আপডেট: ১৩:২৯, ২৯ আগস্ট ২০১৯
তাবিজের গল্প: ডা.জোবায়ের আহমেদ
ডা.জোবায়ের আহমেদ
১। তখন কলেজ এ পড়ি। জ্যোৎস্নাময়ী রাত ছিল। চাঁদ তার সব টুকু আলো দিয়ে সেদিন এর রাতটা কে মায়াময় করে তুলেছিল। গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না আমাদের হোস্টেল থেকে বের করে আনলো। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে জ্যোৎস্না গায়ে মাখতে মাখতে গেলাম ৩ কি.মি. দূরের বন্ধু রফিকের বাড়ি।
রাতে সেখানেই থেকে গেলাম আমরা। ভোরে উঠে হাঁটাহাঁটি করছি। রফিকের এক চাচার ঘরের পিছনে একটা কি যেন দুলছে গাছ থেকে টানানো।
কাছে গিয়ে দেখি তিন টা বড় বড় তাবিজ গাছ থেকে ঝুলানো। আমি এই দৃশ্য দেখে পুলকিত হলাম,রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত হলাম।
রফিকের চাচী কে জিজ্ঞেস করলাম তাবিজ কেন গাছে ঝুলানো। তিনি বল্লেন, একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কিন্ত মেয়েটার কপালে সুখ নেই।
শাশুড়ি, ননদ এর ইন্ধনে জামাই মেয়ের সাথে খারাপ আচরন করে,মাঝে মাঝে গায়ে হাত তুলে। তাই মেয়েকে বাবার বাড়িতে নিয়ে এসেছেন।
একজন বিখ্যাত কবিরাজ তদবির দিয়েছেন,তাবিজ গাছে ঝুলিয়ে রাখতে বলেছেন এক মাস।
তাবিজ বাতাসে দুলবে, এতে জামাই, শাশুড়ি ও ননদ এর মন দুলবে।
দুলতে দুলতে উনার মেয়ের জন্য পাগল হয়ে যাবে জামাই। মেয়েটা চিরসুখী হবে।
কিন্ত ৬ মাস পরে রফিকের চাচাত বোনের ডিভোর্স হয়ে গেছে শুনেছি।।
২। কালেন্দ্র বিশ্বাস নামের একজন রুগী একবার আমার কাছে আসেন মৌমাছি এর কামড় থেকে এনাফাইলেক্সিস নিয়ে।
চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার সময় গলায় তাবিজ দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম এই তাবিজ কে দিয়েছে? কালেন্দ্র উত্তর দিলেন "মিয়া সাব দিয়েছেন" জিজ্ঞেস,করলাম কিসের তাবিজ?
বল্লেন উপ্রির তাবিজ। জ্বিন সম্প্রদায় কে সিলেটের স্থানীয় ভাষায় উপ্রি বলা হয়। এই দিকে উপ্রির খুব উপদ্রব।
মানুষ প্রায়শই বলে উপ্রির চিকিৎসা করাইছি, উপ্রি ধরছে,এর সাথে উপ্রির ধরা আছে।
আমি কালেন্দ্র কে বল্লাম, আপনি কোন ধর্মের? বল্লেন হিন্দু ধর্ম। মিয়া সাব কোন ধর্মের? বল্লেন মিয়াসাব মুসলমান। আমি তখন বল্লাম, ধর্ম ত দুইজনেরটাই গেছে। আপনি ত কুরআন বিশ্বাস করেন না,মিয়াসাব ত কুরআন দিয়ে তাবিজ দিয়েছেন।
এটা শুনে কালেন্দ্র চিন্তিত হয়ে গেলেন। ধর্ম জীবনের চেয়েও বড়।
আমি বল্লাম, চলেন আজ তাবিজ টা খুলে দেখি কি আছে ভিতরে ।
তারপর তাবিজ এর ৫টা লেয়ার খুলে ভিতরে পেলাম সিগারেট এর প্যাকেটের ভিতর যেই সাদা কাগজ থাকে সেই কাগজ, তাতে লিখা ছিল "কালেন্দ্র তুই ভাল হয়ে যা"
এই লিখা দেখে কালেন্দ্র বাবুর চেহারা টা মলিন হয়ে গিয়েছিল। মিয়াসাব
আমি তখন আক্ষেপ করছিলাম, কত মানুষ কে এই জগত এ উপ্রি ধরল, আমি কেন সেই উপ্রির দেখা পেলাম না আজ অব্দি।
৩। তামান্না নাম মেয়েটির বয়স ১১ বছর। আমার কাছে আসল রাত ১০ টায়। আমি জানতে চাইলাম ব্যাথা কখন থেকে। তামান্নার মা বললো, সকাল থেকে। এত দেরী করে আসছেন কেন জিজ্ঞেস করতে করতে পেট এক্সামিনেশান করতে গিয়ে দেখি কালো দাগা বাঁধা পেটে প্যাঁচ দিয়ে।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম এটা কি?
সাথে দাদী ছিল তামান্নার, তিনি বললেন, তামান্নার উপ্রির ধরা আছে। সকাল থেকে উপ্রির চিকিৎসা চলেছে। এখনো ব্যাথা না কমাতে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে এসেছেন।
চিকিৎসা দেওয়ার ১৫ মিনিট এর মধ্যে এই ছোট্ট মেয়েটির চেহারায় আরামের ভাব ফুটে উঠল।
পরের দিন সকালে তামান্নার আল্ট্রাসনোগ্রাম
৪। ২০০০ সাল ক্লাস টেন এ উঠলাম। রোল নাম্বার টা হাতছাড়া হয়ে গেল। নাইনের ফাস্ট বয় টেন-এ গিয়ে সেকেন্ড।
আব্বা আম্মার সাথে বকাবকি করছেন। ক্লাস সিক্স এ রোল ১০০ নিয়ে স্কুল জীবনের যাত্রা করে ক্লাস নাইনে রোল ০১ এর দেখা পেয়েছিলাম।
স্বাধীনতা অর্জন এর চেয়ে রক্ষা করা কঠিন এর মত আমার রোল নাম্বার রক্ষা না করতে পারায় আমি লজ্জিত হলাম। আম্মাকে কেউ একজন বলছে, ভাবী একজন ভাল কবিরাজ দেখান।ছেলেকে কেউ তাবিজ করতে পারে।
আমার কোন শত্রু আছে এটা ভাবতে নারাজ।
আব্বা নিয়ে গেলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার টোরাগড় গ্রামের পীর জিন্নত আলীর কাছে। তিনি আমার দুই হাতে সুতা দিয়ে মাপলেন। ডান হাতের সাথে বাম হাতের সুতার গ্যাপ ৩ সেমি।
জিন্নাত আলী আব্বাকে বললেন, আপনার ছেলে কে তাবিজ করেছেন কেউ।ভাল ছাত্র তো তাই?
আব্বা আমার দিকে একটা তীব্র চাহনি দিলেন। তারপর তিনি অনেক দোয়া পড়ে আমাকে ফুঁ দিলেন। ১ ঘন্টা বিরতিতে আবার মাপ দিলেন। এবার কোন গ্যাপ নেই। তাবিজের একশন কেটে গেছে। আব্বার চোখমুখ খুশীতে চিকচিক করে উঠল।
তারপর আব্বা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ইলেকশনে দাঁড়ালে জিতবেন কিনা জানতে চাইলেন। উনি ঝিম ধরে ধ্যান করলেন। ১৫ মিনিট পর বললেন, , আপনি ফাস্ট হবেন। আব্বা কে আম্মা বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও আমার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ইলেকশনে দাঁড়ালেন এবং ফলাফল শোচনীয় পরাজয়।
হাজারো অভিভাবক এর মধ্যে মাত্র ৮৪জন অভিভাবক স্কুলের ফাস্ট বয়ের গ্রাজুয়েট পিতা কে ভোট দিলেন। যিনি ফাস্ট হয়েছেন তিনি নিজের নাম ও লিখতে পারতেন না।উনি স্কুলের উন্নয়নে কি ভুমিকা রেখেছেন জানতে পারিনি। আমি জিন্নাত আলীর ভবিষ্যৎ বাণী মাঠে মারা যাওয়া নিজ চোখে দেখে শয়তানের হাসি হেসেছিলাম।
৫। আমার এক বন্ধু আমার সাথে স্কুলে খুব কম্পিটিশন দিত।কেন সে আমার থেকে বেশি নাম্বার পায়না তাই সে শরনাপন্ন হল হুজুর এর কাছে। হুজুর ইন্তেকাল করেছেন বিধায় নাম উল্লেখ করলাম না। হুজুর জাফরান এর কালি দিয়ে একটা তাবিজ লিখে প্লেটে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলেন। পানি তাবিজময় হওয়ার পর সে সেই পানি খেয়ে খুব ভাব ধরতে লাগলো সে।
ভাব এমন জোবায়ের তোর খবর আছে। তাবিজ গুলে খাওয়ার পর টেস্ট এ তিন সাব্জেক্ট এ ফেল।।ভাগ্য ভাল এস এস সি পরীক্ষার আগে আর তাবিজ গুলা পানি খায়নি। সেই বন্ধুর মলিন চেহারা আজো মনে পড়ে।।
লেখক: চিকিৎসক
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের