Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০৯ মে ২০২৫,   বৈশাখ ২৬ ১৪৩২

আই নিউজ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১৩, ১০ এপ্রিল ২০২৪

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন মৌলভীবাজারের যেসব জায়গায়

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের পুরোদমে ছুটি। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ঈদের জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের পরপর সবাই পরিবার-বন্ধুদের নিয়ে বের হয়ে যাবেন ঘুরার উদ্দেশ্যে। এরিমধ্যে অনেকে ঠিক করে ফেলেছেন কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন। আবার অনেকে এখনো ভাবছেন কোথায় যাওয়া যায়।

চলুন এই প্রতিবেদনে দেখে নেওয়া যাক, ঈদের ছুটিতে পর্যটন সমৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলার কোন কোন জায়গায় ঘুরে আসা যায় পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে। 

শ্রীমঙ্গলের দার্জিলিং টিলা 
শ্রীমঙ্গলে অনেকেই ছুটে আসে চা বাগান দেখার জন্য। অনেকে শুধু চা-বাগান দেখার জন্য ছোট একটি যানবাহন নিয়ে ছুটে চলেন এক বাগান থেকে আরেক বাগানে। বিশেষ করে যারা দৃষ্টিজুড়ে শুধু সবুজের সমারোহ দেখতে চান, তাঁরা চাইলে যেতে পারেন এমআর খান চা-বাগানের দার্জিলিং টিলায়। দেখতে অনেকটা দার্জিলিংয়ের চা-গানের মতো। তাই নাম দেওয়া হয়েছে দার্জিলিং টিলা নামে।

এমআর খান চা-বাগানে যেতে হলে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রোড পেট্রলপাম্প চত্বর থেকে রাধানগর হয়ে মহাজেরাবাদের সিএনজি অটোরিকশায় উঠে এমআর খানের রাস্তায় নেমে এক থেকে দেড় কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। আর রিজার্ভ নিলে এমআর খানের দার্জিলিং টিলায় সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে। শ্রীমঙ্গল থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ 
বীরশ্রেষ্ট সিপাহী হামিদুর রহমান ১৯৫৩ ইংরেজী সনের ২ ফেব্রুয়ারী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জনাব আক্কাস আলী একজন দরিদ্র কৃষক এবং মা গৃহিনী কায়সুন্নেছা। বীর শ্রেষ্ট সিপাহী হামিদুর রহমান১৯৭১ সনে আনসার বাহিনীতে অল্প সময়ের জন্য চাকুরী করেন এবং ২ ফেব্রুয়ারী ১৯৭১ খ্রি: তৎকালীন সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ১ ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। সাহসী এ সৈনিক মাতৃভূমির স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন অপারেশনে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। 

১৯৭১ সনের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে মৌলভীবাজার জেলাস্থ কমলগঞ্জ উপজেলার চা বাগান বিস্তৃত ধলই সীমান্ত চৌকিতে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাহিনীকে পরাস্থ করার উদ্দেশ্যে সহযোদ্ধাসহ তিনি সশস্ত্র আক্রমন চালান। ধলই সীমান্তে শত্রু সেনা চৌকির সন্মুখ যুদ্ধে অমিত সাহসে চৌকির ৫০ গজের মধ্যে পৌছেঁ যান এবং বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে উক্ত সীমান্ত চৌকি ও সংলগ্ন এলাকা মুক্ত করেন এবং সেখানেই শত্রু সেনার বুলেট বিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে এই বীর সেনানীর অবদানের স্বীকৃতি সরূপ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানকে প্রতিবেশী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর জেলাধীন আমবাসা গ্রামে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।  সম্প্রতি তাঁর দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে এনে ঢাকাস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে এ উপজেলায় যাতায়াতের জন্য সড়ক ও রেল পথ দিয়ে সহজে যাতায়াত করা য়ায় । সড়ক পথ হিসেবে ঢাকা থেকে সরাসরি উল্লেখ্যযোগ্য বাস সার্ভিস পার্শ্ববর্তী শ্রীমংগল উপজেলায় চালু আছে। শ্রীমংগল থেকে লোকাল সার্বিসে (বাস/সিএনজি) ১৬ কি:মি: পথ অতিক্রম করে পূর্বদিকে কমলগঞ্জ সদরে আসা যায় । অপরদিকে ঢাকা থেকে রেল পথে ভানুগাছ এবং শমসেরনগর রেলোয়ে ষ্ষ্টেশনে অবস্থান করতে হয় । উক্ত স্থান হতে স্থানীয় ভাবে সিএনজি/বাস যোগে দর্শনীয় স্থান সমুহে যাতায়াত করা যায় ।

চা জাদুঘর 
চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত টি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাউয়াছড়া বনে বিধ্বস্ত হওয়া একটি যুদ্ধবিমানের অংশ বিশেষসহ ব্রিটিশ শাসনামলে চা বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ব্রিটিশ বাংলোয় ব্যবহৃত শতাধিক আসবাপত্র, চা প্রসেসিং যন্ত্রপাতি, চা বাগানের ম্যানেজার ও চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত জিনিস, প্রাচীন রৌপ্য ও তাম্য মুদ্রাসহ বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন স্থান করে নিয়ে চা জাদুঘরটিতে।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ভানুগাছ সড়কের পাশে অবস্থিত ‘টি রিসোর্ট অ্যান্ড টি মিউজিয়াম’। রোববার ১১ জুন দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টি মিউজিয়ামের চারটি কক্ষে দেড়শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা স্মারকের মাধ্যমে।

চারটি কক্ষের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় কক্ষটি হচ্ছে প্রথমটি। এ কক্ষের বড় একটি অংশজুড়ে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত একটি কাঠের চেয়ার এবং একটি টেবিল।

উদ্বোধনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা টি মিউজিয়াম দেখতে আসেন। টি মিউজিয়ামের টিকিট কাউন্টারের সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘরটি।

জনপ্রতি প্রবেশ ফি ২০ টাকা দিয়ে যে কেউ প্রবেশ করতে পারেন এখানে। আরও জানা যায়, ছুটির দিনে এই জাদুঘরে প্রায় অর্ধশত পর্যটক আসেন। অন্যান্য দিনে দর্শনার্থী আসেন, তবে সংখ্যায় কিছুটা কম।

মাধবপুর লেক
মাধবপুর হ্রদ সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম জলাধার। বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষনগুলোর মধ্যে এই হ্রদটি অন্যতম। এই হ্রদটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখলা এলাকায়। কমলগঞ্জ উপজেলা সদরের ৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)-র সত্ত্বাধীন মাধবপুর চা-বাগানের ১১ নম্বর সেকশনে (পাত্রখলা) এর অবস্থান। এই স্থানটি জেলা শহর মৌলভীবাজার থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র শ্রীমঙ্গল থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে। চা বাগানে চাষের ও অন্যান্য বিভিন্ন কারণে ব্যবহারের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসব অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ অধিক হলেও ঢালু ভূমির কারণে পানি অধিক সময় অবস্থান করেনা বিধায় পানির প্রয়োজনে বাগান কর্তৃপক্ষ ১৯৬৫ সালে বাগানের মধ্যস্থিত তিনটি টিলাকে বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে রেখে গড়ে তোলেন মাধবপুর হ্রদ। 

মাধবপুর হ্রদটির আয়তন প্রায় ৫০ একর এবং দৈর্ঘ্যে ৩ কিলোমিটার; প্রস্থ স্থান বিশেষে ৫০ হতে ৩০০ মিটার। এখানে হ্রদের পানিতে রয়েছে নীল পদ্ম আর বেগুনী শাপলা; দেখা যায় গোলপাতা আর শালুকের ঝাড়। টিলার ঝোপঝাড়ে আছে নানা বর্ণের বুনো ফুল, যাদের মধ্যে ভাঁট ফুলই প্রধান। চা বাগানের মধ্যে বলে প্রাকৃতিক গাছের পরিমাণ স্বল্প; দেখা মেলে ছায়া বৃক্ষের। হ্রদের জলে দেখা মেলে বিভিন্ন জাতের হাঁস, সরালি, পানকৌড়ি, জলপিপি প্রভৃতি জলচর ও পরিযায়ী পাখির।

চা বাগানের মধ্যে অবস্থিত বলে এখানে আসার সরাসরি কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই; সিলেট বা মৌলভীবাজার হয়ে এখানে আসতে হয়। মাধবপুর হ্রদে যেতে হলে প্রথমে ঢাকা থেকে সড়ক বা রেলপথে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল হয়ে কমলগঞ্জে আসতে হবে; এরপর কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমুহনী হয়ে চা বাগানের মধ্য দিয়ে মাধবপুর হ্রদে পৌঁছতে হবে।

আই নিউজ/এইচএ

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়