Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, মঙ্গলবার   ২০ মে ২০২৫,   জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩২

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০
আপডেট: ০৯:২৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আদিম মানুষের আদিম হাতিয়ার

মানব সভ্যতার শুরু থেকেই আধুনিক মস্তিষ্কের অধিকারী মানুষ ছিলো না। সময়ের সাথে ক্রম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে তীক্ষ্ম হতে থাকে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিয় সত্তা। নিজেদের প্রয়োজনে তারা তৈরি নিতে থাকে অনেক কিছু। নতুন নতুন আবিষ্কারের উন্মাদনায় ক্রমশ এগুতে থাকে সভ্য জগতের দিকে।

প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষের আগুন আবিষ্কার যেমন মানুষের ইতিহাসে আলোচিত একটি ঘটনা তেমনি হাতিয়ার আবিষ্কারও ছিলো একটি আশা জাগানিয়া ঘটনা। কেননা, হাতিয়ার আবিষ্কারের ফলেই মানুষ নিজেদেরকে রক্ষা করতে পেরেছিলো জঙ্গল বা গুহাচর প্রাণীদের থেকে। বিস্তৃত করতে পেরেছিলো বেঁচে থাকার সম্ভাবনা।

আদিম মানুষের তৈরি বিপজ্জনক বর্শা

সেনেগালের কেডৌগৌ নামক স্থানে শিম্পাঞ্জিদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণকালে দেখা গেছে, আদিম মানুষেরা গাছের শক্ত ডাল ভেঙে নিয়ে ছাল আর শাখাপ্রশাখা ছাড়িয়ে নিজেদের দাঁতের সাহায্যে ডালের একপ্রান্ত ছুঁচালো করে নিয়ে বেশ বিপজ্জনক ধরনের বর্শা বানিয়ে ফেলে।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এ ধরনের বর্শা প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ হাজার বছর আগে ব্যবহৃত হতো।

জার্মানির ব্রেমেনের কাছাকাছি অঞ্চলেও শিকারিরা ঠিক এ ধরনের বর্শার সাহায্যেই শিকার করত বলে প্রমাণ রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ হাজার বছর আগে গাছের ডালের এ বর্শাগুলো আগুনে সেঁকে আরও শক্ত করে নেয়া হতো বলে ধারণা করা হয়।

তারও আগে খ্রিস্টপূর্ব ২৮০ হাজারের আশপাশের সময়ে গাছের ডালের একপ্রান্তে ছুঁচালো পাথর বেঁধে বর্শা তৈরি করে শিকার করত আদি মানব। এ বর্শা দিয়ে তারা গোটা একটা ম্যামথ শিকার করতেও পিছপা হতো না।

জার্মানির ব্রেমেন অঞ্চলে ঠিক এই জাতীয় বর্শাবিদ্ধ ম্যামথের কঙ্কাল আবিষ্কার সেটাই প্রমাণ করে। সাহারা আর মধ্য আমেরিকায়ও এ ধরনের বর্শার সাহায্যে শিকারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তারপর ধীরে ধীরে মানুষ যখন ধাতুর ব্যবহার শিখল তখন শিকারের ক্ষেত্রে পাথরের বদলে ধাতুর ফলা কাজে লাগাতে লাগল। শিকার করার সুবিধাও বেড়ে গেল অনেকখানি।

আদিম হাতিয়ার হারপুন

শিকারে হারপুন নামের একটি আদিম হাতিয়ারের ব্যবহার আধুনিক কাল পর্যন্ত দেখা গিয়েছে। তবে জানা যায় সর্বপ্রাচীন যে হারপুনটি পাওয়া গিয়েছিলো তা ছিলো প্রায় ৯০ হাজার বছর আগের। হারপুন নামের এই হাতিয়ারটি মূলত মাছ এবং বিভিন্ন পশু শিকারের কাজে ব্যবহার করা হতো। এটি বানানো হতো হরিণের শিঙ এবং বিভিন্ন প্রাণীর শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় দিয়ে। দেখতে অনেকটা তীরের মতো হলেও এটিতে অতিরিক্ত কিছু কাঁটাড় মতো থাকতো। যা শিকারের শরীরে ঢুকার পর মাংসের সাথে হাতিয়ারটিকে গেঁথে রাখতে সাহায্য করে। [caption id="" align="alignnone" width="640"]আদিম হাতিয়ার এর ছবির ফলাফল আদিম মানুষের আদিম হাতিয়ার : হারপুন[/caption] ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর আশপাশের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আদিম আদিবাসীগণ এই হারপুন ব্যবহার করতেন। এছাড়া প্রাচীন প্রস্তরযুগে জাপানের কিছু অঞ্চলেও মাছ শিকারের জন্য লম্বা সূতাযুক্ত এই ধরনের হারপুনের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

নিনদারথালরাদের তৈরি কাঠের হাতিয়ার

পৃথিবীর ইতিহাসে নিনদারথালরা গোষ্ঠীতি প্রাচীন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম। এই নিনদারথালরা নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য কাঠ দিয়ে এক ধরনের হাতিয়ার বানাতো। দুই বছর আগে উত্তর স্পেনের পাহাড়ি অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো বিশ্বের প্রাচীনতম কিছু কাঠের হাতিয়ার। যেই হাতিয়ারগুলো প্রায় ৯০ হাজার বছর আগে তৈরি করেছিল বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাচীন মানবগোষ্ঠী নিনদারথালরা। প্রাচীনতম কাঠের হাতিয়ার কাঠকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য পাথরের সাহায্যে বিভিন্ন আকৃতি দিতো নিনদারথালরা। এরপর সেগুলো শক্ত করার জন্য আগুনের তাপ দেওয়া হতো। মাটি খুঁড়ে খাদ্যের সন্ধান করতে এসব হাতিয়ার ব্যবহৃত হতো।
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়