্য রয়েছে। সারাদেশে আমাদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। আমাদের অনেক ইনফরমারও রয়েছে। মৌলভীবাজারের বাইরে সিলেট বিভাগে যেখানে সম্ভব, সেখানে আমরা সরাসরি যাই। সিলেট বিভাগের বাইরে বনবিভাগের সাথে সংযোগ করে দেই। আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষসহ প্রাণীদের সহযোগিতা করি। বনায়নের কাজও করছি। সবকিছু করছি নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে। ২০০২-০৩ সাল থেকে আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কাজ করতাম। এখন সাংগঠনিকভাবে করছি।

সংগঠনের কো-ফাউন্ডার খোকন থৌনাউজাম বলেন, ‘কোথাও কোনো পশুপাখি বিপদগ্রস্ত হলে আমরা ছুটে যাই, উদ্ধার করি, সেবশুশ্রুষা দিয়ে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করি। পরে সেটা অবমুক্ত করে দেওয়া হয়। পাখিসহ বন্যপ্রাণী রক্ষায় আমরা ভবিষ্যতে আরো বেশি করে কাজ করে যেতে চাই। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার যেসব তরুণরা কাজ করছে, এরা ভালো ভূমিকা রাখছে। এটা তো কমিউনিটির নেতৃত্ব, সচেতনতা সবই প্রয়োজন। কমিউনিটি যত বেশি সচেতন হবে, মানুষ যুক্ত হবে, ততবেশি সফলতা পাওয়া যাবে।

লোকালয়ে ধরা পড়া বনরুই উদ্ধার করছেন সিউ সদস্যরা। ছবি: আই নিউজ

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেট; সদরদপ্তর- মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার বলেন, 'স্থানীয় কমিউনিটির মধ্যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কোথাও কোনো বন্যপ্রাণী- বিশেষ করে মেছোবিড়াল, সাপ, পাখি বা যেকোনো বন্যপ্রাণী বিপদগ্রস্ত হলে কমিউনিটির জনসাধারণ বন বিভাগকে তথ্য প্রদান করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগের তদারকিতে কমিউনিটির সেচ্ছাসেবকরা সেবাশুশ্রুষা দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন। কমিউনিটির সহযোগিতায় ইতোমধ্যে আমরা বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করেছি। এই ধরনের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেমন - স্ট্যান্ড ফর আওয়ার অ্যানডেজার্ড ওয়াইল্ডলাইফ- সিউ অন্যতম। বর্তমানে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বনবিভাগের তৎপরতার কারণে অনেক বন্যপ্রাণীর জীবন রক্ষা পাচ্ছে। ফলে বন্যপ্রাণীর আনাগোনা ও সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

পড়ুন বিশেষ প্রতিবেদন: হুমকির মুখে জলাভূমি – বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া হাওর ও বিল রক্ষার উদ্যোগ

আরো পড়ুন: 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়