Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০২ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ১ মে ২০২৫

শ্রীমঙ্গলে বিশাল চা শ্রমিক সমাবেশ

২০ মে’কে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি

মে দিবস উপলক্ষে সকল চা শ্রমিকদের অংশগ্রহণে বিশাল র‍্যালী। ছবি: আই নিউজ

মে দিবস উপলক্ষে সকল চা শ্রমিকদের অংশগ্রহণে বিশাল র‍্যালী। ছবি: আই নিউজ

আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিশাল চা শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় সংগঠনটির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার রাজঘাট চা বাগানের নাট মন্দির প্রাঙ্গণে চা শ্রমিক ইউনিয়ন বালিশিরা ভ্যালীর আয়োজনে চা শ্রমিক সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালীর আয়োজনে বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম, জেমস ফিনলে চা কোম্পানির চীফ অপারেটিং অফিসার তাহসিন আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি পংকজ কন্দ, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নৃপেন পাল, রাজঘাট চা বাগানের ডিজিএম মো. নুরু নবী প্রমুখ।

সমাবেশে পাঁচ সহশ্রাধিক চা শ্রমিক নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে চা শ্রমিক সমাবেশের উদ্বোধন করেন প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা। এর আগে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে চা শ্রমিকদের নিয়ে এক বিশাল র‍্যালী বের করা হয়। র‍্যালীটি বাগানের রাস্তা প্রদক্ষিন করে পুনরায় নাট মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। এসময় আলোচনা সভার শুরুতে চা শ্রমিকদের ঐতিহ্যবাহী নাচ পরিবেশন করা হয়। 

চা-শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো- চা শ্রমিক হিসেবে এদেশের চা শ্রমিকদের বসবাস দুইশত বর্ষ চলমান। যুগান্তকারী চা শ্রমিক জাতি একই বসতভীটায় বংশানুক্রমে জীবনধারন করে আসছে। বসতভীটার মালিকানা ব্যবস্থা প্রনয়ণ প্রয়োজন। সরকারী তত্তাবধানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন সম্ভবশিগ্র সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান প্রয়োজন। বর্তমান দেশের দ্রবমূল্যের উর্দ্ধগতির সাথে সংগতি রেখে চা শ্রমিকদের জীবন ধারনের জন্য নূন্যতম দৈনিক মজুরী চারশত টাকা ধার্য্য করা অতি প্রয়োজন। ইতিপূর্বে দেশের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় এনটিসি মালিকাধীন চা বাগান, দেউন্দি টি কোম্পানী, বুরজান টি কোম্পানীসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন আরো অনেক চা বাগান বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকদের দৈনিক বেতন, রেশন, বোনাস, পিএফ অর্থ, বকেয়া পাওনা অপরিশোধীত আছে, চা শ্রমিকদের এই করুন পরিনতি হতে উত্তোরন এবং চা শিল্প রক্ষার্থে, জরুরী ভিত্তিতে চা বাগানগুলো চালু করনে উদ্যোগ গ্রহন করা জরুরি।

দেশের ৫টি জেলা জুড়ে বিদ্যমান ২১টি উপজেলা অধ্যুসিত একালায় চা শ্রমিক সন্তাদের জন্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তাদের কর্মসংস্থান ও মেধা বিকাশের জন্য কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় নির্ধারীত স্থানে স্থাপন করা খুব জরুরি। শ্রম আইনে বিদ্যমান চা শ্রমিকদের জন্য নৈমিত্তিক ছুটি ধারা-১১৫, মজুরীসহ বাৎসরিক ছুটি ধারা-১১৭, শ্রমিক অবসর গ্রহন-গ্রাচুইটি প্রাপ্তি ধারা-২৮, বাসস্থান হতে উচ্ছেদ ধারা-৩২ সহ বিধৃত বৈষম্যমূলক বিধান সমূহ সংশোধন একান্ত প্রয়োজন। চা শ্রমিকদের বিলুপ্তপ্রায় সাহিত্য, সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে চা এর রাজধানী শ্রীমঙ্গল উপজেলায় একটি চা জনগোষ্ঠী শিল্প কলা একাডেমি স্থাপন করা প্রয়োজন। চা শ্রমিক সন্তানদের এদেশের প্রতিটি সরকারী প্রতিষ্ঠান দপ্তর বিভাগে যোগ্যতানুসারে চাকুরীতে যোগদানের বিশেষ নিদের্শনা প্রনয়ন জরুরি।

১৯২১ সালের ২০মে তৎকালীন বৃটিশ সরকার কর্তৃক চা শ্রমিকদের উপর পাশবিক নির্যাতন, নিপিড়ন ব্যাভিচারের প্রতিকারে মুক্তিকামী চা শ্রমিকদের নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ, নিরীহ মানুষদের নির্বাচারে চাঁদপুরের মেঘনার কূলে গুলি বর্ষন করে চা শ্রমিক হত্যাযজ্ঞে মেঘনার জল রক্তজবা হয়ে উঠা, সেই প্রানের আহুতি আজও অম্লান। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি প্রাপ্তীর জন্য বিগত সরকারের নিকট ইউনিয়ন কর্তৃক একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। যা এযাবৎ অকার্যকর। ২০মে’কে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা প্রয়োজন।

এদিকে চা শ্রমিক সমাবেশ শেষে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভা। সংগঠনের সহ সভাপতি পংকজ কন্দ   সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিটি ভ্যালীর সভাপতি সাধারণসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আই নিউজ/আরএ

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়