Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ১০ নভেম্বর ২০২৫,   কার্তিক ২৬ ১৪৩২

রুপম আচার্য্য

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ১০ নভেম্বর ২০২৫

দুবাই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে শ্রীমঙ্গলের মেয়ে চৈতী

শ্রীমঙ্গলের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া দৌঁড়বিদ চৈতী রানী দেব। ছবি: আই নিউজ

শ্রীমঙ্গলের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া দৌঁড়বিদ চৈতী রানী দেব। ছবি: আই নিউজ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ে চৈতী রানী দেব সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে দেশের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। আগামী ৭ থেকে ১৪ ডিসেম্বর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫-এ অংশ নিতে যাচ্ছে এই সাহসী কিশোরী।

উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের কৃষক সত্য দেবের কনিষ্ঠ কন্যা চৈতী রানী দেব (১৩) জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। বর্তমানে সে ভুনবীর দশরথ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি হলেও স্বপ্ন ও সাহসের উচ্চতা অনেক বেশি।

পরিবারের চার মেয়ের মধ্যে চৈতী সবচেয়ে ছোট। অন্য চারবোন শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হলেও জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছে চৈতী। শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাকে থামাতে পারেনি-বরং অনুপ্রেরণায় ভরিয়ে তুলেছে নিজের ও এলাকার মানুষের হৃদয়। চৈতীর এই আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, শ্রীমঙ্গল ও বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের বিষয়।

প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের জন্য আয়োজিত প্যারালিম্পিক গেমসের মতো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় প্যারালিম্পিক কমিটি (এনপিসি বাংলাদেশ)। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী দৌড়বিদ চৈতী রানী দেব।

চৈতী পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাও চালিয়ে যেতে চায়। সে খেলাধুলার মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে আনতে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে গর্বের সঙ্গে উপস্থাপন করতে চায়। চৈতীর স্বপ্ন, নিজের এলাকার মুখ উজ্জ্বল করা এবং জাতির জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠা।

স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্স (এসএইচআই) শ্রীমঙ্গলের প্রশিক্ষক দেব প্রসাদ শীল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমি এই এলাকায় চৈতীকে দৌড়ের অনুশীলন করাচ্ছি। পরে ঢাকায় প্যারা অলিম্পিকের (১০০ মিটার) দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয় এবং সেখান থেকে সে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এখন সে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে, দুবাইয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে। ওর প্রস্তুতি বেশ ভালো। সামনে এক মাস ঢাকায় ক্যাম্পে থাকবে। আমি বিশ্বাস করি, যদি সরকার এই ধরনের প্রতিভাবানদের চলার পথে সহযোগিতা ও সমর্থন করে, তাহলে তারা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। চৈতী আগামী ৭ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে এটা সত্যিই আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”

স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইন্ডিপেন্ডেন্স (এসএইচআই) এর প্রতিষ্ঠাতা শারমিন ফারহানা চৌধুরী বলেন, “গত তিন বছর ধরে আমরা তাকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রথমবার যখন তাকে দেখি, তখন তার পরিবার কিংবা সে নিজেও খুব বেশি আগ্রহী ছিল না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে আমরা এক অসাধারণ পরিবর্তন দেখেছি। আমরা বিশ্বাস করি, সমাজ যদি তার মতো প্রতিটি প্রতিবন্ধী মানুষকে উৎসাহ ও সুযোগ দেয়, তাহলে তারাও নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।”

তিনি বলেন, “পরিবার ও এলাকার লোকজন যেন মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করেন, সে বিষয়ে সবার সচেতন থাকা প্রয়োজন। তাদের সহযোগিতা এবং সম্মিলিতভাবে কাজ না করলে আমরা মেয়েদের ভেতরকার লুকিয়ে থাকা প্রতিভাগুলোকে তুলে আনতে পারব না। মেয়েদের জন্য বিশেষ সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।”

তিনি আরো বলেন, “চৈতী যদি চ্যাম্পিয়ন না-ও হয়, তারপরও যেহেতু সে দুবাই থেকে ঘুরে আসবে, এতে তার এলাকার আশেপাশের মেয়েরা আরও অনুপ্রাণিত হবে। এই অনুপ্রেরণার মধ্য থেকেই আমরা ভবিষ্যতে আরও মেধাবী খেলোয়াড় খুঁজে বের করতে পারব, এবং আশেপাশের এলাকার মেয়েরা এবং চৈতির মত শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতা শিকার মেয়েদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। চৈতীর দুবাই যাত্রা শুধু আমাদের সংগঠনের জন্যই নয়, দেশের জন্যও একটি বড় ইতিবাচক অর্জন। চৈতী জিতলে বাংলাদেশ জিতবে — আসলে, ওর যাওয়া-টাই আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।”

মূলত এই বৃহৎ ক্রীড়া আসরটির আয়োজন করে এশিয়ান প্যারালিম্পিক কমিটি। এতে এশিয়ার ৪৫টি দেশের প্রায় ১,৫০০ তরুণ ক্রীড়াবিদ অংশ নেবেন। প্রতিযোগিতার মূল স্লোগান হলো— “Born to Rise” (উঠার জন্য জন্ম)।

আই নিউজ

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়