বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
আপডেট: ১৬:০৯, ৪ জুন ২০২১
বড়লেখায় পানজুম দখলের পর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, গ্রেপ্তার ২
সংগৃহীত ছবি
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বনাখলাপুঞ্জির পানজুম দখলের পর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার (২ জুন) দিবাগত রাত তিনটার দিকে বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার উত্তর ডিমাই গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মুখলেছ আলী (৪০) ও মহরম আলী ওরফে কুটুন মিয়া (২২)। তারা দুজন বড়লেখা সদর ইউপির উত্তর ডিমাই গ্রামের বাসিন্দা। বৃহ¯পতিবার (০৩ জুন) বিকেলে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ। তিনি বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে সাতদিন পেরিয়ে গেলেও বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সন্ধ্যার পরেও পর্যন্ত পানজুম দখলমুক্ত হয়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বুধবার (২ জুন) ২৪ ঘন্টার মধ্যে দখলদারদের সরিয়ে নেওয়ার সময় নিলেও তিনি তা দখলমুক্ত করতে পারেননি। এতে ভয়ে জুমে প্রবেশ করতে পারছে না খাসিয়ারা। জুম থেকে পান তুলতে না পেরে তারা কষ্টে দিন পার করছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা দখল হওয়া বনাখলাপুঞ্জির পানজুম আইনি পক্রিয়ায় দখলমুক্তের পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া আগারপুঞ্জির খাসিয়াদের সহস্রাধিক পানগাছ কাটার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বেরা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
পানজুম দখল করে সেখানে তৈরি হচ্ছে ঘর
পানজুম দখল ও পানগাছ কাটার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আদিবাসী নেতারা। তারা দ্রুত জুম দখলমুক্ত করে খাসিয়াদের বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার (২৮ মে) সকালে বনাখলাপুঞ্জির জুম দখল করে স্থানীয় একটি চক্র। জুম দখলের পর সেখানে তারা একটি ঘরও নির্মাণ করেছে। একসপ্তাহের মধ্যে তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে খাসিয়াদের তারা জুমে প্রবেশ করতে দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনায় গত রোববার (৩০ মে) পুঞ্জির নারী মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন।
মামলার এজাহার, পুঞ্জির বাসিন্দা ও চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা চাষের জন্য ১ হাজার ৯৬৪ দশমিক ৫০ একর টিলাভূমি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়। পরে তারা ২৭২ একর জমি খাসিয়াদের কাছে উপ-ইজারা দেয়। ২০০৭ সালে খাসিয়ারা ওই জমিতে বনাখলাপুঞ্জি নামে বসতি স্থাপন করে। এরপর সেখানে পান চাষ শুরু করেন। পুঞ্জিতে বর্তমানে প্রায় ৩৬টি খাসিয়া পরিবারের দেড় শতাধিক সদস্য থাকে। প্রতিটি পরিবারের আলাদা পানের জুম আছে। গত ২৮ মে বোবারথল এলাকার আব্দুল বাছিত, পিচ্চি আমির, লেছই মিয়ার নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একদল লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুঞ্জিতে ঢুকে তিনটি পানের জুমের দখল করে নেন। এ সময় তারা সেখানে একটি অস্থায়ী ঘরও নির্মাণ করে। তখন জুমে থাকা খাসিয়াদের তারা তাড়িয়ে দিয়ে বলে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে ১০ লাখ চাঁদা না দিলে তারা জুমে প্রবেশ করতে পারবে না। এই ঘটনায় গত ৩০ মে পুঞ্জির নারী মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন। অন্যদিকে বনাখলাপুঞ্জি ছাড়া দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা বাগানের আওতাধীন আগারপুঞ্জি নামের আরেকটি পুঞ্জির খাসিয়াদের সহস্রাধিক পানগাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ধারণা করা হচ্ছে, গত শনিবার (২৯ মে) দিবাগত রাতের কোনো একসময় এই ঘটনাটি ঘটেছে। এই ঘটনায় গত সোমবার (৩১ মে) দুপুরে পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) সুখমন আমসে বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
বনাখলাপুঞ্জির নারী মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, আমরা নিরীহ মানুষ। পানচাষই আমাদের একমাত্র পেশা। পানচাষ করে আমরা সংসার চালাই। কিন্তু স্থানীয় সন্ত্রাসী আব্দুল বাছিত, পিচ্চি আমির, লেছই মিয়াসহ কয়েকজন আমাদের পানজুম দখল করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। তারা আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে বলেছে টাকা না দিলে তারা আমাদের জুমে প্রবেশ করতে দেবে না। আমরা ভয়ে আছি। একারণে জুমে যেতে পারছি না। শুনেছি তারা আমাদের জুম থেকে পান তুলে নিচ্ছে। জুম উদ্ধার না হলে আমরা খাবো কী?
এদিকে পানজুম দখল ও পুঞ্জির সহস্রাধিক পানগাছ কেটে ফেলার ঘটনায় মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ডাড্লী ডেরিক প্রেন্টিস, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসি ফোরামের মহাসচিব ফিলা পতমী, বাসদ মৌলভীবাজার জেলা শাখা সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবুল হাসান বনাখলাপুঞ্জি ও আগারপুঞ্জি পরিদর্শন করেছেন। তারা পুঞ্জি দুটিতে ঘুরে মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) ও খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ডাড্লী ডেরিক প্রেন্টিস বলেন, খাসিয়াদের পানজুম দখল ও পানগাছ কাটার ঘটনাগুলো ন্যাক্কারজনক ও দুঃখজনক। এই ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। একই সাথে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার যেন আশু একটা সমাধান হয়। খাসিয়া সম্প্রদায় যেন নিরাপত্তায়, নির্বিঘ্নে পান চাষ করে যেন তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আদিবাসি খাসিয়ারা শুধু পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে না তারা পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একেকটা গাছ তারা সন্তানের মতো বড় করে। এরপর তারা সেই গাছে পান চাষ করে গাছ রক্ষায়, পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, দখলদারদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ২৪ ঘন্টা সময় নিয়েছিলেন। তিনি তাদের সরাতে পারেননি। এখন আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের (পানজুম দখলকারীদের) উচ্ছেদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় দখলকারীদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। খাসিয়াদের সর্বত্মক আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আগারপুঞ্জি পুঞ্জির পানগাছ কাটার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। জড়িতদের খুঁজে বেরা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আইনিউজ/লাভলু/এসডি
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’
- করোনা জয় করে সুস্থ হয়েছেন মৌলভীবাজারের ৩ চিকিৎসক