Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২৫ মে ২০২৫,   জ্যৈষ্ঠ ১১ ১৪৩২

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ১২ জুলাই ২০২২

বিয়ের পিঁড়িতে ওঠার আগেই লাশ হলো কমলগঞ্জের আয়শা

আগামীকাল বুধবার (১৩ জুলাই) বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিলো আয়শার। সে অনুযায়ী নিমন্ত্রণও দেয়া হয়েছিলো সবাইকে। কিন্তু কে জানতো বিয়ের পিঁড়িতে ওঠার আগেই লাশবহনকারী খাটীয়ারায় ওঠতে হবে ছাতিয়াকে। কমলগঞ্জের ছতিয়া গ্রামের মৃত আজাদ মিয়ার মেয়ে আয়শা আক্তার (১৮)।

প্রতিবেশী মৃত কদ্দুস মিয়ার ছেলে কভার্ডভ্যান চালক সালাউদ্দিন সুমনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো আয়শার। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) রাতে গায়ে হলুদ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু শনিবার (৯ জুলাই) দুপুরেই লাশ হলো আয়শা। এলাকায় গরুর ধান খাওয়ার ঘটনায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিবেশী সিরাজ মিয়া ও তার ভাই স্বজনরা।

শনিবার (৯ জুলাই) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। আর ঈদের দ্বিতীয়দিন মঙ্গলবার (১২ জুলাই) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আয়শা।

মঙ্গলবার দুপুরে আয়শার লাশ বাড়িতে পৌঁছলে পরিবারের স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় স্তব্ধ হয়ে যায় এলাকার পরিবেশ। শনিবারের হামলার এ ঘটনায় নিহত আয়েশা আক্তারের মা কনিজা বেগমও আহত হয়েছেন। মেয়ের মৃত্যুর সংবাদে মৌলভীবাজার হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি ফিরেন তিনি। মাথায় অসংখ্য সেলাই নিয়েই মেয়েকে দেখতে ছুটে আসেন তিনি। মেয়ের বিয়ের কথা বলতে গিয়ে বুকফাটা আর্তনাদে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।

জানা গেছে, ছতিয়া গ্রামের মৃত আজাদ মিয়ার দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে আয়েশা আক্তার দ্বিতীয়। কিছুদিন আগে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় একই গ্রামের মৃত জহুর মিয়ার ছেলে রিয়াজ মিয়া। বিয়ের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন আয়েশার পরিবার ও তার চাচা নওশাদ মিয়া। পরে গত শুক্রবার (১ জুলাই) প্রতিবেশী সালাউদ্দিন সুমনের সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয়। বিয়ের দিন তারিখ ছিলো আগামী বুধবার (১৩ জুলাই)।

এদিকে রিয়াজের সাথে আয়শার বিয়ে না মেনে সুমনের সাথে বিয়ে ঠিক করায় এ নিয়ে আয়েশার পরিবারের উপর ক্ষুব্ধ ছিলো রিয়াজের পরিবার। বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) আয়শার চাচা নওশাদ মিয়া স্থানীয় ভানুগাছ বাজার থেকে কোরবানির একটি গরু কিনেন। শনিবার দুপুরে খুঁটিতে রশি দিয়ে বাঁধা গরুটি ছুটে গিয়ে প্রতিবেশী রিয়াজের ভাইয়ের ধান খায়। এ নিয়ে নওশাদের পরিবারের সাথে কথা কাটাকাটির হলে এগিয়ে আসে আয়েশা। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সিরাজ, সামাদ ও রিয়াজ গংরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়।

হামলাকারীরা আয়শা সহ নওশাদের পরিবারের ৫ জনকে কুপিয়ে আহত করে। হামলায় উভয় পক্ষের আহত হন ৮ জন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। আহতদের মধ্যে আয়শা আক্তার সহ ৪ নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য বলেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আয়েশার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আয়শা।

এ ঘটনায় রোববার (১০ জুলাই) দুপুরে নওশাদ মিয়া বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওইদিন রাতেই মামলার দুই আসামি সামাদ ও সিরাজ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ২ আসামিকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের আটকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আইনিউজ/এইচএ

দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

মৌলভীবাজারে কেমন চলছে রেলওয়ে সেবা, মিলছে কী টিকেট?

লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে ট্রেন, যেভাবে উপভোগ করে পর্যটকরা

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়