Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০২ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৯ ১৪৩২

পারমিতা দাস

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০
আপডেট: ১৭:১৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

মর্নিং ওয়াকে গিয়ে আর ফিরলেন না ছোট্ট মেয়েটির বাবা

দেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল, মেয়েটি তখন‌ও কৈশোরে পা রাখেনি। চোখ দিয়ে দেখে চলেছে আশপাশে হানাদারবাহিনীর চালানো তাণ্ডবলীলা। ছোট্ট মেয়েটিরও মন ছটফট করতো যুদ্ধে যেতে।

বাড়ির পাশে স্কুলের মাঠে যখন মুক্তিবাহিনীর গোপন অনুশীলন হতো, দু’বোন মিলে চুপিচুপি গিয়ে শিখে নিতো অনেক কিছু। কিভাবে অস্ত্র চালাতে হয়, কিভাবে আহতদের শুশ্রূষা করতে হয় ইত্যাদি।

দেশের এমন অস্তিতিশীল পরিস্থিতিতেও ছোট মেয়েটিকে এসব করতে বাধা না দিয়ে বরং অনুপ্রেরণা দিতেন মেয়েটির বাবা। এর‌ই মধ্যে একদিন পাশের গ্রামে আগুন দিলো পাকিস্তানিরা। নির্মম ভাবে হত্যা করা হলো মানুষদের।

ছোট্ট সেই মেয়েটি এবং তাঁর প্রিয় বাবা শহীদ বিনোদ বিহারী। ছবি- পারমিতা দাস

এসব দেখে আর কি চুপ করে বসে থাকা যায়? রাগে আর অপমানে মেয়েটি তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে কেরোসিন ঢেলে পাকিস্তানের পতাকায় আগুন ধরিয়ে দিল! কিন্তু তার পরিণতি কি হবে মেয়েটি হয়তো জানত না। জানতো না তাঁর ছোট্ট মনের এই প্রতিবাদের প্রতিদান দিতে হবে তাঁর বাবাকে।  

পরে একদিন মর্নিং ওয়াকে গিয়ে আর ফিরে আসল না মেয়েটির বাবা। এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত জানা গেলো হানাদাররা গ্রামে ঢুকে পড়েছে এবং রাস্তা থেকেই নাকি মেয়েটির বাবাকে তুলে নিয়ে গেছে।

রাজাকারদের মাধ্যমেই তারা জেনে গিয়েছিলো লোকটি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে মদদ এবং সাহায্য করছে। আবার তার‌ই ছোট্ট মেয়ের নেতৃত্বে পোড়ানো হয়েছে পাকিস্তানের পতাকা।

ছোট্ট মেয়েটির পৃথিবী তখন পুরোটাই ওলট পালট হয়ে গেছে। পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে যুদ্ধের পুরোটা সময়। মাঝে মাঝেই রাতের অন্ধকারে খুঁজতে বের হতো যদি বাবার লাশটুকুও পাওয়া যায়। কিন্তু বাবাতো হারিয়ে গেছে।

শুনেছে গুলি করে গ্রামের আন্ধারমানিক নদীতেই নাকি ফেলে দেয়া হয়েছিল তাঁর বাবাকে। প্রাণপ্রিয় বাবা যার হাতে ভাত না খেলে পেট ভরতো না, তাকে শেষ বারের মতো ছুঁয়ে দেখা হয়নি সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটির। যে বাবার গা ঘেঁষে না শুলে ঘুম আসত না সে বাবা আজ একা একা শুয়ে আছে নদীর ঠান্ডা জলের নিচে!

দেশ স্বাধীন হলো, এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। সেই বাচ্চা মেয়েটা বড় হয়েছে। চাকরী, সংসার সবকিছু সামলেও এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে না সেই সময়ের ট্রাজেডির কথা। কিন্তু এখন মনে জমা হয়েছে চাপা অভিমান আর ক্লেশ।

দেশটা স্বাধীন হয়েছে ঠিক‌ই কিন্তু সেই সাথে হারিয়েছে সেদিনের সেই শহীদ বিনোদ বিহারী দত্তের নামটুকও। ক্ষমতাধারী হয়ে ওঠেছে সেদিনের পা চাটা রাজাকাররা।  এখন শেষ স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে শুধু রয়ে গেছে আন্ধারমানিক নদীটা।

Green Tea
সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়