Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   আশ্বিন ৭ ১৪৩২

আইনিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ১ এপ্রিল ২০২২
আপডেট: ১২:০০, ১ এপ্রিল ২০২২

উবার নিয়ে যত ক্ষোভ

বাংলাদেশে ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করা উবার রাইড অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যানবাহনের অভাব অনেকটা কমে গিয়েছিল রাজধানীতে। অ্যাপভিত্তিক বাইকও বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলো কিন্তু ধীরে ধীরে এর মাধ্যমেই সূচনা হয় যাত্রী ভোগান্তির। পুরো বিষয়টি উঠে আসে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

"এখন যখনি আমি উবার ব্যবহারের চিন্তা করি আমার কান্না পায়…তাদের সেবা সর্বকালের খারাপ পর্যায়ে! এবং আপনি যে সমস্যায় পড়বেন সেই অভিযোগও করতে পারবেন না"। মঙ্গলবার সকাল নয়টায় টানা ৪০ মিনিট ধরে উবারের গাড়ী পাওয়ার চেষ্টা করে সরকারি কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম এভাবেই তার ফেসবুক পাতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তার ফার্মগেটের বাসা থেকে র‍্যাডিসনে সরকারি একটি ওয়ার্কশপে যাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত একজন চালক রাজী হলো কিন্তু প্রায় তের কিলোমিটার দূরত্বের এ পথের ভাড়া এলো সাড়ে চারশো টাকা।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, উবার নিয়ে গত কিছুদিনের তার অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ।

"একবার একজন চালক এসে বললো তার ফোনে চার্জ শেষ তাই যা বিল দেখাচ্ছিল সেটি ক্যাশে টাকা দিতে হবে। বাধ্য হয়ে ডিসকানেক্ট করলাম। এতে করে অ্যাপে রাইড ক্যানসেল করায় আমার জরিমানা হলো। আবার একদিন একজন তিনি বাসার কাছে এসে অপেক্ষা করেছেন। অথচ আমি অ্যাপে দেখলাম তিনি ধারে কাছেই নেই"।

তিনি বলেন গন্তব্য পছন্দ না হলে চালকরা একটার পর একটা ক্যানসেল করতেই থাকে। আবার অনেকে অ্যাপের বাইরে টাকা দেয়ার শর্ত দেয়।

বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিংয়ে যেসব সার্ভিস আসে বিশেষ করে উবার ও পাঠাও বাইক ও গাড়ী চালকদের বিরুদ্ধে গত কয়েকমাসে এ ধরণের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

অথচ গ্রাহকদের পক্ষ থেকে অ্যাপে অভিযোগ দেয়ার নিয়ম থাকলেও তাৎক্ষনিক প্রতিকার চাওয়ার কোন সুযোগই নেই। আবার অ্যাপে অভিযোগ করলেও তার ভিত্তিতে কোন চালকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কোন নজির নেই।

যদিও রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের জন্য বিআরটিএ যে নীতিমালা করেছে তাতের যাত্রীর অভিযোগ জানানোর সুযোগ বাধ্যতামূলক।

স্বপ্ন দেখানো সার্ভিসের শুরু হয়েছিলো যেভাবে

আফরিনা হোসেন বেসরকারি চাকুরী করেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে যখন উবার যাত্রা শুরু করেছিলো তখন তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

"ওই সময়ে ঢাকায় ভালো বাস নাই। যেগুলো চলছে সেগুলো মেয়েদের চলাচল করা কত কঠিন সবাই জানে। তখন উবার আসায় এতো খুশী হয়েছিলাম। বাইকেই আসা যাওয়া করতাম," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ঢাকার ভয়াবহ গণপরিবহন সংকটের মধ্যে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপের মাধ্যমে ট্যাক্সি সেবাদানকারী কোম্পানি উবার যাত্রা শুরু করলে এভাবেই স্বস্তি পেয়েছিলো অসংখ্য মানুষ।

এমনকি উবারের কার্যক্রম শুরুর পর বিআরটিএ এর কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিলে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছিলো সামাজিক মাধ্যমে। যার জের ধরে সরকার তাৎক্ষনিক জানিয়েছিলো যে উবার বা এ ধরণের রাইডশেয়ারিং সার্ভিস বন্ধ হবে না। তবে তখন বলা হয়েছিলো শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে।

শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি 'রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭' এর অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

এ নীতিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় ওই বছরেই ২৮শে ফেব্রুয়ারি এবং কার্যকর হয়ে তেসরা মার্চ থেকেই।

কিন্তু এ নীতিমালার বেশিরভাগই কার্যকর হয়নি এবং এক পর্যায়ে বাইক ও গাড়ী চালকরা তাদের ইচ্ছেমত যাত্রী আনা নেয়া শুরু করে।

এমনকি অনেক চালক অ্যাপে না গিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাড়িয়ে যাত্রী সংগ্রহ করে নিজেদের পছন্দমতো ভাড়ায় পরিবহন শুরু করে।

ফলে নীতিমালা জারির তিন বছরের মাথায় এসে কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা।

শুরুর দিকে উবার ছাড়াও দেশে স্যাম, পাঠাও, আমার রাইড, মুভ, বাহন, চলো অ্যাপে, ট্যাক্সিওয়ালা, ওই খালি, ইজিয়ার, লেটস গো ইত্যাদি নামে বিভিন্ন কোম্পানি অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার কাজ শুরু করলেও অধিকাংশই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

নীতিমালায় যা যা আছে

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত রাখা হয়েছে নীতিমালায়।

এর মধ্যে আছে প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের মালিককে বিআরটিএতে তালিকাভুক্ত হতে হবে।

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস এলাকায় অফিস থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবতায় হলো অফিস তো দূরের কথা সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান উবারে যাত্রীদের সরাসরি অভিযোগ জানানোর কোন সুযোগই নেই।

যাত্রীর অভিযোগ জানানোর সুযোগ রাখতে হবে।

অ্যাপে এসওএস সুবিধা রাখতে হবে যাতে স্পর্শের সাথে সাথে চালক ও যাত্রীর লোকেশন ৯৯৯ নম্বরে চলে যায়।

অ্যাপে অভিযোগ দায়ের ও নিষ্পত্তির সুবিধা থাকতে হবে।

রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের কল সেন্টার প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে।

কিন্তু কার্যত এ ধরণের কোন কল সেন্টারই নেই।

ফলে যাত্রীরা যেমন গাড়ী পেতেও চালকের মর্জির ওপর নির্ভর করেন আবার গাড়ী বা বাইকে উঠেও অনেকে দুর্ব্যবহারের শিকার হন।

"আমি ঝিগাতলা থেকে পল্টনে আসছিলাম উবারের গাড়ীতে। চালক হাইকোর্টের সামনে এসে সামনে জ্যাম থেকে আর যাবেন না। কিন্তু সম্ভাব্য ভাড়া যা দেখাচ্ছিল সেই ভাড়া দাবি করেন। এ নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে অশ্লীল গালিগালাজ শুরু করলে আমি গাড়ী থেকে নেমে যেতে বাধ্য হই," বলছিলেন পেশায় শিক্ষিকা শামসুন্নাহার বেগম।

বিআরটিএ'র নিষ্ফল হুঁশিয়ারি

কানিজ মার্জিয়া ঢাকার বাইরে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মঙ্গলবার ঢাকার ইস্কাটনের মহিলা অধিদপ্তরে কাজ শেষে সদরঘাট যাওয়ার জন্য অ্যাপে বাইক খুঁজছিলেন তিনি।

একে একে নয়জন চালক ফোন করে শুরুতেই গন্তব্য জানতে চেয়েছেন তার কাছে। এবং সদরঘাট যাবেন শুনেই যাত্রা অনুরোধ ক্যানসেল করে দেয়।

"দশ নম্বর রাইডার এসে বললেন সদরঘাট যাই না। কিন্তু বাংলাবাজারে আমার নিজের কাজ আছে তাই নিলাম আপনাকে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যাত্রী অনুরোধ করে সেটি ক্যানসেল করলে ত্রিশ টাকা জরিমানা করে উবার কিন্তু চালক ক্যানসেল করলে যাত্রী কোন ক্ষতিপূরণ পান না।

এসব অভিযোগ ব্যাপকভাবে আসার প্রেক্ষাপটে গত বছর অক্টোবরে বিআরটিএ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে অ্যাপসে রাইড শেয়ারিং না করে চুক্তিভিত্তিক যাত্রী পরিবহন করলে সংশ্লিষ্ট চালক ও যাত্রীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এতে বলা হয় রাইড শেয়ারিং সেবার নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাড়ার বেশি নিলে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিআরটিএ।

এতে আরও বলা হয়েছিলো যে, "কতিপয় মোটরযান চালক নীতিমালার শর্ত পালন করছেন না। শর্ত পালন না করে চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা প্রদান ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, যা রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালার পরিপন্থী"।

কিন্তু বিআরটিএর নীতিমালা কিংবা এসব বিজ্ঞপ্তি গুরুত্বই পায়নি অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ও চালকদের কাছে।

ফলে এখন ঢাকার মোড়ে মোড়ে চোখে পড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষারত বাইক রাইডারদের সাড়ি যারা চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করে যা এ সংক্রান্ত নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

যত অভিযোগ যাত্রীদের

রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নিয়ে যাত্রীদের তরফ থেকে আসা অভিযোগগুলো হলো:

১.গন্তব্য শুনে অনুরোধ ক্যানসেল করে দেয়া

২.চালকদের পছন্দনীয় গন্তব্য হলেই কেবল যাত্রী পরিবহন করা

৩.বিকাশে বা কার্ডে টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করা।

৪.যাত্রীকে অনুরোধ ক্যানসেল করতে বাধ্য করা কিন্তু সেই ক্যানসেলের জন্য যাত্রীকেই জরিমানা করা

৫. দরকষাকষি করে যাত্রা করা

৬. অ্যাপে যেতে অপারগতা প্রকাশ করা

৭. নারী যাত্রীদের সাথে অভব্য আচরণ

৮. সহজ পথে না গিয়ে গুগল ম্যাপের কথা বলে নানা জায়গায় ঘুরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো

চালকরা যা বলছে

উবার নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা মিতু মরিয়ম বলছেন তিনি নিজেই শেষ পর্যন্ত যে চালককে পেয়েছিলেন তাকেই জিজ্ঞেস করেছিলেন যে কেন তারা যাত্রীদের সাথে এমন আচরণ করে বা গন্তব্যে যেতে চায় না।

"আমি গাড়ীতে উঠেই জিজ্ঞেস করেছি যে আপনার তো গন্তব্য জানতেই চাওয়ার কথা নয়। কিন্তু সেটি কেন করেন। জবাবে তিনি বলেছেন অ্যাপে গেলে সার্ভিস দাতা প্রতিষ্ঠান ২৮শতাংশ টাকা কেটে নেয় বলে তারা অ্যাপে যেতে চান না"।

রাইডশেয়ারিং গাড়ী চালান মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, "জ্যামের কারণে অনেক জায়গায় যাই না। আর যা ইনকাম হয় তার ৩০ ভাগই যদি কোম্পানি নেয় তাহলে কেন অ্যাপে চালাবো"।

বাইক চালক আব্দুল আলিম বলছেন বিকাশে টাকা নিলে সেটা কবে তারা পাবেন তার নিশ্চয়তা নেই। আবার অ্যাপে গেলে লাভ কম।

তাই চুক্তি ভিত্তিতে যেতে পছন্দ করেন তিনি।

"নিরাপত্তার ব্যাপার আছে। যে এলাকা চিনি না সেখানে যাই না। আর চুক্তিতে গেলে কোন ঝামেলা নাই"।

বিআরটিএ যা বলছে

রাইডশেয়ারিং সার্ভিসে যাত্রীদের হেনস্থার শিকার হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়ে চরম পর্যায়ে আসলেও বিআরটিএ বলছে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলেই কেবল তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন।

সংস্থাটির পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বিবিসি বাংলাকে বলছেন যে তারা সার্ভিস দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রায়শই মতবিনিময় করেন।

"আমরা তাদের বলি এসব সমস্যার সমাধান করতে। কিন্তু সমস্যা হলো এগুলো তো দেখা যায় না। তবে কেউ সুনির্দিষ্ট বললো আমরা অবশ্যই দেখবো"।

কী বলছে উবার?

যাত্রীদের নানা অভিযোগ নিয়ে বিবিসির প্রশ্নের জবাবে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছে উবার।

এতে বলা হয়েছে, "যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষা এবং ট্রিপ বাতিলের বিষয়টি যাত্রীদের কাছে দেয়া আমাদের যে অঙ্গীকার তাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং আমরা এসব বিষয়ে কাজ করছি।"

"ক্যানসেলশেন চার্জ তখনি নেয়া হয়, যখন চালক ইতোমধ্যেই যাত্রী তোলার পথে রওনা হয়েছেন।"

উবার আরও বলেছে, "যদি চালক ক্যানসেল করে, তাহলে যাত্রী অ্যাপ থেকে তার রিফান্ড দাবি করতে পারে। আমরা অ্যাপের বাইরে (চুক্তিভিত্তিক) যাত্রী পরিবহনকে নিরুৎসাহিত করি কারণ এতে চালক ও যাত্রীর জবাবদিহিতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকে না।"

সম্প্রতি বিআরটিএ রাস্তা থেকে ডেকে যাত্রী তোলার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেছে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আইনিউজ/এমজিএম

 

আইনিউজ ভিডিও 

কৃষক ও ফিঙে পাখির বন্ধুত্ব (ভিডিও)

পোষ মানাতে হাতির বাচ্চাকে নির্মম প্রশিক্ষণ 

হাতির আক্রমণে হাতি হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু 

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ