আপডেট: ১০:৩৯, ২৭ মে ২০১৯
পুরান ঢাকায় এখনো আছে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গুদাম
চুড়িহাট্টার ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম অপসারণে অভিযান শুরু করে। তখন সমস্ত কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে কেরানীগঞ্জে নির্মাণাধীন কেমিক্যাল পল্লিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এখনো অনেক জায়গায় রয়ে গেছে ঝুকিপূর্ণ কেমিক্যাল গুদাম।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় কেমিক্যাল বিস্ফোরণে ভয়াবহ আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৭০ জন নিহত হন। এর পরেই কেমিক্যাল গুদাম অপসারণের অভিযানে নামে ডিসিসি। কিন্তু এর তিন মাস পরও কেমিক্যাল গুদাম রয়েছে পুরান ঢাকার বংশাল, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, আরমানিটোলাসহ আশপাশের এলাকায়। গোপনে গুদাম ভাড়া নিয়ে কেমিক্যাল রাখা হচ্ছে এসব এলাকার আবাসিক ভবনে।
স্থানীয় বাসীন্দারা জানান, এখানে রাত ১১টার পর বড় বড় কন্টেইনারে করে কেমিক্যাল আনা হয়। ভোরের আগেই ভবনে কেমিক্যাল ঢুকিয়ে ঘরবাড়ি তালা দিয়ে দেওয়া হয়। কেমিক্যাল রাখা ওইসব ভবনে ঢুকতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। বলা হয় ভেতরে কিছু নেই।
মাহুতটুলির এক স্থায়ী বাসিন্দা জানান, ‘প্রতিদিন রাতে এসব বাসায় কেমিক্যাল রাখা হয়। কেমিক্যাল রাখার ফলে ক্ষতিকারক সাদা পাউডার আশপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।’ তিনি আরো জানান, ‘এলাকার যেসব বাসায় কেমিক্যাল গুদাম রয়েছে তাদের একাধিকবার অনুরোধ করার পরও তারা গুদাম সরায় না। পুলিশ কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কেউ আসলে তারা বাসায় ঢুকতে দেয় না।’
মাহুতটুলির ওই বাসীন্দা জানান, ‘চকবাজারের আগুনের পর আমরা আতঙ্ক নিয়ে এই ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছি।’ অবিলম্বে কেমিক্যাল গুদাম না সরালে চুড়িহাট্টার মতো আরও ট্র্যাজিডি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আরমানিটোলার শাবিস্তান হল গলি ও মিডফোর্ড রোডে গেলে কেমিক্যালের ঝাঁজালো গন্ধ নাকে লাগে। এখানকার আবাসিক ভবনগুলোর গুদামে কেমিক্যাল আনা নেওয়া করতেও দেখা যায়। তবে এই এলাকার প্রায় সব কেমিক্যাল গুদামেই রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র।
পুরান ঢকার বংশাল এলাকার কেমিক্যাল গুদামের ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মোঃ সাহিদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি তা কেমিক্যাল থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে কেমিক্যাল গুদামগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে বংশাল থানা এলাকায় কেমিক্যাল গুদাম নেই। তবে তারা কেমিক্যালগুলো কেরানীগঞ্জ বা অন্য কোথাও মজুদ করে। সেখান থেকে মাল সাপ্লাই করেন ব্যবসায়ীরা।’তবে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসার সাথে জড়িতরা বলছেন অন্যকথা। তারা জানান, এখনো আরমানিটোলা বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল বিক্রির বড় বাজার। বাংলাদেশের সব গার্মেন্টস শিল্প ও কল-কারখানায় ব্যবহৃত কেমিক্যাল এই বাজারেই কেনা-বেচা হয়। তবে দাহ্য কেমিক্যাল তেমন একটা রাখা হয়না এখন এই এলাকায়। সাধারণ কেমিক্যাল মজুদ রাখা হয়।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, এখনও প্রস্তুত হয়নি কেরানীগঞ্জ কেমিক্যাল পল্লি । তবু প্রসাশন ও সিটি করপোরেশনের অনুরোধে আরমানিটোলা ও মিডফোর্ড এলাকা থেকে দাহ্য কেমিক্যাল সরিয়ে ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে আরমানিটোলায় গুদামগুলোতে গার্মেন্টস আইটেম, ফুড আইটেম, ফার্মাসিটিক্যাল আইটেম ও পারফিউমারি আইটেমের কেমিক্যাল রাখা হয়েছে। এগুলো দাহ্য কেমিক্যাল নয়।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী আব্দুল জলিল জানান, ‘আরমানিটোলা এলাকায় বর্তমানে কোনও দাহ্য কেমিক্যাল নেই। এখানে যেসব গুদাম রয়েছে তার সবই সাধারণ কেমিক্যাল। এগুলো দাহ্য কেমিক্যাল নয়।’ ডিএসসিসি দাবিও করছে, বর্তমানে পুরান ঢাকার কোথাও কোনও কেমিক্যাল গুদাম নেই। আর বিস্ফোরক পরিদফতর বলছে, চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ এপ্রিল পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম অপসারণের কাজ পরিচালিত হয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে অনেক কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণ করা হয়েছে। গোপনে কেউ এখনও পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গুদাম রেখেছে কিনা, সেটি অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনে আবারও অভিযান চালানো হবে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল গুদাম অপসারণে গঠিত টাস্কফোর্সের অভিযানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ১৬২টি প্রতিষ্ঠানের। ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করার পাশাপাশি আরো ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে গুদাম সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয় । সেইসঙ্গে জরিমানা করা হয় মোট ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। নিয়ম মেনে গুদাম সরিয়ে নেওয়ায় ১৬টি প্রতিষ্ঠানের ইউটিলিটি সার্ভিস পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান ‘বিস্ফোরক পরিদফতরের ঘোষিত ৩৬টি অতিদাহ্য কেমিক্যাল আইটেম বর্তমানে পুরান ঢাকায় নেই। আরমানিটোলায় গুদামগুলোতে যেসব কেমিক্যাল বিক্রি করা বা রাখা হচ্ছে, সেগুলো দাহ্য নয়। সেগুলোর অনুমতি রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কেরানীগঞ্জে কেমিক্যাল পল্লি নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেটি নির্মাণ হলে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা থেকে সব কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে নেওয়া হবে।’
গত ১ এপ্রিল পর্যন্ত দাহ্য কেমিক্যাল গুদাম অপসারণের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. সামসুল আলম। তিনি আরো জানান, এর মধ্যে অনেকটা সময় চলে গেছে। আমরা বিষয়টি অবজারভেশনে রেখেছি। বিভিন্ন তদন্ত সংস্থাও তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে। যারা এখনও গোপনে গোপনে ঘরের ভেতর বা বাড়িতে কেমিক্যাল গুদাম রেখেছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় প্রয়োজন। ঈদের পর যদি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আবারও অভিযান পরিচালনা করে, তবে আমরা সেখানে থাকবো।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মজনু বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমরা কেমিক্যাল (টুথপেস্ট) ব্যবহার করি। পানি পরিশোধনের জন্য কেমিক্যাল লাগে। কেমিক্যাল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেমিক্যাল ব্যবসা বন্ধ হলে বাংলাদেশের সব কল-কারখানা অচল হয়ে যাবে।’
এইচএ/ ইএন
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের