নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট: ১৮:৫৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগে বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জে জামায়াতের প্রভাব

চতুর্থধাপের ইউপি নির্বাচনে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে জয়ী জামায়াতের নেতারা।
স্থানীয়রা জানান, প্রকাশ্যে তেমন কোনো তৎপরতা না থাকলেও গ্রামগঞ্জে নানা কৌশলে সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত। অন্য দলগুলোর রাজনৈতিব কার্যক্রম খুব একটা না থাকার সুযোগে তৃণমূলে শক্তি সঞ্চয় করছে ধর্মভিত্তিক দলটি।
সিলেটের বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে স্থানীয় নির্বাচনে দেখা গেছে জামায়াতের নেতাদের প্রভাব। ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীদের হারিয়ে তাঁরা জয়ী হয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী দলের নেতাদের জয়ের অন্যতম একটি কারণ।
গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার নিয়ে সিলেট-৬ সংসদীয় আসন। এ আসনে বরাবরই দেখা গেছে আওয়ামী লীগের দাপট। গত ৩ বছর থেকে সিলেট-৬ সংসদীয় আসনের এমপি পদে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি দেশের সাবেক শিক্ষামন্ত্রীও।
তবে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাব থাকলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তা দেখা যায়নি এবার। আওয়ামী লীগের মধ্যে বিদ্রোহীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেই নির্বাচনে লড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে আওয়ামী লীগের এই অন্তর্দ্বন্দ জন্ম দিয়েছে তৃতীয় দলের ফায়দা লুটার, সেই তৃতীয় দলটিই জামায়াত।
গত ২৬ ডিসেম্বর সারাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এতে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের ২০ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগ লড়তে পারেনি জামায়াতের বিরুদ্ধে
বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে অনুষ্ঠিত ২০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্যে মাত্র ৭ ইউনিয়নে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীরা। বাকিগুলোতে হার। নৌকার যেসব প্রার্থী হেরেছেন তাদের মধ্যে ৩ জন নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন। তবে চার ইউনিয়নে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন জামায়াত নেতারা।
জামায়াতের নেতারা যে শুধু জয়ী হয়েছেন এটিই নয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দীতাই করতে পারেননি। গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াত নেতা এম আব্দুর রহিম। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম ৪৭৮ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত?
গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ও গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্বের কারণে এখানে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে জামায়াত। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন- এমন অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় অনেকে বলছেন, প্রকাশ্যে তেমন কোনো তৎপরতা না থাকলেও গ্রামগঞ্জে নানা কৌশলে সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত। অন্য দলগুলোর রাজনৈতিব কার্যক্রম খুব একটা না থাকার সুযোগে তৃণমূলে শক্তি সঞ্চয় করছে ধর্মভিত্তিক দলটি।
ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের থামাতে না পারার খেসারতও আওয়ামী লীগকে দিতে হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরেই একাধিক ভাগে বিভক্ত। স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) নুরুল ইসলাম নাহিদ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও ছিলেন। টানা তিন মেয়াদের এমপিও তিনি। তবে এলাকায় তার অবস্থান অনেকটাই নড়বড়ে।
নাহিদ মন্ত্রী থাকার সময়েই গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দেয়। গত সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সিলেটের প্রভাবশালী নেতা সারোয়ার হোসেন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ ও সারোয়ার হোসেন। ফাইল ছবি
এই এলাকায় আওয়ামী লীগ নাহিদ ও সারোয়ার গ্রুপে বিভক্ত। এ ছাড়া আছে উপদলীয় কোন্দল। বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম পল্লব নাহিদ বিরোধী বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। গোলাপগঞ্জেও রয়েছে এমন উপদলীয় কোন্দল। ইউপি নির্বাচনে এই কোন্দলের প্রভাব পড়েছে।
পুরো সিলেট বিভাগে নৌকাডুবি
চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গত রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সিলেট বিভাগের নয়টি উপজেলার ৮১টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হেরেছে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীরা।
এসব ইউনিয়নের ৪৭টিতে বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র (বিএনপি), জামায়াত, জাপার প্রার্থীদের দাপটে নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে।
প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, চারটিতে আওয়ামী লীগ এবং তিনটিতে স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। রাজনগর উপজেলার আট ইউনিয়নের চারটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, তিনটিতে আওয়ামী লীগ এবং একটিতে স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
হবিগঞ্জের লাখাই ও বানিয়াচং উপজেলার ২০ ইউনিয়নের ১১টিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নৌকার বিজয় এসেছে ৩টি ইউনিয়নে। বাকি ৭টির মধ্যে আওয়ামী লীগের দুটিতে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র), দুটিতে জামায়াত (স্বতন্ত্র), দুটিতে বিএনপির (স্বতন্ত্র) ও এক প্রবাসী প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। গোলাপগঞ্জের চারটিতে আওয়ামী লীগ, ২টিতে বিদ্রোহী, ২টিতে জামায়ত ও দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন।
সুনামগঞ্জের তিন উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রতীক নৌকা জয় পেয়েছে সাতটিতে। আর ৯টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, চারটিতে বিএনপি এবং একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
আইনিউজ/এসডি
দেখুন আইনিউজের ভিডিও খবর
মাইকে ঘোষণা দিয়ে মৌলভীবাজারের সরকার বাজারে শতশত মানুষের সংঘর্ষ
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাগাবালায় পুননির্বাচন চান আওয়ামী লীগসহ তিন প্রার্থী
রাজনগর উপজেলার তাহার লামুয়া নতুন ভোট কেন্দ্র, ভোট দিয়ে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে হবে মেডিকেল কলেজ : মন্ত্রী
গ্রিসে পাঁচ বছরের ভিসা পাবে বাংলাদেশিরা
ঘুরে আসুন মৌলভীবাজারের পাথারিয়া পাহাড়
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- দুলাভাইয়ের ধর্ষণের শিকার শ্যালিকা