Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   আশ্বিন ৭ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সেনা কমকর্তা সেজে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন তিন প্রতারক

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিন প্রতারক। র‍্যাবের জালে ধরা পড়েছেন তাঁরা। তারা হলেন- মো. সামসুজ্জোহা ওরফে জুয়েল, শামীম হাসান তালুকদার ও আলমগীর হোসেন।

র‌্যাব বলছে, আটককৃতরা সেনাবাহিনী ও বিজিবিতে অফিস সহকারী, বাবুর্চি, কেরানি, মেসওয়েটারসহ বিভিন্ন বেসামরিক পদে চাকরির দেওয়ার নামে অর্ধশতাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছেন।

তাদের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর একটি ভুয়া পরিচয়পত্র, বিজিবির দুটি ভুয়া পরিচয়পত্র, তিনটি ভুয়া নিয়োগপত্র, ১৬ পাতা ব্যাংক স্টেটমেন্ট, একটি ব্যাংক চেক ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ছয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন। বুধবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে ওই তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।

র‌্যাব-১ অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, চক্রটির অর্ধশত মানুষের কাছ থেকে ২ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তারা সাধারণত দেশের উত্তর অঞ্চলের, বিশেষ করে লালমনিরহাটের অনেক ভুক্তভোগী পেয়েছি। এই চক্রে তারা তিনজনই সদস্য।

র‌্যাব বলছে, এই চক্রের মূল হোতা জুয়েল। তার নেতৃত্বে চক্রটি চাকরি দেওয়ার নামে অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যাদের বেশিরভাগই দেশের উত্তর অঞ্চলের দরিদ্র মানুষ।

প্রতারণা করে যেভাবে ধরা পড়লেন তাঁরা

জুয়েলদের প্রতারণার শিকার একজন হলেন মাস্টার্স পড়ুয়া সাজু মিয়া। তিনি পেশায় পাঠাও চালক। মোটরসাইকেলের সমস্যা সমাধানে দক্ষিণখান এলাকার একটি মেকানিকের দোকানে যেতেন। সেই দোকানের মেকানিকের মাধ্যমে পরিচয় হয় কথিত বিজিবি সদস্য সামসুজ্জোহা ওরফে জুয়েলের সঙ্গে। বিজিবি থেকে প্রেষণে র‌্যাবে কাজ করছেন জানিয়ে জুলেল সাজুকে চাকরির প্রলোভন দেখান। বিশ্বাস অর্জনের জন্য সাজুর সঙ্গে জুয়েলের চক্রের অন্য সদস্যদের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে সাক্ষাৎ করিয়ে দেন। এভাবে আস্থা অর্জন করে ভুয়া চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে প্রায় সাজুর কাছ থেকে সাড়ে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন জুয়েল।

এই একটা চাকরির আশায় বাড়ি-ঘর, জমি ও গোয়ালের গরু বিক্রি করে জুয়েলকে টাকা দেন সাজু। পরে বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

র‌্যাব-১ অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ২০১৫ সালের দিকে চক্রের অপর দুই সদস্যের আলমগীর ও শামীমের সঙ্গে জুয়েলের পরিচয় হয়। তারা দুজনেই কম্পিউটার প্রিন্ট, ফটোকপি দোকানের মালিক। তাদের দোকানে অনলাইনে চাকরির জন্য আবেদন করতে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমেই বিভিন্ন বাহিনী ও সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তথ্য সংগ্রহ করতেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত চাকরি প্রার্থীদেরকেই তারা প্রাথমিকভাবে টার্গেট করতেন। শামসুজ্জোহা ওরফে জুয়েল শুরু থেকেই নিজেকে বিজিবির সদস্য (হাবিলদার মেডি. অ্যাসিস্ট্যান্ট) হিসাবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।

ভুক্তভোগীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে বিশ্বাস অর্জন করতেন তারা। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী, বিজিবিতে অফিস সহকারী, বাবুর্চি, কেরানি, মেসওয়েটারসহ বিভিন্ন বেসামরিক পদে চাকরির জন্য পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা নিতেন। এরপর চাকরিপ্রার্থীদের মেডিক্যাল চেকআপ করার কথা বলে সেনাকর্মকর্তার পিএ পরিচয় দেয়া আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে চক্রের অপর সদস্য সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা (লে. কর্নেল) পরিচয় দেয়া শামীম হাসান তালুকদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে ঢাকা সেনানিবাসের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যেতেন।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী এলাকায় নেওয়ায় চাকরিপ্রার্থীরা বিশ্বাস ও আস্থা রাখতো। পরবর্তীতে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুয়া নিয়োগপত্র দিতেন, যাতে সেনাবাহিনী, বিজিবির মনোগ্রাম সম্বলিত বেসামরিক পদে চাকরির নিয়োগপত্র শিরোনাম লেখা। তবে এই নিয়োগপত্র নিয়ে সেনানিবাসে গেলে ভুক্তভোগীদের বলা হতো এটা ভুয়া নিয়োগপত্র।

র‌্যাব জানায়, জুয়েলের নামে অস্ত্র আইন, নারী নির্যাতন, প্রতারণা ও মাদকসহ দেশের বিভিন্ন থানায় আটটি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে তিনটিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

আইনিউজ/এসডি

আইনিউজ ভিডিও 

কৃষক ও ফিঙে পাখির বন্ধুত্ব (ভিডিও)

পোষ মানাতে হাতির বাচ্চাকে নির্মম প্রশিক্ষণ 

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ