হাসানাত কামাল
আপডেট: ১৮:৩৮, ১ আগস্ট ২০২৪
চা শ্রমিক জীবন
চা শিল্পের কারিগর চা শ্রমিক পরিবারের জীবন গল্প
চা পাতা তুলছেন নারী চা শ্রমিকরা। ছবি : হাসানাত কামাল
চায়ের দেশ মৌলভীবাজারে কেমন চলছে চা শ্রমিকদের জীবন? সারাদেশে ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে ৯০টিই মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। এই জেলার আইকনিক সিম্বল বা ব্র্যান্ড চা বাগান। যা দেশের অন্যতম রাজস্ব উপার্জনকারী শিল্পখাত। কিন্তু কেমন আছেন চা শ্রমিক চা শিল্পীরা। যাদের নিপুণ হাতে উৎপাদন হয় চা পাতা, সমৃদ্ধ হয় চা শিল্প!
দেশে নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়। জনপ্রতিনিধিরা নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেই প্রতিশ্রুতি। কেমনইবা আছেন চা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। আবাসন ব্যবস্থা, ভূমির অধিকার, শিক্ষা, মজুরি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য পরিস্থিতি কেমন। চা বাগান ঘুরে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করেছেন হাসানাত কামাল। আই নিউজের বিশেষ প্রতিবেদন।
এমপি ছাহেব (সাহেব) নির্বাচনের আগে হামারা (আমাদের) বাগানে এসেছিলো (এসেছিলেন)। কইছিলো (বলেছিলেন) হাম সবকো (আমাদের) ঘর দিবা (দেবেন)। ভাতা দিবা (দেবেন)। আমি চাইর লাখ (চার লাখ) টেকার (টাকার) পাকা ঘর পাইছি।
চা শ্রমিক পরিবারের ঘরবাড়ি
‘কি কইমু…বিসটির (বৃষ্টির) পানি পড়তো ঘরে। কত পানি হিচিয়া (সেঁচ) পালাইছি। আর ছিতের (শীতের) দিনে টান্ডা (ঠাণ্ডা) বাতাছ (বাতাস) ঘরে হামাইতো (প্রবেশ করতো)।’ কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার প্রেমনগর চা বাগানের শ্রমিক সুকুমার পাত্র।
সুকুমার জানান- তিনি থাকতেন একটি ভাঙা ঘরে। বৃষ্টির সময় ঘরের চালা দিয়ে পানি পড়তো। যে রাতে বৃষ্টি হতো সে রাতে আর ঘুম হতো না। সারারাত পানি সেঁচ দিতে হতো। কখনও চাল উড়িয়ে নিতো। শীতের সময়ও ছিলো একই কষ্ট। ঠাণ্ডা বাতাস এসে ঘরে প্রবেশ করতো। তখন রাতে বাড়ির উঠানে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতেন।
তবে এবার সুকুমারের কণ্ঠে রাজ্যের হাসি। যেন সুখি মানুষ। সুকুমার বাংলা ও নিজেদের হিন্দি-ওড়িয়া ভাষার মিশেলে কথা বলেন। তিনি বলেন- ‘এমপি ছাহেব (সাহেব) নির্বাচনের আগে হামারা (আমাদের) বাগানে এসেছিলো (এসেছিলেন)। কইছিলো (বলেছিলেন) হাম সবকো (আমাদের) ঘর দিবা (দেবেন)। ভাতা দিবা (দেবেন)। আমি চাইর লাখ (চার লাখ) টেকার (টাকার) পাকা ঘর পাইছি। হামারা ঘরে বাথরুম আছে, পাকঘর আছে। আমি ভাতা পাই। আমার বউও ভাতা পায়। আমরা সুখি আছি।’
সুকুমারের সাথে যখন কথা হয় তখন ভাদ্রের দুপুর। বেলা ১টা বাজে। বাগানের এক প্রান্তে রোদ আর অপর প্রান্তে মেঘে ঢাকা আকাশ। কিছুটা বৃষ্টিও ঝরছে। ভাদ্র মাসের দৃ্শ্যই নাকি এরকম। উঠানের এক প্রান্তে বৃষ্টি আরেক প্রান্তে শুকনো-রোদেলা মাঠ। ভাদ্রের এই দুপুরের মতোই চা শ্রমিকদের ভাগ্য। কেউ সরকারি ঘর-ভাতা পাচ্ছেন। আবার অনেকেই বঞ্চিত। সরকারি ঘর পেয়েছেন হাতেঘোনা কিছু ভাগ্যবান মানুষ।
ষাটোর্ধ্ব সুকুমার শারীরিক প্রতিবন্ধী। এক দুর্ঘটনায় ডান হাত অকেজো হয়ে গেছে। তাঁর স্ত্রীও প্যারালাইজড, একহাত অকেজো। দুইজনই সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ভাতা পান। সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে চারলাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা ঘর পেয়েছেন। এটা চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে এক ভাগ্যবান পরিবারের চিত্র।
চারলাখ টাকার সরকারি ঘরের সামনে সুকুমার পাত্র। ছবি : হাসানাত কামাল
- চা শ্রমিক জীবন
চা শ্রমিকরা ছবসছময় (সবসময়) বঞ্চিত। বাড়ি নেই-ঘর নেই। আগে তো কেউ খুঁজ নিতো না। এই ছরকার (সরকার) এছে (এসে) আমাদের অনেককে ভাতা দিচ্ছে। কেউ কেউ ছরকারি ঘর পাইছে (পেয়েছেন)। তবে যত মানুছ (মানুষ) তারচেয়ে খুব কম ঘর পাইছে (পেয়েছেন)। তবে এমপি ছাব কইছে বাগানের কুনু (কোনো) মানুছ ঘর ছাড়া থাকবোনা।
অধিকাংশ চা শ্রমিক পরিবারের ভাগ্য এখনও ততোটা সুপ্রসন্ন নয়। সুকুমার পাত্র আর তাঁর স্ত্রী শেফালি পাত্র যখন মনের প্রশান্তি নিয়ে কথা বলছিলেন- ঠিক তখনই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন নারী চা শ্রমিক সানন্দা কর। সানন্দা মাথায় জ্বালানি কাঠ নিয়ে দ্রুতগতিতে হাঁটছিলেন আর একা একা কথা বলে যাচ্ছিলেন। বলেন- ‘হামরা (আমরা) ভোট আইলে ভোট দেই। কিন্তু কেউ আমাদের দেখে না, ঘর দেয় না। বাগানে চাকরিও নেই। এই লাকড়ি (জ্বালানি কাঠ) বিক্রি করে খাই। একবেলা খাই তো আরেকবেলা খাবার যোগাড় করতে পারি না। কে আমাদের দেখে।’
সানন্দার পেছন দিয়ে যাচ্ছিলেন পদ্মারাণী মোদি। তিনি সানন্দাকে বলেন- ‘এই তুই না পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পাস (ভাতা পাও)।’ সানন্দা উত্তর দেন- ‘আরে দিদি এই পাঁচ হাজার টাকায় চলে তুই বল?’
মাথায় জ্বালানি কাঠ নিয়ে জীবন-কষ্টের কথা বলে যাচ্ছেন চা শ্রমিক নারী। ছবি : হাসানাত কামাল
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার রাজনগর চা বাগানের দুই নম্বর লাইনে কাজ করছিলেন নারী শ্রমিকেরা। একটু সামনে এগুতেই দেখা যায় ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন পুরুষ শ্রমিকেরা। সেখানে কথা হয় শ্রমিক নেতা বাবুল পাসির সঙ্গে। বাবুল বলেন- ‘চা শ্রমিকরা ছবসছময় (সবসময়) বঞ্চিত। বাড়ি নেই-ঘর নেই। আগে তো কেউ খুঁজ নিতো না। এই ছরকার (সরকার) এছে (এসে) আমাদের অনেককে ভাতা দিচ্ছে। কেউ কেউ ছরকারি ঘর পাইছে (পেয়েছেন)। তবে যত মানুছ (মানুষ) তারচেয়ে খুব কম ঘর পাইছে (পেয়েছেন)। তবে এমপি ছাব কইছে বাগানের কুনু (কোনো) মানুছ ঘর ছাড়া থাকবোনা। শেখের বেটি শেখ হাছিনাও (শেখ হাসিনা) কইছেন (বলেছেন) আমাদের ঘর দেবে, জমি দেবে। কেউ ঘর ছাড়া থাকবে না। আমাদের বাপ-দাদা শেখ ছাবরে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব) বিছওয়াছ (বিশ্বাস) করছে। এখন আমরা তাঁর বেটি (মেয়ে) শেখ হাছিনারে বিছওয়াছ করি।
- নিজ গৃহে পরবাস
মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় এক লাখের বেশি পরিবারে সাত থেকে আট লাখ চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। এদের মধ্যে কারোই নিজস্ব ভূমি নেই। চা বাগানের জমিতে ঘর বানিয়ে থাকেন। প্রায় অধিকাংশ ঘরই কাঁচা। কারো কারো ঘর জরাজীর্ণ, বৃষ্টির পানি পড়ে। আবার কারো ঘরে দিনের বেলা প্রচণ্ড রোদের সময় ছায়া খুঁজতে হয়। শীতের দিনে হিমেল বাতাস ঝাপটে ধরে। তবে আছে ভিন্ন চিত্রও। বাগানে বাগানে আধা পাকা ঘর আজকাল বেশ দেখা যায়। আছে সুন্দর সুন্দর বাওয়ান্ডারি আর পাকা ঘরও।
এদিকে মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলাকে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি আছে শুধু কমলগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ। তবে এখনও জেলার এক লাখ শ্রমিক পরিবারের কারোরই নিজের ভূমি নেই। এই বিপুল সংখ্যক চা শ্রমিক পরিবারের অধিকাংশই পাননি সরকারি ঘর। হাতেগোণা কিছু ভাগ্যবান পরিবার পেয়েছেন ঘর। প্রায় সাত থেকে আট লাখ জনগোষ্ঠীকে গৃহহীন ও ভূমিহীন রেখেই মৌলভীবাজার জেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
- সকল চা শ্রমিকের জন্য ঘর নিশ্চিতে আসছে বিশেষ প্রকল্প
আশ্রয়ণের ঘর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে সাংবাদিক সম্মেলনে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ডক্টর উর্মি বিনতে সালাম বলেন- চা শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্রকল্প করা হবে। বিগত ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কমলগঞ্জের পাত্রখোলা চা বাগান মাঠে ভিডিও কনফারেন্সে চা শ্রমিকদের জন্য ঘর করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রত্যেক চা শ্রমিক পরিবার জমিসহ ঘর পাবে। এটা চা জনগোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প। এটা বাস্তবায়ন হলে দেশের কোনো চা বাগানের কোনো শ্রমিক পরিবার গৃহহীন থাকবেনা।
জেলা প্রশাসক জানান- স্বল্প পরিমাণে হলেও বর্তমানে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রকল্প এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রকল্পে চা শ্রমিকদের জন্য ঘর করে দেওয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল হক আই নিউজকে বলেন- ‘চা শ্রমিকদের ঘরের জন্য আমরা ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়ার্ক করছি।’
মৌলভীবাজার জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান- মৌলভীবাজার জেলায় ২৩৩টি চা শ্রমিক পরিবারকে পাকাঘর করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুইটি কক্ষ, একটি বাথরুম এবং একটি রান্নাঘর। এতে ব্যয় হয়েছে চারলাখ টাকা।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে- সমাজসেবা অধিদপ্তর ছাড়াও অন্যান্য প্রকল্পে চা শ্রমিকদের জন্য সরকারি খরচে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এটা চলমান। তবে জেলায় মোট কত চা শ্রমিক পরিবার সরকারি ঘর পেয়েছেন প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
ড্রোন ক্যামেরায় রাজনগর উপজেলার মাথিউরা বাগানে চা শ্রমিকদের বাড়িঘর। ছবি : হাসানাত কামাল
- নির্বাচনের আগে ভূমি ও গৃহ নির্মাণের সুসংবাদ চান চা শ্রমিকরা
চা শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেন মোহন রবিদাশ। তিনি আই নিউজকে বলেন- ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রাখতে চাই। তিনি ছাড়া কেউ পারবেনা। তিনি সারাদেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘর-জমি দিয়েছেন। আমরা আশা করি চা শ্রমিকদেরও তিনি ঘর-জমি দেবেন। চা শ্রমিকরা একদিন কেউ আর ভূমিহীন থাকবেনা। সবার থাকবে নিজের ঘর।’
চা শ্রমিকদের সংগঠন লেবার ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান রামভজন কৈরি। তিনি চা জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে কাজ করেন। চা শ্রমিকদের ঘর ও ভূমির অধিকার বিষয়ে তিনি বলেন- ‘আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে চেয়ে আছি। তিনি কথা রাখার মানুষ। তিনি যা বলেন তা করেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন মানুষ নিজের ঘর থেকে ভোট দিতে পারে। সেটা সম্ভব না হলে নির্বাচনের আগে আনুষ্ঠানিক একটা ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা সন্তুষ্টিতে থাকবে।’
- সমাজসেবার ঘরে স্বীকৃতিপত্র চান শ্রমিকরা
রামভজন কৈরি বলেন- ‘সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে চা শ্রমিকদের ঘর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শুধু ঘরের চাবি দেওয়া হচ্ছে, ঘরের মালিকানা দেওয়া হচ্ছে না। শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে কমপক্ষে একটা স্বীকৃতিপত্র দরকার। বরাদ্ধপত্রও হতে পারে। চাবির সাথে একটা পত্র দেওয়া দরকার। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ আছে।’
চা শ্রমিকদের শিক্ষা পরিস্থিতি
চা বাগানে শিক্ষা পরিস্থিতি কেমন। শ্রমিক জনগোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে আন্দোলনকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় অভিভাক ও শিক্ষার্থীদের সাথে।
-
চা শ্রমিকদের ৯৭-৯৮ শতাংশ শিশুরা স্কুলে যায়
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চা বাগান। তখন বেলা ১২টা বাজে। দূর থেকে কানে ভেসে আসে স্কুলের ঘন্টার শব্দ। বাগানের প্রবেশ করতেই দেখা মেলে মাথিউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চোখে পড়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। বাগানের বিভিন্ন টিলা ও বস্তি থেকে দলে দলে ছেলেমেয়েরা বই নিয়ে স্কুলের দিকে যাচ্ছে। আরেকদল স্কুল থেকে ছুটি শেষে বের হয়ে যাচ্ছে। ছুটির আনন্দে শ্রেণীকক্ষ থেকে বের হয়েই ভোঁ-দৌড়। কিচিরমিচির শব্দে সবুজ চা বাগানের ধুলোপথ উড়িয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। চা গাছ আর ছায়াবৃক্ষের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পাখির কিচিরমিচির আর স্কুলশিশুদের কিচিরমিচির যেন এক হয়ে যাচ্ছিলো।
স্কুলের দিকে ছুটছে মাথিউরা চা বাগানের শিশুরা। ছবি : হাসানাত কামাল
প্রধান শিক্ষক অর্জুন তাঁতী জানালেন মর্নিং শিফটে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠদান চলে। বেলা ১২টায় তাদের ছুটি হয়। দ্বিতীয় শিফটে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পাঠদান চলে।
চতুর্থ শ্রেণীর পাঠদান নিচ্ছেন শ্রাবন্তি গোয়ালা। শ্রাবন্তি আই নিউজকে বলেন- আমি এই স্কুলেই লেখাপড়া করেছি। এখন এই স্কুলেরই শিক্ষক। আমার মতো অনেকেই বিভিন্ন বাগানে আছে- তারা যে স্কুলে লেখাপড়া করেছে এখন সে স্কুলে শিক্ষকতা করছে। অনেকে ভালো ভালো চাকরি করছে। ব্যাংকারও আছে।’
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রবি নুনিয়াকে জানতে চাইলে সে বলে- ‘আমি বড় হয়ে লেখাপড়া করে ডাক্তার হতে চাই। বাগানের কাজ করতে চাইনা। তার পাশে বসা সহপাঠী কাঁকলী কুর্মি বলে- ‘আমিও ডাক্তার হতে চাই। বাগানের মানুষের সেবা করতে চাই।’
প্রধান শিক্ষক অর্জুন তাঁতী জানালেন তাঁর বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকার ৯৭ থেকে ৯৮ শতাংশ শিশুরা লেখাপড়া করছে। ঝরেপড়ার হার দুই থেকে তিন শতাংশ। যে কারণে বিদ্যালয়ে সাক্ষরতার হার বেড়েছে।
-
শিক্ষায় কতটুকু আগ্রগতি?
আই নিউজ কথা বলে চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনকর্মী মোহন রবিদাশের সাথে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগানের শ্রমিক সন্তান। এখন একটা এনজিওতে কাজ করেন।
মোহন রবিদাশ চা বাগানে শিক্ষা পরিস্থিতি সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন- শিক্ষাক্ষেত্রে চা শ্রমিক সন্তানেরা আগের চেয়ে অনেকটা এগিয়েছে। তবুও এখনও পিছিয়ে আছে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী। যদিও গত ছয়-সাত বছরে বাগানে শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ উন্নতি হয়েছে। উচ্চশিক্ষিত হচ্ছে ছেলেমেয়েরা। এটা মূলত ২০১৪ সালের পর থেকে শুরু হয়েছে। যখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। বাগানে বাগানে গিয়ে ছেলেমেয়েদের উৎসাহিত করেছি। সরকারও চায় চা বাগানের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হোক, লেখাপড়া করুক। এখন অনেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। কিন্তু বাগানে এখনও শিক্ষার হার কম। পঞ্চাশ শতাংশও হবে না। দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়া করতে পারে না। মা-বাবা পেটে ভাত দেবে, না লেখাপাড়া করাবে!’ –নিজেকেই প্রশ্ন করেন চা শ্রমিকের সংগ্রামী এই মেধাবী সন্তান।
রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চা বাগানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। এখন এই স্কুলেই শিক্ষকতা করছেন চা জনগোষ্ঠীর এই নারী। ছবি : হাসানাত কামাল
স্কুল সরকারি না থাকার কারণে উপবৃত্তিসহ সরকারি সুবিধা পাচ্ছেনা। কিন্তু বাগানে জনসংখ্যা বাড়ছে। সব স্কুলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা দরকার। সাতটা ভ্যালিতে কারিগরি বিদ্যালয় ও কলেজ করা দরকার। এতে বাগানের বিপ্লব বয়ে আনবে।
-
বিসিএস ক্যাডার, ডাক্তার, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক চা শ্রমিক সন্তান
মোহন রবিদাশের দেওয়া তথ্যমতে- মৌলভীবাজারে চা জনগোষ্ঠী থেকে এরইমধ্যে তিনজন বিসিএস পাশ করেছেন। কমলগঞ্জের আলীনগর চা বাগানের জুয়েল কৈরি ও শিপা যাদব শিক্ষা ক্যাডার এবং নুনছড়া চা বাগানের নিয়তি কৈরি এডমিন ক্যাডার হয়েছেন। ডাক্তার আছেন পাঁচ থেকে ছয় জন। ব্যাংকার এবং বেসরকারি চাকরি করছেন অনেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন এবং করছেন ২০ জন। দেশের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে চা শ্রমিকরা এক শতাংশ কোটা পেয়ে থাকেন। শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন ১৫ থেকে ১৬ জন। সবমিলে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন ৪০ থেকে ৪৫ জন। আর বর্তমানে লেখাপড়া করছেন ৫০ থেকে ৬০ জন।
মোহন রবিদাশ বলেন- ‘এখনও সব বাগানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। হয়তো ৭০ শতাংশ হবে। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয় তো নেই বললেই চলে।’
লেবার ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রামভজন কৈরি বলেন- ‘চা বাগানে শিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। জাতীয় পর্যায়ে গিয়ে চা শ্রমিক সন্তানেরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ কম পায়।’
তিনি বলেন- ‘সারাদেশে ছোটবড় ২৪০ টা বাগান। স্কুল সরকারি না থাকার কারণে উপবৃত্তিসহ সরকারি সুবিধা পাচ্ছেনা। কিন্তু বাগানে জনসংখ্যা বাড়ছে। সব স্কুলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা দরকার। সাতটা ভ্যালিতে কারিগরি বিদ্যালয় ও কলেজ করা দরকার। এতে বাগানের বিপ্লব বয়ে আনবে। কর্মসংস্থান হবে। শুনেছি সব চা বাগানে স্কুল করার জন্য পরিপত্র জারি করা হয়েছে।’
-
চা বাগানে প্রাথমিক বিদ্যালয়
মৌলভীবাজার জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কিশোলয় চক্রবর্তী জানান- জেলার ৯০টি চা বাগানের মধ্যে ৬২টি বাগানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এতে ১২ হাজার ৪৪১ জন শিশু লেখাপড়া করে। এছাড়া এনজিও পরিচালিত ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯ হাজার ৭৫০ চা শ্রমিক শিশু লেখাপড়া করে।
সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কিশোলয় চক্রবর্তী বলেন- ‘তখন আমি শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বে ছিলাম। ২০১০ সালের আগে চা বাগানে স্কুল খুব কম ছিলো। ২০১০ সালের পরে অনেক স্কুল করা হয়েছে।’
তিনি আই নিউজকে বলেন- ‘চা বাগানে শিক্ষাবিস্তারে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন নতুন আরো বিদ্যালয় হচ্ছে। যেসব বাগানে স্কুল নেই সেসব বাগানের স্কুল করা হবে।’
চা বাগানে শিক্ষাবিস্তারে কাজ করেছেন মৌলভীবাজার জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা ও শিশু উন্নয়ন গবেষক জসিম উদ্দিন মাসুদ। তিনি বলেন- মৌলভীবাজারে বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। যা জাতীয় পর্যায় থেকেও বেশি। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ। অথচ ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলার শিক্ষার হার ছিলো ৫১ দশমিক ১ শতাংশ।
জসিম উদ্দিন মাসুদ আই নিউজকে বলেন- এক সময় মৌলভীবাজারে শিক্ষার গড় হার কম ছিলো শুধুমাত্র চা বাগানের কারণে। তখন চা বাগানে শিক্ষার হার ২০ শতাংশেরও কম ছিলো। এখন অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চা বাগানে প্রতিটি ছেলেমেয়ে স্কুলে যায়। লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। চা বাগানের আলাদা করে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে ধারণা করা যায় বর্তমানে চা বাগানে শিক্ষার হার ৪০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ। কম হবে না।’
তিনি বলেন- ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির বাস্তবায়নে ২০০৯ সাল থেকে বাগানে বাগানে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে কাজ শুরু হয়। নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষা বিস্তারে অভিভাবক, পঞ্চায়েত সদস্য ও বাগান কর্তৃপক্ষকে নিয়ে নিয়মিত সভা করেছি। ৩৪টি বাগানে বছরে ১০টা করে সভা করেছি। ১৫টা বাগানের ডে-কেয়ার করেছি। ঝরে পড়া রোদে এই উদ্যোগ দারুণভাবে কাজ করে। চা বাগানের উৎপাদন বেড়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে চা বাগানে শিক্ষা বিস্তার শুরু হয়। আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করে ইউনিসেফ।’
রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চা বাগানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি : হাসানাত কামাল
জসিম উদ্দিন মাসুদ জানান- ইউনিসেফ ২০০৮ সালে সারাদেশে পাঁচটা সূচকের ভিত্তিতে জরিপ করে। সূচকগুলো হলো: স্বাক্ষরতার হার, শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃ মৃত্যুর হার, স্যানিটেশন ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা। তখন ১২টা সুবিধাবঞ্চিত জেলা চিহ্ণিত করা হয়। এই কনভারজেন্স সূচকে নীচের দিকে প্রথম ছিলো ভোলা ও সুনামগঞ্জ জেলা। মৌলভীবাজার ছিলো তৃতীয়।
জসিম উদ্দিন মাসুদ বলেন- ‘এখন চা বাগানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোসহ অনেক এনজিও করছে। মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষাক্ষেত্রে এখন অনেক এগিয়েছে। চা বাগান শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। চা বাগানে সাক্ষরতার হার বেড়ে যাওয়ায় সারাজেলার পরিসংখ্যান পাল্টে গেছে।’
-
চা বাগানে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ
সদর উপজেলার প্রেমনগর চা বাগানে কথা হয় শিউলি পাত্রের সাথে। সে বাগান থেকে কিছুটা হেঁটে, কিছুটা অটোরিকশা করে গিয়াসনগরে স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করে। এবছর সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। শিউলি বলে- ‘স্কুল অনেক দূরে। প্রতিদিন যেতে পারি না। ১০০ টাকা ভাড়া লাগে। আমরা বাগানে একটা স্কুলে চাই।’
চা পাতা তুলতে তুলতে কথা বলছিলেন অনিমা পাত্র। তিনি বলেন- ‘আমাদের বাগানে একটা হাইস্কুল খুব দরকার। তাহলে আমাদের বাচ্চাকাচ্চারা লেখাপড়া করতে পারতো। সরকার তো আমাদের অনেক করে দিয়েছে। একটা স্কুল দেওয়ার জন্য মা শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানাই।’
আন্দোলনকর্মী মোহন রবিদাশ বলেন- ‘এখনও চা বাগানে মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। লেখাপড়ার সুযোগ পেলে কিভাবে শিক্ষিত চা শ্রমিক সন্তান!’
মৌলভীবাজার জেলায় চা বাগানে মাধ্যমিক বিদ্যালয় কতটা আছে। জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুর রহমান জানান- সরাসরি বাগানের মধ্যে না থাকলেও জেলায় চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায় ২৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ২টি, রাজনগরে ৪টি, শ্রীমঙ্গলে ৭টি, কমলগঞ্জে ১২টি এবং বড়লেখায় ৪টি। যেখানে সরাসরি চা বাগানের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুর রহমান আই নিউজকে বলেন- ‘শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও জুড়ী উপজেলায় চা বাগান অধুষিত এলাকায় অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলক খারাপ। যার প্রভাব জেলার ফলাফলের উপর পড়ে। তবে আগে থেকে এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। একসময় চা বাগানে শিক্ষার হার ছিলো ২০ শতাংশের নীচে। এখন প্রায় ৫০ শতাংশ। প্রতিটি চা বাগানে সকল শিশুর লেখাপড়া নিশ্চিত করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল চা বাগানে বিদ্যালয় হয়ে যাবে।’
শ্রেণীকক্ষে চা শ্রমিক পরিবারের শিশু শিক্ষার্থীরা। ছবি : হাসানাত কামাল
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বর্মাছড়া চা বাগানে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদের উদ্যোগে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণ হচ্ছে। কাজ শেষ পর্যায়ে। এই স্কুল চালু হলে আশেপাশের বাগানের শিশুরা সরাসরি লেখাপড়া করতে পারবে।
চা শ্রমিকদের মজুরি
২০০৯ সালের আগে চা শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি পেতেন ২৮ থেকে ৩০ টাকা। এখন তারা মজুরি পান ১৭০ টাকা। তবে ১৭০ টাকা পেতে অনেক আন্দোলন করতে হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এই দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতির বাজারে এই মজুরিতে কী পোষায়? আই নিউজের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন চা শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা।
-
৩২.৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৭০ টাকা
চা শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো কেমন। ১৪ বছর আগে কত ছিলো মজুরি। ধাপে ধাপে কত টাকা করে বেড়েছে।
এ ব্যাপারে লেবার ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি বলেন- ‘দুই বছর পর পর চা বাগান মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে মজুরি সমন্বয় করা হয়।
তিনি জানান- ২০০৯ সালের আগে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ছিলো ৩২ টাকা ৫০ পয়সা। ২০০৯ সালে সেটা বেড়ে হয় ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। দুই বছর পর ২০১১ সালে কোনো চুক্তি ছাড়া অভ্যন্তরীণভাবে ৭ টাকা বেড়ে হয় ৫৫ টাকা। একইভাবে ২০১৩ সালে কোনো চুক্তি ছাড়া অভ্যন্তরীণভাবে ৭ টাকা বেড়ে হয় ৬২ টাকা। ২০১৪-১৫ সালে চুক্তি অনুযায়ী বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে মজুরির চুক্তি হয় ১০২ টাকা। ২০১৯-২০ সালে সেটা হয় ১২০ টাকা।
সর্বশেষ ২০২১ সালে দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চা শ্রমিকদের মজুরি হয় ১৭০ টাকা। রামভজন কৈরি বলেন- ‘এই ১৭০ টাকা মজুরি বিষয়ে মালিকপক্ষের সাথে শ্রমিকদের সমঝোতা হয়েছে কিন্তু চুড়ান্ত চুক্তি হয়নি। যদিও শ্রমিকরা বর্তমানে ১৭০ টাকা পেয়ে যাচ্ছেন।
-
‘১৭০ টাকায় সংসার কেমনে চলে?’
প্রেমনগর চা বাগানের তিন নম্বর লাইনে কাজ করছিলেন ছবিতা কৈরি। বৃষ্টিতে নতুন গজানো চায়ের দুটি-পাতা একটি কুঁড়ি সংগ্রহ করছিলেন। পাতা তুলতে তুলতে কথা বলছিলেন ছবিতা। তিনি বলেন- ‘মা-বাবা মজুরি পাইতো ৮ থেকে ১০ টাকা। আমরা একসময় ২৮ টাকা, ৩২ টাকা মজুরি পাইতাম। এখন আমরা পাই ১৭০ টাকা। অনেক আন্দোলন করে এটা বাড়ছে। কিন্তু এই ১৭০ টাকায় তো পোষায় না। জিনিষের দাম বেড়েছে, আমাদের তো এখন এই টাকা পোষায় না। রীত ভৌমিক বলেন- ‘সাতজনের পরিবারে বাগানের পারমেন্ট (পার্মানেন্ট/স্থায়ী) শ্রমিক একজন। একজনের মজুরি ১৭০ টাকায় সাতজনের খরচ কেমনে চলে। চাল আনমু না মাছ-আনাজ আনমু। না বাচ্চাকাচ্চারে লেখাপড়া করাইমু।’
চা শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন লেবার ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান রামভজন কৈরির সাথে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চা শ্রমিকদের অধিকার আদায় নিয়ে কাজ করেন।
রামভজন কৈরি আই নিউজকে বলেন- ২০০৯ সালে এই সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন মজুরি ছিলো ৩২ টাকা ৫০ পয়সা। এখন সেটা হয়েছে ১৭০ টাকা। এটা যথেষ্ট নয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমরা দাবি করেছিলাম ৩০০ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় সেটা ১৭০ টাকা করা হয়েছে। নাহলে আরো কম হতো। মালিকদের সাথে বসলে হয়তো ১৫০ টাকা করতো। এখন জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। এখন ৩৫০ টাকা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি না করলে পোষাবে না।। আমরা ৩৫০ টাকা মজুরি করার দাবি করছি।
চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায- বর্তমান মজুরি কাঠামো অনুযায়ী ২০ কেজি পাতা তুললে তারা পান ১৭০ টাকা। ২০ কেজি থেকে বেশি তুললে প্রতি কেজির জন্য পান ৪ টাকা। সকালবেলা তুললে পান ৫ টাকা করে। বাগানের উৎপাদন ভালো হলে মৌসুমে একজন শ্রমিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দৈনিক মজুরি তুলতে পারেন। তবে অফ-সিজনে উপার্জন অনেকটা কমে যায়। দৈনিক মজুরির পাশাপাশি ভর্তুকি দিয়ে নামমাত্র মূল্যে শ্রমিকদের রেশন হিসেবে আটা, গম বা চাল দিয়ে থাকে বাগান কর্তৃপক্ষ।
আই নিউজ সম্পাদক হাসানাত কামালের সাথে চা শ্রমিকদের জীবন নিয়ে কথা বলছেন ছবিতা কৈরি। ছবি : আই নিউজ
চা বাগানের শ্রমিক ও জনসংখ্যা কত
দেশে চা শ্রমিক ও চা জনগোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা কত। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। এ নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক অন বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রি বুক-২০১৯ এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট স্থায়ী চা শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ ৩ হাজার ৭৪৭ জন। অস্থায়ী চা শ্রমিকের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন। দেশে মোট চা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪ লাখ ৭২ হাজার ১২৫ জন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি লেবার ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে চা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ লাখ।
লেবার ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি বলেন চা শ্রমিকদের সংখ্যা দেড়লাখ হবে। তবে অস্থায়ী ও বেকার চা শ্রমিকের সংখ্যা স্থায়ী শ্রমিকের দ্বিগুণ হবে।
চা শ্রমিক অধিকারকর্মী মোহন রবিদাশ বলেন- ‘আমার হিসাবে দেশে চা শ্রমিকের সংখ্যা ১২ থেকে ১৩ লাখ। আর স্থায়ী, অস্থায়ী ও বেকার শ্রমিকরে সংখ্যা সাড়ে তিন থেকে চারলাখ।
চা শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার প্রেমনগর চা বাগানে কাজ করছিলেন নারী শ্রমিকেরা। তখন বেলা ২টা বাজে। পাতা উত্তোলন শেষে গোলঘরে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন শতাধিক শ্রমিক। দুপুরের খাবার হিসেবে কাঁচা চা পাতার কুঁড়ি, রুটির টুকরো, চানাচুর আর সিঙ্গারা বা ডালপুরি টুকরো। সাথে লবণ দিয়ে লিকার চা।
জানতে চাইলে জটলা হয়ে বসা চা-শিল্পীরা বলেন- ‘দাদা এ তো হামারা ছবকো মাদানিবেলার খাবার। আপ খা লিয়ে? (দাদা এটাই আমাদের সবার দুপুরের খাবার। আপনি খাবেন?)। ত্রিশোর্ধ্ব নারী শ্রমিক রেবন্তি কর্মকার বলেন- ‘হামি চা শমিক আছি দাদা (আমরা চা শ্রমিক দাদা)। এটাই হাম ছবকো জীবন (এটা আমাদের সবার জীবন।’
সরকার থেকে ভাতা পান কি-না জানতে চাইলে অনিমা পাত্র বলেন- ‘হা পাই, ছেক হাছিনা আছে হামারা দিদি, ছেকের বেটি। মা হয়, হামারা মা। হে দেয় বছরে পাছ হাজার টাকা (হ্যা পাই। শেখ হাসিনা আছেন আমাদের দিদি, শেখের বেটি। আমাদের মা হন। তিনি বছরে আমাদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেন।)’ পাশ থেকে কথাগুলো শুনছিলেন আঁখি কর। তিনি অনিমাকে বলেন- ‘তোর দিদিকে বুলা (বলো) টাকা বাড়িয়ে দিতে।’
তবে অনিমা পাত্রের যেন সবকিছুতেই সন্তুষ্টি। তিনি বলেন- ‘এই পাঁচ হাজার টাকা পাইয়া অনেক উপকার হইছে। হাঁস কিনছি, মোরগ কিনছি। বাচ্চাকাচ্চারে পড়ালেখা করাইতেছি।’ পদ্মারাণী মোদি বলেন- ‘আমিও ছাগল কিনছি। কে এই টাকা দেয়?’ অল্পতেই সন্তুষ্ট চা শ্রমিক নারীরা।
চা শ্রমিকরা সরকারের আর্থিক সহযোগিতা বা ভাতা কেমন পান। জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমার আই নিউজকে বলেন- জেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের জীবনমান কর্মসূচির আওতায় বছরে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা পান ৩৫ হাজার শ্রমিক পরিবার। এছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রকল্পে চা শ্রমিক সন্তানেরা চার হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা পান। এরবাইরে বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা এবং বিধবা পান চা শ্রমিকরা। চা শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান।
তিনি জানান- জেলা মোট ৬৪ হাজার ৬৫৬ জন বয়স্ক ভাতা পান। বিধবা ভাতা পান ২২ হাজার ২৩১ জন। প্রতিবন্ধি ভাতা পান ২৮ হাজার ৭২৪ জন। এই সুবিধা চা-শ্রমিকরাও পান, তারা এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
চা পাতা তুলছেন নারী চা শ্রমিকরা। ছবি : হাসানাত কামাল
চা বাগানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
চা বাগানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেমন। জানতে কথা হয় সিভিল সার্জন এবং বাগানে বসবাসরত চা জনগোষ্ঠীর মানুষের সাথে। মাথিউরা চা বাগানের শ্রমিক রূপা বাউরি খেদ নিয়ে বলেন- ‘আমাদের আর অসুখ-বিসুখ। তাপ-জ্বর উঠলে বাগানের ডিসপেনসারিতে একপাতা প্যারাসিটামল দেয়। আর কি দিবো ‘
রাজনগর চা বাগানের শ্রমিক নেতা বাবুল পাসি বলেন- ‘চা বাগানের ডিসপেনসারিতে প্রাথমিক চিকিৎসা ও কিছু ঔষধ পাওয়া যায়। অবস্থা একটু খারাপ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য বা জেলা সদর হাসপাতালে যেতে হয়। জটিল রোগের জন্য সিলেট বা ঢাকায় যেতে হয়। তবে কিছু কিছু বাগানে নিজস্ব হাসপাতাল আছে। যেখানে গর্ভবতী মায়েদের ডেলিভারি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আছে। তবে সব বাগানে এই সুবিধা নেই।’
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন- ‘জেলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল এবং ছয়টি উপজেলা হাসপাতালে অন্যসব রোগীদের সাথে চা বাগানের শ্রমিক জনগোষ্ঠীর লোকজন সেবা নিয়ে থাকেন। তাদের ব্যাপারে আমরা খুব আন্তরিক।’
চা বাগানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা
চা বাগানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা কেমন? জানতে রাজনগর উপজেলার মাথিউড়রা চা বাগানের বিভিন্ন ঘুরে দেখা যায় অনেকের আছে স্বাস্ব্যসম্মত লেট্রিন। আবার বিশাল একটা অংশ খোলা পায়খানা ব্যবহার করেন। আবার অনেকে সরকার থেকে দেওয়া স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার না করে সেখানে ঘরের জিনিসপত্র রাখছেন।
মৌলভীবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহি প্রকৌশলী খালেদুজ্জামান আই নিউজকে বলেন- আমরা বাগানে বাগানে স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও ওয়াশব্লক দিয়েছি। সুপেয় পানির জন্য টিউবওয়েল দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজনগরের মাথিউরা চা বাগানে কথা হয় সেখানকার অধিবাসীদের সাথে। কনক গোয়ালা বলেন- ‘আজকাল আমাদের চা শ্রমিক পরিবারের অনেকেরই স্যানিটারি টয়লেট আছে। আবার সরকার থেকেও স্যানিটারি টয়লেট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সবাই অভ্যস্ত নয়। খোলা মাঠে কেউ কেউ পায়খানা করে। সময় লাগবে। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
মাথিউরা চা বাগানে সরকার থেকে দেওয়া স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন। ছবি : আই নিউজ
দেশে মোট চা বাগান
বাংলাদেশ চা-বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি। এরমধ্যে ৯০টি চা বাগান মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। এগুলোর ৮০ শতাংশ প্রথম শ্রেণীর বাগান। এছাড়া হবিগঞ্জ জেলায় ২৫টি, সিলেট জেলায় ১৯টি, চট্টগ্রাম জেলায় ২২টি, রাঙামাটি জেলায় ১টি, পঞ্চগড় জেলায় ৮টি এবং ঠাকুরগাঁও জেলায় ১টি চা বাগান রয়েছে।
তবে লেবার ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরির তথ্য অনুযায়ী দেশে ফাঁড়ি বাগানসহ মোট ছোটবড় চা বাগান ২৪০টি।
প্রতিশ্রুতি কতুটু বাস্তবায়ন হয়েছে
বিগত নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকার কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কতটুকু সেটা বাস্তবায়ন হয়েছে। জানতে চাইলে মোহন রবিদাশ আই নিউজকে বলেন- ‘নির্বাচনের প্রতিশ্রতি মানেই তো নির্বাচনি ইশতেহার। বিগত নির্বাচনে চা শ্রমিকদের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন একেবারে হয়নি তা বলা যাবেনা। ডাহা মিথ্যা কথা হবে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। চা শ্রমিকদের ভূমি ও ঘরের অধিকার এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষাক্ষেত্রে আরো বহুদূর হাটতে হবে, উন্নতি করতে হবে।
রামভজন কৈরি বলেন- ‘একমাত্র দল আওয়ামী লীগ যারা ইশতেহারে চা-শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করেছেন। দলটির চা শ্রমিকদের জন্য কিছু করা সদিচ্ছা আছে। এটা খুবই প্রশংসনীয়। শেখ হাসিনা আছেন বলেই শ্রমিকদের মধ্যে দুঃখ-বেদনা দানা বাঁধতে পারে না। নির্বাচনের আগে ঘর নিয়ে একটা নির্দেশনা বা ঘোষণা একটা কিছু দিক। তাতেই আমরা খুশি।
মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদ বলেন- ‘বঙ্গবন্ধু চা শ্রমিকদের ভোটের অধিকার দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ভাতের অধিকার দিয়েছেন। ২০০৯ সালে শ্রমিকদের মজুরি ছিলো ৩২ টাকা। এখন তারা পাচ্ছে ১৭০ টাকা। একসময় চা-বাগানে শিক্ষার হার ছিলো ২০ শতাংশের নীচে। এখন ৫০ শতাংশ হয়েছে। আমি নিজে আমার নির্বাচনী এলাকার চা শ্রমিকদের খুঁজ নেই। তাদের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা দিচ্ছি। জীবনমান কর্মসূচি প্রকল্পে শ্রমিক পরিবার ৫০০০ টাকা করে পাচ্ছে। রাস্তাঘাট, স্কুল, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা তাদের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর কোনো সরকার এটা করেনি, করবেওনা।’
চা বাগান ও চা শ্রমিক অধ্যুষিত সংসদীয় আসন মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ)। এই আসনের বিগত ৩০ বছর ধরে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ এমপি।
তিনি বলেন- ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি সহ নানান দাবি পূরণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আগামীতে এসব সহযোগিতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি চা শ্রমিকদের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার আরো নানামূখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আমি নিয়মিত বিভিন্ন বাগানের যাই। তাদের সমস্যা শুনি। আমরা তাদের সরকারি খরচে সুন্দর পাকা ঘর দিচ্ছি। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে অর্ধশতাধিক স্কুলে নতুন ভবনসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দিয়েছি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও হচ্ছে। বর্মাছড়া চা বাগানে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক বিল্ডিংসহ মাধ্যমিক স্কুল করে দিচ্ছি। এটার কাজ প্রায় শেষ।’
চা পাতা তুলছেন নারী চা শ্রমিকরা। ছবি : হাসানাত কামাল
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন- ‘চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শ্রমিকরা যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অত্যন্ত ভালবাসেন। তেমনি প্রধানমন্ত্রীও চা শ্রমিকদের ভালবাসেন। চা শ্রমিকদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চা শ্রমিকদের ভাগ্যের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। চা শ্রমিক সন্তানরা শিক্ষিত হচ্ছে। বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের তাদের চাকুরী হচ্ছে। চা শিল্পের প্রাণ হচ্ছে চা শ্রমিকরা। বিদ্যালয়বিহীন চা বাগানে বিদ্যালয় করা হবে। চা শ্রমিকদের জীবন ব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং আরো উন্নত হবে। সেভাবেই কাজ করছে সরকার।’
চা শ্রমিক সংক্রান্ত আরো খবর :
-
শ্রমিক বান্ধব গেজেট করার দাবিতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের
-
চা শ্রমিকদের দেয়া চুড়ি পড়ে বৈঠকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী
-
চাকরি পাচ্ছেন সেই ঢাবি ছাত্র সন্তোষ, সুখের আশায় চা শ্রমিক মা
ভিডিও
-
পাতা তুলতে তুলতে চা শ্রমিক নারীদের গান আর জীবনের কথা
-
চা শ্রমিক মা ছেলেকে পড়ালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
-
এক চা শ্রমিকের লেখাপড়ার গল্প চোখে পানি এনে দেয়
বাংলাদের চা বোর্ডের তথ্যমতে চা শিল্পের ইতিহাস
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’