মাওলানা মুনীরুল ইসলাম
আপডেট: ২৩:৩০, ১৫ অক্টোবর ২০২১
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলাম
মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রাথমিক বিষয়ই হলো তার জানমালের নিরাপত্তা ও বেঁচে থাকার অধিকার। অন্যকে নিরাপদ রাখা ও বেঁচে থাকতে দেওয়া অন্যতম নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটি ইসলামের শিক্ষা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত ও সহিংসতাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। মানবতাবিরোধী সব ধরনের অন্যায় হত্যাযজ্ঞ, রক্তপাত, অরাজকতা ও অপকর্ম প্রত্যাখ্যান করেছে। সৎ কর্মে সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছে এবং জুলুম-নির্যাতনমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে মানুষের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চেতনা এবং অর্থনৈতিক দর্শন ও অপরাধ দমনের কৌশল ইসলামকে দিয়েছে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা। কিন্তু শান্তির ধারক-বাহক জনগণের বিরুদ্ধে সব সময়ই অশান্তিকামী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী দুর্বৃত্তরা সুযোগ খুঁজতে থাকে। সুযোগ পেলেই তারা নিরীহ সাধারণ জনতার ওপর অন্যায় আক্রমণ করে বসে। ইসলাম কখনোই তাদের প্রশ্রয় দেয় না।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, আল্লাহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা মায়েদা :৬৪)।
ইসলাম বিশ্বজনীন শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবজাতির জন্য কল্যাণকামী পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ‘ইসলাম’ মানে আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মাধ্যমে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করা।
ইসলামপ্রিয় মুসলমানের পরিচয় দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে’ (বুখারি ও মুসলিম)। তাই পৃথিবীতে সত্যিকারার্থে সত্য ও ন্যায়নীতির বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বজায় রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরিহার্য কর্তব্য এবং ইমানি দায়িত্ব। সুতরাং মানবসমাজে কোনো রকম নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, উগ্রতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর এতে বিপর্যয় ঘটাবে না।’ (সূরা আরাফ : ৫৬)
সমাজ জীবনে নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস দমনে ইসলাম অনুপম দিকনির্দেশনা দিয়েছে এবং সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধে কঠোর শাস্তি আরোপ করেছে। ইসলামের আলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচলিত আইনে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের উপযুক্ত ন্যায়বিচার করা হলে আর কেউ নাশকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সাহস পাবে না। পবিত্র কোরআনে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকাণ্ডকে মহাঅপরাধ সাব্যস্ত করে কঠোর শাস্তির বিধান ঘোষিত হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কোনো মুমিনকে হত্যা করা কোনো মুমিনের কাজ নয়; তবে ভুলবশত করলে তা স্বতন্ত্র।...কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ীভাবে থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হবেন, তাকে অভিশম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সূরা নিসা : ৯২-৯৩)।
এখন সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সংঘাতমুক্ত সমাজের প্রয়োজনে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ইসলামের শান্তিপ্রিয় ও জনহিতকর কল্যাণকামী নৈতিক আদর্শের চর্চা সময়ের দাবি। মানুষের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও জানমালের নিরাপত্তা বিধানে ইসলামের আদর্শ অনন্য ও কালজয়ী। ইসলামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থার কোনো স্থান নেই। ইসলামের যুদ্ধনীতি প্রতিরক্ষামূলক, আক্রমণাত্মক নয়, এমনকি প্রতিশোধমূলকও নয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনও একজন নিরপরাধ মানুষকে প্রকাশ্যে বা গোপনে হত্যা করেননি। শত অত্যাচার ও নির্মম নির্যাতন সহ্য করেও তিনি কখনও কঠোরতা, বাড়াবাড়ি বা গোঁড়ামির পরিচয় দেননি, বরং দীন প্রচারের ক্ষেত্রে চরমপন্থা অবলম্বনের বিরুদ্ধে ইসলামের সুমহান আদর্শ সমরনীতি ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা কখনও আগে অস্ত্র উত্তোলন করো না বা অস্ত্রের ভয়ভীতিও প্রদর্শন করো না।’
ইসলাম ইচ্ছাকৃতভাবে মানবসন্তানকে হত্যা করা কঠোর ভাষায় নিষিদ্ধ করেছে। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা, তাদের জানমালের ক্ষতিসাধন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করাকে কবিরা গুনাহ আখ্যায়িত করে।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নরহত্যা বা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করা হেতু ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সূরা মায়েদা :৩২)।
মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না’ (সূরা বনি ইসরাইল :৩৩)।
হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা’ (তিরমিজি)।
তাই দুনিয়াতে সুখ-শান্তিময় ও নিরাপদ বসবাসের জন্য এবং আখেরাতে অশেষ কল্যাণপ্রাপ্তির জন্য ধ্বংসাত্মক এই সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে আসতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
মাওলানা মুনীরুল ইসলাম, ধর্মীয় গবেষক
সূত্র: সমকাল
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের
- রিজেন্ট সাহেদ মৌলভীবাজারে!
- ‘মে মাসের শেষের দিকে করোনা চরম পর্যায়ে যেতে পারে’