জাহাঙ্গীর জয়েস
আপডেট: ১০:২২, ২২ মে ২০২১
ইসরায়েলি আগ্রাসন: আশার আলো কোথায়?
বলার অপেক্ষা রাখে না এটা একটা অসম লড়াই। একদিকে নিরস্ত্র জনতা। খুঁটির জোর নেই। কার্যত নিঃসংগ। অন্যদিকে সশস্ত্র বাহিনী। অসম্ভব খুঁটির জোর। প্রত্যক্ষভাবে পাশে আছে দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র।
চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন। জ্বলছে গাজা। শিশু, নারীসহ লাশের স্তুপ বড় হচ্ছে। শত শত মানুষ আহত হচ্ছে প্রতিদিন। চোখের সামনে দালানসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। লাখো মানুষ গৃহহারা। গৃহহীন পরিবারগুলো জাতিসংঘ পরিচালিত বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিচ্ছে।যেখানে খাবার, পানি, পোশাকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।এমতাবস্থায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রাম। আশার আলো কোথায়?
বলার অপেক্ষা রাখে না এটা একটা অসম লড়াই। একদিকে নিরস্ত্র জনতা। খুঁটির জোর নেই। কার্যত নিঃসংগ। অন্যদিকে সশস্ত্র বাহিনী। অসম্ভব খুঁটির জোর। প্রত্যক্ষভাবে পাশে আছে দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। পরোক্ষভাবে আরো অনেকে। এমনকি আরবের শক্তিশালী, ধনী দেশগুলোও। আগ্রাসন বন্ধ এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন হলে সেটা আটকে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতির কথা বলছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ান নেতানিয়াহু বলছেন যুদ্ধ চলবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কথা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী শুনবেন না; নিরাপত্তা, সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) জাতিসংঘের মহাসচিব গাজায় যুদ্ধ বিরতির কথা বলেছেন। মনে প্রশ্ন জাগে, এটা কি আসলে কোনো যুদ্ধ? একপক্ষ অসীম ক্ষমতাধর। সমরাস্ত্রে সজ্জিত। অন্যপক্ষের যা আছে তাকে খড়কুটো বলা যায়। এটাকে স্রেফ একপেশে একটা মাস্তানি ছাড়া আর কিছু বলেতো মনে হয় না।
অন্যদিকে যারা এটাকে ইহুদি বনাম মুসলমানের ধর্মযুদ্ধ বানিয়ে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা মূল বিষয় এড়িয়ে আরেক অশান্তির বীজ রোপণ করছেন। যাইহোক আবারও বলি আশার আলো কোথায়?
আপাত আশার আলো হতো যদি মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী রাষ্ট্রসমুহ একজোট হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারতো কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। বরং এখন পর্যন্ত আরব লীগ, ওআইসি বলে কোনো কিছু আছে সেটাই বুঝা যাচ্ছে না। এরচেয়ে সচরাচর যা হয় চীন, রাশিয়া নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি যে, চীন যুক্তরাষ্ট্রকে দায় নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার কথা বলেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা বন্ধের কথা বলেছেন। কারো নাম উল্লেখ না করলেও বিশ্বরাজনীতি সম্পর্কে যারা অল্পবিস্তর খোঁজ রাখেন তারা সেটা ভালো করে বুঝেন।
বস্তুত আশার আলো হচ্ছে দেশে দেশে বিক্ষোভরত জনতা। যদিও আমরা অতীতেও দেখেছি দেশে দেশে বিরোধীতাসত্ত্বেও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের লাখো মানুষের বিরোধিতাকে পাত্তা না দিয়ে তারা আফগানিস্তান, ইরাকে যুদ্ধ করেছে। যার খেসারত এখন পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান ও ইরাকের মানুষ। তবুও আশাবাদী হতে চাই। বিশেষ করে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশের মানুষের ব্যাপক বিক্ষোভ। খোদ যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলের ভেতর যে বিক্ষোভ সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এই বিক্ষোভগুলো যতো বড় হবে আশার আলো ততো বাড়বে। এরাই একদিন যুদ্ধবাজদের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে এই বিশ্বাস করতে চাই। সেটা হয়তো কালপরশু নয়।
তবে একদিন নিশ্চয়ই সেই সুদিন আসবে। একটি কবিতা দিয়ে শেষ করছি এ লেখা-
একদিন সুদিন আসবে
মেহেদি পাতার মতো রঙিন হবে আমাদের জীবন
পায়ে হাঁটা সব পথ কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া ফুলে ফুলে
ছেয়ে যাবে...
নদীচরের বালুঘরের মতো ভেঙে পড়বে
শোষণের যতসব গুলাঘর
সমস্ত অস্ত্রকৌশল ভুলে যাবে দুনিয়া
শ্রম আর ঘামে কেবল বেড়ে ওঠবে ফুলের মাঠ
বৃক্ষ আর মিষ্টি রোদ্দুরে হেসে ওঠবে সমস্ত দুনিয়া...
পুনশ্চ: আজ শুক্রবার (২১ মে) ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা এসেছে। এটা সাময়িক স্বস্তি। স্থায়ী সমাধান স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান। বিশ্বের মানবতাবাদী সকল মানুষের সোচ্চার কণ্ঠস্বরই সেটা সম্ভব করে তুলতে পারে।
জাহাঙ্গীর জয়েস, কবি ও লেখক
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- অভ্যাস বদলান: করোনা মুক্ত থাকুন