Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ১২ মে ২০২৫,   বৈশাখ ২৮ ১৪৩২

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৭ জুন ২০১৯
আপডেট: ০৬:৩২, ১৭ জুন ২০১৯

বৃটেনে সিলেটিদের এগিয়ে চলা

সিলেট ডেস্ক : সেই ১৮৭৩ সালে  মাত্র কয়েকজন সিলেটি রাঁধুনি দিয়ে শুরু হলেও আজ প্রায় ৬ লাখ মাঝখানে প্রায় দেড়শ বছর। বৃটেনে বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যাটা এত বিশাল। তার মধ্যে সিলেটীদের সংখ্যা শতকরা ৯৭। তাদের অধিকাংশই জন্মসূত্রে সেদেশের নাগরিক। সম্প্রতি বৃটেনের ন্যাশনাল অফিস ফর স্ট্র্যাটেকটিক্স জানিয়েছে এমন তথ্য। তো ১৮৭৩ সালের রাঁধুনীদের পর সিলেটের কারা অভিবাসী হয়েছিলেন? তাদেরই উত্তরসুরী ও আত্মীয়স্বজন। সেটাও প্রায় অর্ধশতাব্দী পর, ১৯২৫ সালের দিকে। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসোবাস করতে শুরু করেন। এর কিছু পরে বৃটিশ জাহাজে কাজ করা জাহাজীরাও উন্নত জীবনের আশায় ছুটে গিয়েছিলেন সাগর বধুর বুকে। এরপর যে ধারা শুরু হলো, তাতে বৃটেনে দ্রুত বাড়তে থাকে সিলেটী অভিবাসীর সংখ্যা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গোটা ইউরোপে যখন কর্মক্ষম মানুষের ঘাটতি দেখা দিলো তখন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে তারা জনশক্তি সংগ্রহ শুরু করল। বৃটেনও সেই পথে হেঁটেছে। অভিবাসীদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল তারা। সুযোগটা নিয়েছিলেন সাহসী সিলেটীরা। ১৯৫০ থেকে ৬০, এই একদশকে সেখানে একটা বড় অংশ প্রবেশ করেন অভিবাসী হিসাবে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে এখনো। উন্নত জীবন-যাপনের আশায় সিলেটের মানুষজন ছুটছেন সেখানে। তারপর আইনীপন্থায় স্থায়ীভাবে বসোবাসের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। তারা শুধু সিলেট তথা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেই অবদান রাখছেন না, অবদান রাখছেন দুই দেশের রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ বা সিলেটে এসে প্রায়ই এই সত্যটা স্বীকার করছেন। শুধু রাজধানী শহর লন্ডনেই নয়, সিলেটীরা এখন বৃটেনের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ছেন। সেদেশের সরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে, লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেসে বসোবাস করছেন সর্বোচ্চসংখ্যক সিলেটী। অংকটা সিলেটের মোট নাগরিকের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ, ২ লাখ ২২ হাজার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সিলেটীর বাস বার্মিংহামে, প্রায় সাড়ে ৫২ হাজার, ওল্ডহামে ১৬ হাজার ৩শ, লুটনে প্রায় ১৫ হাজার, ব্রাডফোর্ডে প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশীর বাস, যাদের ৯৭ ভাগই সিলেটী। ম্যানচেষ্টার, নিউক্যাসল, কার্ডিফ, স্যান্ডরল্যান্ডেও প্রচুর সিলেটী সগৌরবে বসোবাস করছেন। বৃটেনে অভিবাসনের ব্যাপারে সিলেটীদের আগ্রহ যে কত বেশী তার প্রমান পাওয়া যায় আদম শুমারিগুলোর চিত্র দেখলে। ১৯৬১ সালের আদম শুমারিতে সেখানে বাংলাদেশীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার। পরবর্তী দশবছরে তা বেড়েছে প্রায় ৪গুণ, সংখ্যাটা ছিল প্রায় ২২ হাজার, ৮১ সালে বেড়েছে প্রায় ৩গুণ, প্রায় ৬৪ হাজার, ৯১ সালে সেটি হয় প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার, ২০০১ সালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৩ হাজার এবং সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে তা পৌঁছে যায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখে। আর ২০২১ সালের আদশশুমারিতে সংখ্যাটা ৬ লাখে পৌঁছে যাবে বলেও সংশ্লিষ্টদের ধারণা। তবে এর অধিকাংশই কিন্তু জন্মসূত্রে ব্রিটিশ। বৃটেনে বসোবাসরত বাংলাদেশী বা সিলেটীরা কেবল টাকা কামাই করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন না, বরং রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নিজনিজ অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি উজ্জল করছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সফল কয়েকটি নাম হচ্ছে রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিকী, রূপা হক। তারা হাউস অব কমন্সের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এছাড়াও সাবেক এমপি ছিলেন পলা মঞ্জিলা উদ্দিন ও টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান। সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন বৃহত্তর সিলেটেরই সন্তান সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। আরো অনেকেই এখন সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে কাজ করছেন। তাছাড়াও এই মুহুর্তে বৃটেনের বিভিন্ন কাউন্সিলে প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশী কাউন্সিলর রয়েছেন যারা স্থানীয় সরকার পরিচালনায় তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে বিখ্যাতদের কয়েকজন হলেন মোহাম্মদ বারি (শিক্ষা), আলী জ্যাকো ও রোকসানা (ক্রিড়া) মামজি (সঙ্গীত), কিয়া আব্দুল্লাহ (ঔপন্যাসিক), ওয়ালি তছর উদ্দিন (ভাষাবিদ) প্রমুখ। বৃটেনে বর্তমান প্রজন্মের সিলেটীরা লেখাপড়াসহ ব্যবসা বানিজ্যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছেন। ভবিষ্যতে এ তালিকাটা আরো দীর্ঘ হবে বলে আশাবাদী সিলেটের সচেতন মানুষ। এসএ/ইএন
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়