Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ১৫ জুন ২০২৫,   আষাঢ় ১ ১৪৩২

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২০
আপডেট: ১৫:৫১, ১১ জানুয়ারি ২০২০

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের 'উইন্টার ফিয়েস্টা ২০২০'

মৌলভীবাজার: চায়ের দেশ মৌলভীবাজার জেলার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। দেশের সনামধন্য এবং জনপ্রিয় অনেক ব্যক্তিই এই বিদ্যালয়ের ছাত্র। শতবর্ষেরও বেশি পুরোনো এই বিদ্যালয়ে তাই প্রাক্তন ছাত্ররা সুযোগ পেলেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন প্রাণের মেলায়।

এরকম একটি প্রাণের মেলাই হয়েছে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। প্রায় দুই হাজার প্রাক্তন ছাত্র বিভিন্ন মাধ্যমে শীতকালীন এই উৎসব ‘উইন্টার ফিয়েস্টা ২০২০’ এ অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে। ছুটে আসে একদিনের জন্য হলেও কিশোরবেলায় হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির রোমন্থনে। চলে আসে প্রিয় ব্যাচমেটদের সাথে একবার দেখা করার আসায়।

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের উইন্টার ফিয়েস্টা ২০২০ অনুষ্ঠানটিও হয়ে উঠেছিলো সবার উপস্থিতিতে সরব। সিনিয়র-জুনিয়র স্কুলের সব ছাত্র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই অনুষ্ঠান সফল করার উদ্যোগ নিয়েছিলো। ফলাফল হিসেবে এটি স্কুলের ইতিহাসে একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল এবং সফল অনুষ্ঠানে চিহ্নিত হয়ে গেলো।

অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক শাহরিয়ার উদ্দিন আই নিউজকে জানান, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের পরে বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তণ এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা মিলে সফলভাবে উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিলো এতোদিন।

তিনি বলেন, স্কুলজীবনের স্মৃতি পুণরায় জাগ্রত করতে এই আয়োজন। মূলত আমরা একদিকে শীতকে উদযাপন করতে চাই। আবার অন্যদিকে শীতের আড়ষ্টতা কাটিয়ে বসন্তের উষ্ণতা ফিরিয়ে আনতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ মিলে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

উৎসবের দিন শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটায় বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুর রহমান এই উইন্টার ফিয়েস্টার আয়োজক এবং প্রাক্তন ছাত্রদের সাথে নিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। পরে  তিনি ছাত্রদের সাথে নিয়ে স্কুলের প্রতিকৃতিতে তৈরি বিশাল কেক কাটেন।

এসময় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ছাড়াও জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। কেক কাটার সাথে সাথে উপস্থিত ছাত্রদের করতালি এবং ‘হিপ হিপ হুররে’ শব্দে ভরে ওঠে জেলার এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

[caption id="attachment_39804" align="aligncenter" width="4000"] বিদ্যালয় ক্যাম্পাস সেদিন সেজেছিলো রঙিন বেশে।[/caption]

পরে উইন্টার ফিয়েস্টায় আসা অতিথিরা, স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক এবং সহকারি শিক্ষকবৃন্দ, এবং বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলেন। প্রাক্তন শিক্ষকরা উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করেন বিদ্যালয়ে কাটিয়ে যাওয়া সুন্দর এবং স্মরণীয় মূহুর্তগুলোর কথা।

(আরও পড়ুনঃ উইন্টার ফিয়েস্টাকে ঘিরে উৎসবমুখর মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়)

পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুর রহমান উপস্থিত শিক্ষার্থী এবং উইন্টার ফিয়েস্টা ২০২০ এর আয়োজকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এই সুন্দর অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। একইসাথে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্কুলের গন্ডির পরবর্তী জীবন সম্পর্কে পরামর্শ দেন।

আলোচনার সভার এই অংশটিতে উইন্টার ফিয়েস্টায় আগত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো বেশ সরব। করতালি এবং উল্লাসধ্বনিতে ভরে গিয়েছিলো ক্যাম্পাস।

[caption id="attachment_39805" align="aligncenter" width="4000"] রঙিন আলোয় সজ্জিত হতে বাদ যায়নি একাডেমিক ভবনগুলোও[/caption]

আলোচনা সভার পরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে করা ফটোশুট জোনে শিক্ষার্থীরা ছবি তুলে। ব্যাচের সবাইকে নিয়ে, প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে, বন্ধুদের দল নিয়ে উল্লাস করে কিংবা একাই সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠে ছবি তোলতে। বিদ্যালয়ের স্মৃতি যতটা সম্ভব সাথে নিয়ে যাওয়ার এই প্রচেষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেছিলো সকলেই।

এরপর নামাজের বিরতি শেষে ক্যাম্পাসের কিছু নির্ধারিত স্থানে আগে থেকেই আয়োজকদের করে রাখা ব্যবস্থায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বনফায়ার। উল্লাসে মেতে উঠে সবাই। এখানেই শেষ না, উড়ানো হয় ফানুসও। যেন বিদ্যালয়ের ঠিক উপরের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে কিছু আনন্দের আলো।

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘উইন্টার ফিয়েস্টা’র উদ্বোধন

এরপর আয়োজকরা ঘোষণা করলে সবাই ভলান্টিয়ারদের সাহায্যে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে ডিনার সংগ্রহ করে। সেখানে দেখা যায় একদল ছাত্র সবার প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে, কেউবা অন্যকে খাবার পেতে সাহায্য করছে।

খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই ক্যাম্পাসের এক কোণায় বিশাল এক গাছের নিচে করা সুদৃশ্য মঞ্চ থেকে ঘোষণা আসে এখন শুরু হবে উৎসবের ‘কালচারাল নাইট’ অংশ। মঞ্চ মাতাতে এসেছেন দেশের নামকরা ব্যান্ডদল ‘জলের গান’।

ব্যান্ড দলের প্রধান ভোকাল রাহুল আনন্দ মাইকের সামনে আসতেই উপস্থিত শিক্ষক, অতিথি এবং ছাত্রদের মধ্যে বয়ে যায় আনন্দের ঢেউ। গান শুরু করার আগে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে হাসিঠাট্টায় খোদ মৌলভীবাজারের আঞ্চলিক ভাষায় কিছু গল্প করে নেয় 'জলের গান'। তারপর শুরু হয় তাদের মন মাতানো মিউজিক, সেইসাথে গান। মঞ্চের উপরের তাদের এই পারফর্মেন্সের জন্য সব থেকে বেশি সাড়া আসছিলো অডিয়েন্স থেকে। দর্শকসারিতে বসে থাকা শিক্ষার্থীরা সবাই সিনিয়র-জুনিয়রের প্রভেদ ভুলে গিয়ে তালে তালে নাচতে থাকে। কেউবা শুধুই তালি দিচ্ছিলো, কেউবা নিজের গলা মিলিয়ে গান গাইছিলো জলের গানের সাথে।

(আরও পড়ুনঃ ১০ জানুয়ারি মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘উইন্টার ফিয়েস্টা’)

দর্শকসারি থেকে এমন সাড়া পেয়ে মঞ্চের উপর থেকে রাহুল আনন্দ জানান তিনি নিজেও মৌলভীবাজারেরই ছেলে। শুধু তাই নয়, ব্যান্ডের মধ্য থেকে আরও দুইজন দ্বীপ এবং সুজয় তারাও মৌলভীবাজারের। তবে তারা দেশের প্রায় সব জেলায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গান গাইলেও মৌলভীবাজারের দর্শকদের মন মাতাতে এসেছেন এই প্রথম। এতোদিন মৌলভীবাজারবাসীর ডাক না পাওয়ায় প্রথমে কিছু ক্ষোভ প্রকাশ করলেও পরে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের উইন্টার ফিয়েস্টার আয়োজকবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান। জলের গান জানায় ‘মৌলভীবাজারে এসেছি আপনাদের আশির্বাদে। এটা অবশ্যই আমাদের দলের সৌভাগ্য। আমরা চাই ভবিষ্যতেও আসতে, আবারও আপনাদের ডাক পেতে। এখানে আবারও দেখতে চাই আপনাদের উল্লাস; দরকার হয় ফ্রিতেই এখানে গান গাইবো।‘

(আরও পড়ুনঃ নিজ জেলা মৌলভীবাজার নিয়ে রাহুল আনন্দের আফসোস)

গানে গানে মেতে থাকে উপস্থিত সবাই আরও আড়াই ঘন্টা। পরে ‘জলের গান’ ধন্যবাদ জানায় অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক শাহরিয়ার উদ্দিন এবং অনুষ্ঠানের পিছনে শ্রম ঝরানো সকল ভলান্টিয়ারদের। দূর্দান্ত পারফর্মেন্সের পর ‘জলের গান’ দল’ নেমে আসে মঞ্চ থেকে।

পরে অনুষ্ঠানের আয়োজকবৃন্দ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ‘উইন্টার ফিয়েস্টা ২০২০’ এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সীমান্ত দাস/আইনিউজ

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়