Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩২

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২ জুন ২০১৯
আপডেট: ১০:৫৯, ১০ জুন ২০১৯

চোখ জুড়ানো দীর্ঘ কাঠের সেতু

 দিনাজপুর : দিনাজপুরের নবাবঞ্জের বিখ্যাত আশুড়া বিল। এই বিলের বিশাল জল রাশির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ এক কাঠের সেতু। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ শাল কাঠের আঁকাবাঁকা এই সেতুর দৃশ্য দেখে নিমিষেই চোখ জুড়িয়ে যায়। পর্যটকদের প্রাধান্য দিয়ে উপজেলা প্রশাসন সেতুটি নির্মাণ করেছে। এর নাম রাখা হয়েছে ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেতু’। শনিবার (১ জুন) সকালে দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক ও জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম যৌথভাবে সেতুটির উদ্বোধন করেন। এ সময় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে বিলের পাশে কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির দুই হাজার ফুল গাছের চারা রোপণ করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দিনাজপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান, হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ, নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০০ মিটার। সম্পূর্ণ শাল কাঠে নির্মিত এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। সময় লেগেছে দুই মাসের মতো। এটি পূর্ব-পশ্চিমে নির্মিত। সেতুটির আকার দেওয়া হয়েছে ইংরেজি বর্ণ জেড এর মতো। যা সেতুটির বেশ কয়েটি জায়গায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেতুটির পশ্চিমে খটখটিয়া কৃষ্ণপুর ও পূর্ব দিকে নবাবগঞ্জ। ফলে এই দুই অংশের বাসিন্দারাও সেতুটি ব্যবহার করতে পারবেন। উপজেলা প্রশাসন বলছে, এত বড় কাঠের সেতু উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই। নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নবাবগঞ্জ অংশের ২৫১ হেক্টর এবং বিরামপুর অংশের ১০৯ হেক্টর নিয়ে মোট ৩৬০ হেক্টর এলাকাজুড়ে এই আশুরা বিল। এখানে বিভিন্ন দেশীয় মাছসহ লাল খলশে, কাকিলাসহ আট প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছও পাওয়া যায়। বিলের তিন দিক ঘিরে আছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শালবন। আর এই বনেই আছে অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সীতারকোর্ট বিহার। যা নিয়ে ‘সীতার বনবাস’ বিষয়ক কিংবদন্তি জড়িত। এদিকে নবাবগঞ্জ বিট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫১৭.৬১ হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়ে নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান। ২০০৮ সালে এটাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। তবে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হলেও বরাদ্দ না দেওয়ায় তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এই বনে শাল ছাড়াও সেগুন, গামার, কড়ই, জামসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির গাছগাছড়া রয়েছে। দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক বলেন, ‘একসময় শাপলা-পদ্মে ভরা এই আশুড়ার বিলে অতিথি পাখি আসত। কালের বিবর্তনে এই বিল তার ঐতিহ্য হারিয়েছিল। উপজেলা প্রশাসন বিলটিকে সংস্কার করে সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনছে। বিলে বিদ্যুৎ সরবরাহ, উন্নত শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এটিকে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক সহযোগিতা করছি। সেতুটি পর্যটকদের কাছে টানবে।’ জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, ‘উন্নয়ন বলতে শুধু ইট পাথরের ভবন নয়। সবুজ গাছ, বিশুদ্ধ পানির প্রবাহ, পাখির ডাক, বিল ভরা শাপলা-পদ্মও উন্নয়নের অংশ। এ উন্নয়নকে বলা হয় টেকসই উন্নয়ন। এই উন্নয়ন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।’ নবাবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মশিউর রহমান বলেন, ‘বিলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আঁকাবাঁকা শাল কাঠের সেতুটি পর্যটকদের যেমন আকর্ষণ করবে তেমনি বিলের দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াত সহজতর হবে।’
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়