Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ জুন ২০২৫,   আষাঢ় ৪ ১৪৩২

সুমাইয়া সিরাজী

প্রকাশিত: ২২:১০, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১
আপডেট: ২২:২৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১

শিশুদের ডায়েট নিয়ে ভাবার আগে অন্য কিছু ভাবুন

আপনি গভীর মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছেন ওই মূহুর্তে কেউ এসে হুট করে আপনার মুখে এক গাদা খিচুড়ি দিয়ে গেলো। কেমন ফিল করবেন? 

জীবনের শুরুতেই শিশুদের খাবারের প্রতি কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন-

১. শিশুকে খাবারে স্বাধীনতা দিন। প্লেটে ফেলে, কাপড় নষ্ট করে, মুখে মাখিয়ে, খাবার চটকিয়ে খেতে দিন। হাতে ধরে মুখে নিয়ে খাওয়াতে একটা শিশুর বিকাশের পথ অনেকটা মসৃণ হয়। তাই শিখতে দিন। জন্ম থেকে কেউ কিছু শিখে আসে না। আমরা শিখি আমাদের পরিবেশ থেকে। 

২. খাবারের শুরু হোক দেশীয় ও সহজলভ্য বা সহজে পাওয়া যায় এমন খাবার থেকে। খুব মুখরোচক খাবারের সাথে শুরুতেই পরিচিত হয়ে গেলে জিভ সেই স্বাদই বার বার খুঁজবে। অন্য খাবার তখন ভালো লাগবে না। 

৩. খাবার একটা খেলা। খেলার মাধ্যমে খাওয়া শেখান। আপেল দিবেন খেতে কিন্তু সেই আপেলের সাথে বাচ্চা পরিচিত তো? পরিচিত করতে আপেল দিয়ে একটা খেলার ব্যবস্থা করতে পারেন। 

আপেল টা হাতে দিয়ে একা বসিয়ে দিন। দূর থেকে দেখুন কি করে। ধরবে নেড়েচেড়ে দেখবে। বাচ্চা বুঝতে শিখলে বলুন আজ আপেল খাবো তার আগে চলো একটা আপেল আঁকি-রং করি। আরেকটু বড় হলে বাচ্চাকে দিয়ে আপেল কাটাবেন। সবাইকে ভাগ করে দিতে বলেন এক পিস মাকে, এক পিস বাবাকে।

এই এক আপেল খাওয়াতে গিয়ে বাচ্চাকে ১০ রকমের কাজ শিখিয়ে নিতে পারবেন। এটা কেবল একটা উদাহরণ, এরকম অনেক আছে।

৪. শিশুর খাবারে বৈচিত্র্য রাখুন। এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ন।  চিকেন পছন্দ করে বলে প্রতি বেলায় আপনাকে চিকেন খেতে দেই ১ মাস। বলুন কেমন লাগবে আপনার? অভুক্তি আসবে না? তাহলে বাচ্চাদের বেলাতেও এই একি চিন্তা প্রযোজ্য। পছন্দ করে বলেই প্রতিদিন খিচুড়ি দিলে এক সময় সেই খাবার আর খেতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক।

৫. মাসে ২/৩ দিন শিশু খাবারের প্রতি অনাগ্রহ দেখাতে পারে ( বিশেষ কোন অসুস্থতা না থাকলে)। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই দিনগুলোতে খাবারগুলো পুরো উল্টো সেট করুন। ওর অনাগ্রহকে খুব গুরুত্ব না দিয়ে কিছু ভিন্ন ধর্মী পছন্দের খাবার দিন। যেমন: ভাত খেতে চাচ্ছে না , অল্প ভাতের চাল ভেজে দিন সাথে ১/২ চা চামচ সরিষার তেল, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ধনে পাতা দিয়ে মেখে দিন। অনেক সময় অসুস্থতা বা কোন ভিটামিনের অভাব হতেই থাকলে শিশুর অনাগ্রহ দেখা দিতে পারেন। তাই আগে বাচ্চাকে বুঝুন।

৬. অনেকে আছেন বাচ্চা খায় না বলে মারধর করেন।  যা শিশুর মানসিক বিকাশে খারাপ প্রভাব ফেলে। শিশু খাবার নিয়ে বায়না করছে কান্না করছে দেখেই আপনার প্রচন্ড রাগ উঠলো আর আপনি মেরে দিলেন দুম করে এক থাপ্পড়। এতে করে বাচ্চা আর এমন করবে না সব খাবে ভবিষ্যৎ এ আপনি শিওর তো? আপনি ও আপনার হাসব্যান্ড ছোট বেলায় খাবার নিয়ে কি করেছেন সেই খবর টাও নিয়ে রাখুন। 

৭. শিশুকে জীবনের শুরুতেই বার্গার, চিপস, ড্রিংকস এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে পরবর্তীতে সেই অভ্যাস বদলাতে ভীষণ রকমের বেগ পেতে হবে। তাই শুরু থেকেই এটার খারাপ দিকগুলো বলে ওর মনে একটা জায়গা তৈরি করুন যাতে ওকে দিলেও সে খেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। 

৮. অনেক অভিভাবকই হাঁটতে চলতে বাচ্চাকে খাওয়ান এতে করে বাচ্চাদের খাবারের প্রতি একটা বিরক্তি ভাব আসে। আপনি কল্পনা করুন " আপনি গভীর মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছেন ওই মূহুর্তে কেউ এসে হুট করে আপনার মুখে এক গাদা খিচুড়ি দিয়ে গেলো!  কেমন ফিল করবেন? এই রকম একটা সেশন করেছিলাম এক ট্রেনিং এ।  ৯৯ ভাগ মায়েরা বলেছেন আমাকে, তারা চরম বিরক্ত ও অস্বস্তি অনুভব করেছেন। তাহলে বাচ্চাগুলো ত মানুষ। নিজস্ব ব্যক্তি সত্তা বলেও কিছু আছে। 

৯. শিশুদের সাইকোলজি অনেক স্ট্রং। আমার এক সাইকোলজিস্ট বন্ধুকে বলতে শুনেছি "বাচ্চারা বুঝে কখন তাদের মায়ের রক্তের শিরা উপশিরায় কোন চিন্তা চলে" এই কথা টার সত্যতা পেশাগত জীবনে অনেক দেখেছি। বাচ্চাদের ডায়েট দিতে গেলে আগে মায়দের কাউন্সেলিং করা লাগে। অনেক ভুল ধারণা এখনো মায়েরা পোষণ করেন। আবার অনেক মাই এখন বেশ সচেতন। 

১০. বাচ্চাদের ভেতর খাবার নিয়ে ভীতি তৈরি করবেন না। আপনারই বাচ্চা আপনার মতো টেস্ট নাও পেতে পারে। আপনি দুধ কলা ভাত পছন্দ করেন দেখে জোর করে বাচ্চাকে ও সেটা দিতে হবে তা নয়। বাচ্চার ইচ্ছাকেও প্রধান্য দিতে হবে। বুঝাতে হবে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করাতে হবে। অনেক সময় বাচ্চারা আপন লোকের চেয়ে বাইরের কমান্ড বেশি ফলো করে।

জীবনের শুরতেই যদি বাচ্চাদের খাবারের প্রতি একটা ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি তবে সেই শিশুকে নিয়ে অন্তত খাবারের জন্য খুব বেগ পেতে হবে না।

বাচ্চাদের সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠতে খাবার প্রয়োজন কিন্ত সেই খাবার যেনো বাচ্চাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে না তুলে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা খাবার খাই, খাবারের জন্য কিন্তু বাঁচি না।

সুমাইয়া সিরাজীনিউট্রিশনিস্ট এন্ড স্পেশাল এডুকেটর প্রয়াস, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়