Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩২

সীমান্ত দাস

প্রকাশিত: ২১:২৭, ৫ জুলাই ২০২২

কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার নিয়ম

কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরি। ছবি- আইনিউজ

কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরি। ছবি- আইনিউজ

ঈদুল আজহার আর বেশিদিন বাকি নেই, এখন সারাদেশেই ব্যস্ততা কোরবানির পশু নিয়ে। দেশের প্রায় সকল শহর-বন্দর, গ্রামে-গঞ্জে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। তবে এজন্য আমাদের জেনে নেওয়া উচিত কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার নিয়ম। কোরবানির জন্য সুস্থ গরু কিনতে না পারলে সে ক্ষতি দীর্ঘদিন বাস করতে পারে আপনার শরীরে, এমনকি কোরবানির জন্য সুস্থ গরু কেনার নিয়ম না জেনে অসুস্থ গরু কিনলে আপনার কোরবানিও কবুল হবে না।

কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনা তেমন জটিল কাজ নয়। শুধু কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখলেই আপনি কোরবানির পশুর হাট থেকে খুঁজে পেতে পারেন আপনার কাঙ্খিত কোরবানির সুস্থ গরু। কিন্তু হাটে বিক্রির জন্য যেসব গরু নিয়ে আসা হয়, সেগুলোর সবই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোরবানির উপযুক্ত সুস্থ গরু নয়। কারণ হাটে নিয়ে আসা গরুগুলোর মধ্যে রোগাক্রান্ত অথবা ক্ষতিকর রাসায়নিক ও ওষুধ খাওয়ানো গরুর সংখ্যাও কম না।

কোরবানির জন্য সুস্থ গরু কিনতে না পারলে-

ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা গরুতে এসব ক্ষতিকর উপাদান রান্নার পরেও মাংসে থেকে যেতে পারে। আর সেই মাংস খেলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া, কোরবানির অনুপযুক্ত গরু কোরবানি দিলেও সেই কোরবানি কবুল হয় না। তাই কোরবানি কবুল করতে এবং স্বাস্থ্যকর নিরাপদ মাংস নিশ্চিতের জন্য সুস্থ গরু চেনাটা খুব জরুরি।

কোরবানির ঈদ এলেই অনেক অসাধু ব্যবসায়ী গবাদি পশু কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের এ ধরনের চিন্তার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় সাধারণ মানুষকে। তারা বেশি দামে পশু বিক্রি করতে নানা ধরনের পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। 

বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ইনজেকশন ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে এসব পশুকে মোটাতাজা করে থাকেন এই অসাধু ব্যবসায়ীরা, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ গরুর মাংস খেলে শরীরে পানি জমে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, মূত্রনালি ও যকৃতের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু বিশেষজ্ঞরা গরু কেনার সময়ে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন-

১. রাসায়নিক বা ওষুধ দেওয়া গরুর মাংসপেশি থেকে শুরু শরীরের অন্য অঙ্গগুলো অস্বাভাবিকভাবে ফোলা থাকবে। শরীরে পানি জমায় বিভিন্ন অংশে চাপ দিলে সেখানে গর্ত হয়ে দেবে যাবে এবং পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় নেবে।

২. অতিরিক্ত ওজনের কারণে এসব গরু স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা কিংবা নাড়াচাড়া করতে পারে না। ফলে শান্ত বা স্থির হয়ে থাকে।

৩. সুস্থ গরুর গতিবিধি চটপটে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বুঝে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কাজ করে, যেমন কান ও লেজ দিয়ে মশা মাছি তাড়ানো। কিন্তু এসব গরু ভীষণ ক্লান্তিতে ঝিমাবে।

৪. এসব গরুর শরীরের অঙ্গগুলো নষ্ট হতে শুরু করায় এগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হবে। ফলে মনে হবে তারা যেন হাঁপাচ্ছে।

৫. সুস্থ গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে হয় সেটা টেনে খাবে নয়ত জাবর কাটবে। কিন্তু অতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়া গরু কিছু খেতে চাইবে না। সঙ্গে মুখ থেকে প্রতিনিয়ত লালা ঝরবে।

৬. অসুস্থ গরুর নাক থাকবে শুকনা। কিন্তু সুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশটি ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে থাকবে।

৭. সুস্থ গরুর শরীরের রঙ উজ্জ্বল থাকবে। পিঠের কুঁজ মোটা, টানটান ও দাগমুক্ত হবে।

৮. সুস্থ গরুর উরুর মাংস থাকবে শক্ত। অন্যদিকে, অসুস্থ গরুর পা হবে নরম ও থলথলে।

৯. গরুর শরীরের তাপমাত্রা হতে হবে স্বাভাবিক। গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ।

১০. সুস্থ গরুর চামড়ার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাঁজরের হাড় স্পষ্ট বোঝা যাবে।

এছাড়াও, কোরবানির জন্য গরুটিকে হতে হবে সম্পূর্ণ সুস্থ। এজন্য গরুর বিভিন্ন অঙ্গে কোন ক্ষত আছে কি না তা দেখে নিতে হবে। গরুর বয়স ন্যূনতম দুই বছর হলেই তা কোরবানির জন্য উপযুক্ত। এক্ষেত্রে গরুর বয়স যাচাই করার জন্য গরুর দাঁত দেখা যেতে পারে। গরুর নিচের পাটিতে যদি দুধ দাঁতের পাশাপাশি সামনে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেটি কোরবানির উপযুক্ত।

গাভি কোরবানির দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোরবানির আগে অবশ্যই নিশ্চিত হবে যে সেটি গর্ভবতী কি-না। কারণ কোনো অবস্থাতেই গর্ভবতী গাভি কোরবানি দেওয়া যাবে না। সাধারণত গর্ভবতী গাভীর পেট ও ওলান স্ফীত হয়ে থাকে।

প্রতিটি মুদ্রারই এপিঠ-ওপিঠ থাকে, যেমন আলোর বিপরীতে থাকে অন্ধকার। এতোক্ষণ আমরা জানলাম কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়, তবে আমাদের অবশ্যই জানা উচিত এর বিপরীত দিকও। কোরবানির জন্য উপযুক্ত নয় এবং কৃত্রিমভাবে নিয়ম না মেনে মোটাতাজা করা গরুর কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। এসব অবশ্যই মনে রাখা উচিত। কোরবানির জন্য গরু কিনতে গিয়ে যদি আপনার পছন্দ করা গরুর মধ্যে এসব বৈশিষ্ট্য দেখেন তাহলে বুঝে নিতে হবে যে, গরুটি কোরবানির পশু হিসেবে কেনার উপযোগি নয়। এভাবেই বেঁছে বেঁছে ছাকন পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি কোরবানির পশুর হাট থেকে খুঁজে পাবেন সুস্থ গরু।

চলুন জেনে নেয়া যাক, কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা কোরবানির পশু চেনার উপায়-

আঙুলের চাপ

কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানের মাংস স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মোটা গবাদি পশুর ক্ষেত্রে দ্রুতই মাংস স্বাভাবিক হয়।

দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ

কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ গরু দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। একটু হাঁটলেই হাঁপায়। খুবই ক্লান্ত দেখায়।  ইনজেকশন দেয়া গরুর রানের মাংস নরম হয়। স্বাভাবিকভাবে যেসব গরু মোটা হয় সেগুলোর রানের মাংস শক্ত হয়।

লালা বা ফেনা

যেসব গরুর মুখে কম লালা বা ফেনা থাকে সেই গরু কেনার চেষ্টা করুন। এগুলো কৃত্রিম উপায়ে মোটা করা পশু নয়।

খুব শান্ত

স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেয়া গরু হবে খুব শান্ত। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারবে না। পশুর ঊরুতে অনেক মাংস মনে হবে।

শরীরে পানি জমে

অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরে পানি জমে মোটা দেখাবে। আঙুল দিয়ে গরুর শরীরে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে থাকবে।

খাবার 

গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি নিজ থেকে জিব দিয়ে খাবার টেনে নিয়ে খেতে থাকে তবে বোঝা যাবে গরুটি সুস্থ। যদি অসুস্থ হয়, তবে সে খাবার খেতে চায় না।

নাকের ওপরটা ভেজা

সুস্থ গরুর নাকের ওপরটা ভেজা ভেজা থাকে। সুস্থ গরুর পিঠের কুঁজ মোটা ও টান টান হয়।

পা ও মুখ ফোলা

বিশেষ করে গরুর পা ও মুখ ফোলা, শরীর থলথল করবে, অধিকাংশ সময় গরু ঝিমুবে, সহজে নড়াচড়া করবে না। এসব গরু অসুস্থতার কারণে সবসময় নীরব থাকে। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। খাবারও খেতে চায় না।

হাটে যাওয়ার পর উশকোখুশকো চামড়ার ওপর দিয়ে হাড় বেরিয়ে পড়া পশু কিনতে চেষ্টা করুন। এগুলো কোনোরকম কৃত্রিম উপায় ছাড়াই বাজারে সরবরাহ করা হয়। চকচক করা গরু বা ছাগলকে দেয়া হয় ইনজেকশন।

আইনিউজ/এসডি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়