Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ১২ মে ২০২৫,   বৈশাখ ২৮ ১৪৩২

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১ জুন ২০১৯
আপডেট: ০৯:৫৭, ১ জুন ২০১৯

সিলেটে এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রশংসিত

সিলেট : নানা কারণেই পুলিশের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে মানুষের মনে। পুলিশ সদস্যদের নানাবিদ সমালোচনার কথা শোনা যায় প্রায়ই। সড়কে বিশৃঙ্খলার কারণে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা। তবে সিলেটে সাম্প্রতিককালে এক পুলিশ কর্মকর্তার কর্মতৎপরতা বেশ প্রশংসিত হচ্ছে।
আলোচিত এই কর্মকর্তার নাম ফয়সল মাহমুদ। তিনি সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ কমিশনারের দায়িত্বে রয়েছেন।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, যানজট নিরসন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, অবৈধ পার্কিং ও যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানে তাঁর তৎপরতা ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে নগরবাসীর। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে নগরীর ধোপাদিঘির পাড় এলাকায় দেখা যায় উপ পুলিশ কমিশনার ফয়সল মাহমুদকে। হাতে একটি হ্যান্ডমাইক। যা দিয়ে বলে যাচ্ছেন- ‘তাড়াহুড়া করবেন না,বিপদে পড়বেন না’ ‘অভারটেকিং করবেন না, বিপদে পড়বেন না’। এমন সময় সোবহানীঘাট থেকে আসা একটি মিনি ট্রাক বন্দরবাজারের দিকে যাওয়ার সময় একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। রিকশার যাত্রী নারী ও শিশুসহ রিকশাটি ধোপাদিঘিরপাড় পয়েন্টে সড়কের মাঝখানে পরে যায়। মূহুর্তেই উত্তেজিত জনতা ট্রাক চালককে মারতে উদ্যেত হন। ঘটনার সময় উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদসহ একদল পুলিশ সদস্য সেখানে ছিলেন। ফয়সল মাহমুদ মাইকে কথা বলে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন। রিকশা চালক ও যাত্রীদের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না দেখে নেন। এরপর চালককে বুঝান এভাবে বেপরোয়া হয়ে গাড়ি না চালাতে। পাশাপাশি রিকশার যাত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে এবং রিকশা চালকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলেন ফয়সল মাহমুদ। এই সমস্যার সমাধান করে তিনি বন্দরবাজার দিয়ে হাঁটা শুরু করেন। হাঁটতে হাঁটতেই হাতের মাইক মুখের কাছে এনে বলেই চলছেন- ‌’দোকানের মালামাল সড়কের উপর রাখবেন না। যেখানে সেখানে পার্কিং করবেন না।’
ফয়সল মাহমুদ মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরীতে এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। রমজান মাস শুরুর পর যা আরও বেড়েছে। হাতে মাইক নিয়ে প্রতিদিনই নগরী ছুটে বেড়াচ্ছেন ফয়সল মাহমুদ। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা কিংবা ঈদে বাড়ী ফেরা নির্বিঘ্ন করতে দিনভর তৎপরতা চালাচ্ছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে প্রথমেই মামালা, জেল, জরিমানায় না গিয়ে চালক ও যাত্রীদের সচেতন করতে চেষ্টা চালান তিনি। আইন মানতে উদ্ধুব্ধ করেন। যত্রতত্র পার্কিং না করতে, ফুটপাতে ব্যবসায়িক সামগ্রী না রাখতে মাইক হাতে বলে বেড়ান দিনভর।
ধোপাদিঘিরপাড় থেকে বন্দরবাজারমুখে যাওয়ার সময় আশপাশের বব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলছেন হ্যান্ড মাইকে বলছেন, ‘সাটার থাকবে যেখানে মালামাল থাকবে সেখানে।’ কাউকে কোনো শারীরিক জোরজবরদস্তি বা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন না। যেসব ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠানের সামনের ফুটপাত দখল করে জিনিসপত্র রেখেছেন তাদের দোকানে সামনে গিয়ে যখন এই কথা বলছেন। ব্যবসায়ী তখন লজ্জায় ফুটপাত খালি করে দেন। তার এসব কর্মকাণ্ড দেখে অন্য ব্যবসায়ী আগেই ফুটপাত থেকে মালামাল সরিয়ে নেন। ধোপাদিঘিরপাড় থেকে নগরভবনের সামনে এসে দেখা যায় এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য। যেখানে নগরভবনের সামনের সড়কজুড়ে হকারদের ছড়াছড়ি থাকে সেখানে কোনো হকার নেই। ফয়সল মাহমুদ মাইক নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছেন শোনে সবাই আগেই ফুটপাতও সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন। তবে পুরনো দৃশ্য দেখা গেলো খানিক পরেই। মাইক হাতে ফয়সাল মাহমুদ ওই এলাকা ছেড়ে যেতেই আবার সড়ক দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা। পাশাপাশি যে ব্যবসায়ীরা ফুটপাত থেকে মালামাল সরিয়েছিলেন তারাও আবার ফুটপাতে মালামাল নিয়ে আসেন। সড়কে যারা হেলমেট না পরে মটর বাইক নিয়ে বের হন তাদের দেখা পেলেই ফয়সল মাহমুদ বলেন, ‘আপনি কী নিরাপদ সড়ক চান না , আপনি কি নিজের নিরাপত্তা চান না ? যদি চান। তাহলে হেলমেট পরে বাইক চালাবেন।’ উল্টো পথে কেউ গাড়ি নিয়ে আসলেও তাকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে দেন। সাম্প্রতিক সিলেটে এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে একজন ফয়সল মাহমুদের তৎপরতা নজর কাড়ছে নগরবাসী। প্রশংসা কুড়াচ্ছে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, আমি যে কাজটা করছি এটাই আমাদের দায়িত্ব। পুলিশের দায়িত্ব শুধু মামলা দেওয়া না। সাধারণ জনগণকে সচেতন করাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমরা সবসময় পারি না এই সচেতনতামূলক কাজ করতে। কারণ আমাদের সার্বিক আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকে পুলিশ। সকল নিরাপত্তাজনিত কাজ আমাদের করতে হয়। তাই সময় সুযোগ পেলেই সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে সড়কে বেড়িয়ে পরি। তিনি বলেন, সব সময় শাস্তি কাজে লাগে না। কিছু অন্যায়, অনিয়ম রোধ করতে সচেতনতাও প্রয়োজন। আমার মনে হয় আমরা সব জানি কিন্তু মানি না, কারণ আমাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মুখের কথায় জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ বেশি হয়। তাই সড়কের নিয়মকানুন মৌখিক ভাবে জনগণকে জানানোর চেষ্টা করি। তিনি বলেন, সড়কে চলাচলে নিয়ম সম্পর্কে এখনো অনেক মানুষজন অবগত নন। আমরা পথচারীদের ফুটপাত ধরে চলাচল করতে এবং সড়ক পারাপারে সাদা-কালো ডোরা কাটা চিহ্ন জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। যানবাহন ও মোটরসাইকেল চালক এবং আরোহীদের সচেতন করছি। তারা যেনো উল্টা পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ করেন। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীরা যেন হেলমেট পরিধান করেন। এছাড়া ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করা হকারদের এবং অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে কাজ করছি। কারণ নিরাপদ সড়কের সাথে এ সকল বিষয় সংশ্লিষ্ট। নিরাপদ সড়ক চাইলে অবশ্যই চালক পথচারীসহ সকলকে সড়ক আইন জানতে হবে এবং মানতে হবে। এসএ/ইএন
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়