Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   আশ্বিন ১২ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:১০, ২০ এপ্রিল ২০২১
আপডেট: ১৪:০১, ২০ এপ্রিল ২০২১

মুভমেন্ট পাস ও আইডি কার্ড নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগে কি বলছে চিকিৎসক ও পুলিশ সংগঠন?

পুলিশ ও সেই নারী চিকিৎসক

পুলিশ ও সেই নারী চিকিৎসক

সম্প্রতি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পুলিশ-চিকিৎসক পাল্টাপাল্টি তর্কাতর্কি নিয়ে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠছে। এক নারী চিকিৎসকের সাথে পুলিশের বাকবিতণ্ডার ঘটনাটি এখন দুই পেশাজীবী সংগঠনের বিবৃতি প্রদান ও অভিযোগ পর্যন্ত গড়িয়েছে। 

লকডাউনে সরকারি বিধিনিষেধ পালন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা মুভমেন্ট পাস বা আইডি কার্ডের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে মনে করছে চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)। এসবের মধ্য দিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজের উৎসাহ হারাবেন বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। 

এছাড়াও, ভাইরাল হওয়া বিএসএমইউ এর নারী চিকিৎসক ও ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশের বাকবিতণ্ডার ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি ও হেনস্তার অভিযোগ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএমএ। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিএমএ

এসব উল্লেখ করে সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশে চলমান লকডাউনকালে করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মস্থলে যাতায়াতকালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক হয়রানি ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ ধরনের ঘটনা ঘটায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আতঙ্কগ্রস্ত ও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

এতে বলা হয়েছে, গতকাল (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনির গাড়ি আটকিয়ে পরিচয় জানতে চাওয়ার নামে একজন নারী চিকিৎসককে যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে তার খবর ও আংশিক ভিডিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

'নিজ গাড়িতে কর্মরত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগানো এবং নিজের নামাঙ্কিত চিকিৎসক গাউন পরিহিত অবস্থায় নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে আক্রমণাত্মকভাবে জেরা করে উত্যক্ত ও হেনস্থা করার খবর দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। চিকিৎসকের এতগুলো পরিচয় দেওয়ার পরেও কেবলমাত্র মুভমেন্ট পাস ও প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ডের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এহেন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।'

চিঠিতে বিএমএ আরও উল্লেখ করে, ক্রমাগত এ ধরনের ঘটনা সংগঠিত হওয়ার কারণে বিষয়টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মহোদয়কে অবহিত করার পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করলে এবং রাস্তায় ক্রমাগত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হয়রানি ও নাজেহাল করতে থাকলে নানা ধরনের মানসিক চাপে বিপর্যস্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থকর্মীরা তাদের কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন এবং যার প্রভাব বর্তমান নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পড়তে বাধ্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। এক প্রতিবাদলিপিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে তারা।

এ বিষয়ে দেশের বেসরকারি জনপ্রিয় গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট একটি প্রতিবেদনে বিএসএমএমইউ এর প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করে। জানা যায়, বিএসএমএমইউ প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করে, গত ১৮ এপ্রিল বিএসএমএমইউ-এর রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে কর্মরত সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত কর্মস্থল থেকে দায়িত্বপালন শেষে নিজ আবাসস্থলে ফেরত যাওয়ার পথে লকডাউনে পুলিশের টহলদলের সদস্যদের সঙ্গে কথোপকথনের সচিত্র প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

ডা. সাঈদা শওকত দায়িত্ব পালন শেষে বিএসএমএমইউ-এর লোগো সংবলিত গাড়িতে আরোহিত অবস্থায় এলিফ্যান্ট রোডে পৌঁছার পর কর্তব্যরত পুলিশের টহলদল তাকে থামায়। পরিচয় চাওয়া হলে তিনি তার চিকিৎসক ও বিএসএমএমইউতে কর্মরত বলে পরিচয় জানান। পক্ষান্তরে, টহলদলের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসক পরিচিতিকে ‘ভুয়া’ বলা হয় এবং অসৌজন্যমূলকভাবে তাকে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। ওই সময় তিনি তার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সংবলিত অ্যাপ্রন পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।

অ্যাপ্রন বিশ্বব্যাপী চিকিৎসকদের পরিধেয় পেশাগত পোশাক হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ তাকে ‘ভুয়া’ চিকিৎসক হিসেবে অভিহিত করেন। এর প্রেক্ষিতে ডা. সাঈদা শওকত বিক্ষুব্ধ হন এবং পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন, যার খণ্ড সচিত্র প্রতিবেদন সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে।

চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে পুলিশবাহিনীও

এদিকে এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পুলিশবাহিনীও। বাংলাদেশ পুলিশের সংগঠন 'পুলিশ এসোসিয়েশন' সংশ্লিষ্ট ওই নারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অসৌজন্যতার অভিযোগ এনেছে। এছাড়াও তারা এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। 

এক বিবৃতিতে পুলিশবাহিনী এ চিকিৎসকের আচরণের নিন্দাও জানিয়েছে। 

সভাপতি শফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি আদেশ বাস্তাবায়নের চলমান কার্যক্রমের সময় গত রোববার জনৈক চিকিৎসক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, যা একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিবৃতিতে পুলিশের এই সংগঠন উল্লেখ করে, তিনি শুধু ওই পুলিশ সদস্যদের অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকেই কটাক্ষ ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। শুধু তাই নয় নিজ পেশার পরিচয় বাদ দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ঔদ্ধতাপূর্ণ আচরণ করেছেন এবং জাতির সামনে পেশাজীবী সংগঠগুলোকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

এ বিষয়ে কি বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঘটনাটি পৌঁছেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পর্যন্ত। মুভমেন্ট পাস ও আইডি কার্ড নিয়ে পুলিশ-চিকিৎসক এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগে তিনি মন্তব্য করেন, ‘সবাই আরেকটু সংযত হলেই পারতেন।’

সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট'কে তিনি তার এই মন্তব্য জানান। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ এবং ডাক্তার যেটি করেছেন, এটি ভুল বোঝাবুঝি। আমার মনে হয়, ভুল বোঝাবুঝির জন্যই এটি হয়েছে। সবাই আরেকটু সংযত হলেই পারতেন, এটি হলো আমার কথা।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকায় দেশে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এমন অবস্থায় রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালে পুলিশ-চিকিৎসক বাকবিতণ্ডার এক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। ভিডিওতে দেখা যায়, আইডি কার্ড দেখতে চাওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে তুলকালাম করেছেন এক নারী চিকিৎসক। এ সময় তিনি দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে গালিগালাজ করেন ও মন্ত্রীর হুমকিও দেন। বিস্তারিত...

আইনিউজ/এসডি

Green Tea
সর্বশেষ