Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫,   বৈশাখ ২৭ ১৪৩২

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ৬ জুলাই ২০১৯
আপডেট: ০৮:২৬, ৬ জুলাই ২০১৯

আমার একটা জঙ্গল আছে

ফারহান নূর শারিক: জঙ্গলটা ব্রহ্মপুত্র আর গঙ্গার মোহনায় স্থির হয়ে আছে। শুধু তাই না দক্ষিণ পশ্চিমের সমুদ্রর জলে পা ভিজিয়ে বসে থাকে সে। আর যখন লঙ্কা থেকে সিডর বা অন্য কোনো নামে ঝড়ের মুখোশ পড়ে বিপদ তেড়ে আসে তখনই জঙ্গলটা নিজের মাঝে আড়াল করে রাখে হিমালয় পর্যন্ত অসংখ্য জাতিকে। আর সমুদ্র বনটা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করছে কণা কণা স্থল।
সমুদ্র বনটা গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডোরা কাটা নদীর মাঝ দিয়ে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো সমুদ্র বনটার কোনো এক জায়গায় নোনা আর মিঠা পানির মিলনস্থল। আমি জানিনা জায়গাটা কোথায়। এটাও জানি না তা খুঁজতে কখন আমি হারাবো!
আমি কল্পনায় দেখি…
কোনো এক ভয় মাখা রাতে। মাত্র এক পশলা বৃষ্টি শেষে যখন মেঘ গুলো দ্রুতই সরে যাচ্ছে। আর আকাশটায় যখন পূর্নিমার স্রোত। আর জঙ্গলের সবুজ গুলো যখন সব কালো আর নীল।আর তখন আমি তোমার সাথে ভাসছি সেই বেঁকে চলা নদীটায়। খুজছি সেই মিলনস্থল। পাচ্ছিনা তবু খুঁজছি আর হারাচ্ছি।
বাস্তবতা… বর্তমান অস্থির-ভ্রান্ত ফ্যাকাশে সময়গুলোর মতোই।
আমি জঙ্গলটায় কখনো যাইনি। শুধু স্ক্যাচ করেছি। আর যখন ভাবছি জঙ্গলে হারাবো ঠিক ওই সময়টায় দেখছি চারিদিক আলোকিত করার প্রয়াসে বনকে ঘিরে একাধিক কয়লা ভিত্তিক
বিদ্যুৎকেন্দ্র, কলকারখানা তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। হ্যা,আলোর প্রতিফলন,প্রতিসরণ,বিক্ষিপন ছাড়া তো কোনো রংই ছোঁয়া সম্ভব নয়। আর তা ধরতে আমাদের করতে হবে সবুজ ধ্বংস তা যতটুকুই থাকুক না কেনো যেখানেই থাকুক না কেনো! ৯৭ এ যে অঞ্চলটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্থান পায় বর্তমানে কেনো তা নষ্ট করার নকশা করা হবে না? কিছু রুগ্ন বিড়ালের মতো বাঘ যারা প্রায়ই চলে আসে তাদের আদি নিবাসে। যেখানটায় রয়েল বেঙ্গলের আদি পুরুষরা হয়তো একসময় রাজত্ব করতো কিন্তু তা এখন আমাদের মানুষদের গ্রাম। আমাদের জায়গা। জঙ্গল সাফ করে আমরা ধানী জমি বানিয়েছি । জায়গাতো আমাদেরই। এ জায়গার ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ ধরনের সরীসৃপ আর ৮ পজাতির উভচর আছে.. এরা তো আমাদের সম্পদ নয় এরা আমাদের পন্য। আর তাই হয়ত আজ ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি আর ৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী নিজেদের প্রজন্ম সৃষ্টি করতে ব্যর্থ প্রায়। তাদের অস্থিত্ব হুমকির মুখে।
তাতেও তো সমস্যা নেই আমাদের! Heritiera fomes, Excoecaria agallocha, Ceriops decandra, Sonneratia apetala এর মত ২৪৫ শ্রেণির ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে বলে ১৯০৩ সালে করা একটি হিসেবে দেখা গিয়েছিলো। যখন সমুদ্র বন ছিলো আরো বিস্তৃত আরো পশ।
আমাদের তো বৃক্ষের প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রাণের প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন পন্য, আমাদের প্রয়োজন জীবাস্ম,আমাদের প্রয়োজন গ্যাস, কয়লা, তেল উত্তোলন করার উদ্যোগ আর ব্যবসা। কারণ আমরা খুবই ব্যবসা বান্ধব জাতি।
মনে আছে, আর তাই গ্যাস, তেল, কয়লা উত্তোলন কারী দেশগুলোর কম্পানিরা আমাদের এসে বলল সুন্দরবনকে পৃথিবী শ্রেষ্ঠ করার জন্য ভোট দিতে। মাত্র .৭৫ টাকা বা লগ ইন করে ক্লিক করলেই আমার সুন্দরবন শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে। এ কথা শুনেই আমরা আমাদের আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। আর তখন থেকেই সুন্দরবন কে ঘিরে বিংশ শতব্দির ব্যবসা শুরু।
আমি জানি, যেভাবে ওরা আমার শহর ঢাকার বৃক্ষগুলো ধ্বংস করেছে, কেউ কিছু বলেনি। আমার ভাস্কর্য ভেঙেছে, তারা কিছু দেখেনি। আর আমি এও জানি এভাবে চলতে থাকলে সমুদ্রবনে তোমার সাথে নোনা আর মিঠা পানির মিলনস্থল দেখার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি।
তবে সম্ভাবনা যদি শূন্যও হয়ে থাকে তারপরও সেখান থেকে জঙ্গলটার সাথে আমি প্রাণে প্রাণ মেলাবোই, তোমার কসম কেটে বলছি।
 
ফারহান নূর শারিক: সাংবাদিক ও লেখক
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়