Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫,   বৈশাখ ২৭ ১৪৩২

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ২ জুলাই ২০১৯
আপডেট: ১১:৫৬, ২ জুলাই ২০১৯

আর্থিক সংকটে বন্ধের পথে মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি

মৌলভীবাজার: আর্থিক সংকটে ঐতিহ্যসমৃদ্ধ মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি বন্ধ হওয়ার পথে। এরইমধ্যে পাবলিক লাইব্রেরিটি প্রতিদিন খোলা রাখা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। লাইব্রেরি পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, গ্রন্থাগারিকসহ সবাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের আঙিনায় ১৯৫৬ সালে মৌলভীবাজার পাবলি ক লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠার সময়টিতে ছিল লাল টিনের চারচালা বাংলো মতো ঘর। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লাইব্রেরিটি জেলার সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার মানুষকে আকর্ষণ করেছে। তবে দুবার লাইব্রেরিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একবার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় অনেক দুর্লভ বই হারিয়ে গেছে। পরের বার ১৯৮৪ সালে। সেবার মনু নদের ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজার শহর প্রায় আট ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। তলিয়ে যায় লাইব্রেরিটিও। এতে মূল্যবান ও দুর্লভ প্রায় ছয় হাজার বই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এই লাইব্রেরিটি শুধু যে বইপড়ুয়াদের আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল, তাই না। লাইব্রেরির সৈয়দ মুজতবা আলী মিলনায়তনটি সবসময় শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ছোটখাটো অনুষ্ঠানে মুখর ছিল। লাইব্রেরিটি সপ্তাহে প্রতি বুধবার এবং জাতীয় ছুটির দিন বন্ধ থাকে। এছাড়া প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সাধারণ পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এদিকে লাইব্রেরিটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। সেই পুরোনো লাল রঙের আধাপাকা টিনের ঘরটি বদলে ২০১০ সালে একতলা পাকা দালান হয়েছে। তিনটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানো হয়েছিল। কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। এগুলো অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। দালান হলেও পাঠকের চাহিদা মতো নতুন বইয়ের সংখ্যা বাড়েনি। লাইব্রেরিটিতে ১৬ ধরনের প্রায় ১১ হাজার বই আছে। প্রতি বছর সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় ৩০ হাজার টাকা অনুদান দেয়। তাতে থাকে বই কেনা বাবদ ১৫ হাজার টাকা এবং উন্নয়নের জন্য নগদ ১৫ হাজার টাকা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে থাকে। জেলা পরিষদ দেয় ১০ হাজার টাকা। এছাড়া আজীবন সদস্যদের ফিই হচ্ছে আয়ের উৎস। সাধারণ সদস্য হচ্ছেন ২২জন, আজীবন সদস্য ৩৩৬ ও ছাত্র সদস্য ৯জন। কিন্তু এই আয়ে লাইব্রেরিটি পরিচালনা করা কঠিন। লাইব্রেরিটি পরিচালনার জন্য একজন গ্রন্থাগারিক, একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক, একজন পিয়ন ও একজন ঝাড়ুদার আছেন। এই চারজনের মাসে বেতন-ভাতা আসে ৮ হাজার ৫০০ টাকা। এই বেতন-ভাতাটুকুও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেকদিন ধরে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ। এছাড়া বিদ্যুৎ বিল বাকি পড়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। পত্রিকা আছে নয়টি। পত্রিকার বিল বাকি আছে ২৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০জন পাঠক উপস্থিত হয়ে থাকেন। আর্থিক সংকটে লাইব্রেরিটি এখন বন্ধ হওয়ার পথে। লাইব্রেরিটি পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ায় এরইমধ্যে সভাপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, গ্রন্থাগারিক, সহকারী গ্রন্থাগারিক, পিয়ন ও ঝাড়ুদার। ফলে এখন লাইব্রেরিটি খোলা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। গ্রন্থাগারিক একাই মাঝে মাঝে লাইব্রেরিটি খুলে চালু রেখেছেন। লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক শোভাময় রায় সজল ১৯৮১ সাল থেকে কিছুদিন সহকারী গ্রন্থাগারিক এবং পরে গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি জানান  ‘এখানে এত বছর ধরে আছি। এখান থেকে তেমনকিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। যা টাকা পাই তা লাইব্রেরিতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নেই শেষ হয়ে যায়। আগে পৌরসভাসহ বিভিন্ন খাত থেকে কিছু থোক বরাদ্দ পাওয়া যেত। অনেক বছর সেগুলোও বন্ধ। অনেক সময় নিজের পকেট থেকে অন্যদের বেতনভাতা দিয়েছি। এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম নাই। বেতনভাতা না পাওয়ায় কর্মচারীও নাই। সবাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে। এখন লাইব্রেরি খোলা অনিয়মিত। আমি মাঝেমাঝে খুলি। লাইব্রেরি নিয়মিত চালাতে হলে আয়ের উৎস, কর্মচারীদের বেতনভাতাসহ সুযোগসুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। পাঠক বাড়াতে নতুন নতুন বইও বাড়াতে হবে। পাঠকরা সাম্প্রতিক প্রকাশিত বই চায়। তা দেওয়া যায় না।’ মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মুহিব  বলেন, ‘লাইব্রেরি এখন বন্ধ হওয়ার পথে। নিয়মিত বেতন দিতে পারছি না। আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’  
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়