Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ১৯ মে ২০২৫,   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩২

হেলাল আহমেদ, আইনিউজ

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ৩০ আগস্ট ২০২২
আপডেট: ১৭:৩১, ৩০ আগস্ট ২০২২

৬ দিন বাগানে কাজ করে একদিন কলেজে যান চা শ্রমিক খোকন

সপ্তাহে ছয়দিন বাগানে কাজ করে ছুটির দিনে কলেজে যান চা শ্রমিক খোকন ভুমিজ

সপ্তাহে ছয়দিন বাগানে কাজ করে ছুটির দিনে কলেজে যান চা শ্রমিক খোকন ভুমিজ

বাপ-মা হারা এক চা শ্রমিকের সন্তান খোকন ভুমিজ। পড়াশোনা করছেন মৌলভীবাজারের সৈয়দ শাহ মোস্তফা কলেজে। স্বপ্ন দেখেন কথিত 'কুলি' সমাজ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। কিন্তু তার এই স্বপ্ন পূরণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক অসচ্ছলতা। চা শ্রমিকের কাজ করে পাওয়া স্বল্প মজুরি দিয়ে যেখানে তার পেট চালানোই দায় সেখানে পড়াশোনা হবে কীভাবে? প্রশ্ন চা শ্রমিক খোকন ভুমিজের। তবু অদম্য ইচ্ছার ফলে অভাবের মাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন খোকন। সপ্তাহে ছয়দিন বাগানে কাজ করেন আর ছুটির দিনে কলেজে যান ক্লাস করতে।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দেওরাছড়া চা বাগানে দেখা মিলে খোকন ভুমিজ এবং তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে। বড় ভাই সুজিত ভুমিজও এই বাগানেরই একজন চা শ্রমিক। ভাইয়ের পড়াশোনার আগ্রহ দেখে নিজে না পড়ে ভাইকে ভর্তি করে দিয়েছেন কলেজে। তিনিও চান তার ভাই পড়াশোনা করুক, চা শ্রমিক জীবনের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।

খোকন ভুমিজ বলেন- শহরে গেলে অনেকেই কুলি বলে ডাকে, বাগানি বলে ডাকে। এটা শুনতে খারাপ লাগে। আমি পড়াশোনা করে দেখাতে চাই, সমাজের কথিত কুলি সমাজ থেকেও শিক্ষা অর্জন করা যায়। কিন্তু মাঝেমাঝে পড়াশোনা থমকে যায় টাকার জন্য।

আইনিউজের সাথে আলাপকালে সুজিত ভুমিজ বলেন- ওর (খোকন ভুমিজ) যখন কলেজে ভর্তি হবার সময় আমাদের মা তখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মরণশয্যায়। একদিকে মায়ের চিকিৎসা অন্যদিকে ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ। যা বেতন পেতাম তা দিয়ে আসলে কিছুই হতো না। ঘরে কাউকে না জানিয়ে বাইরে বাইরে কাজ করেছি, ওভারটাইম করেছি। মাকে বাঁচাতে পারিনি। বাঁচানোর মতো পয়সা ছিলোনা। মা মরে গেলো। তবু খোকনের পড়াশোনা বন্ধ করিনি।

‘হাসপাতালে গেলেই ডাক্তারবাবু হাতে প্যারাসিটামল ধরিয়ে দেয়’

কথা বলতে বলতে সুজিত ভুমিজের গলা ভারী হয়ে আসে। ভিজা গলায়-ই বলতে থাকেন- 'আমার ভাই নিজেও অনেক কষ্ট করে। ওর পড়ালেখা করার অনেক ইচ্ছা। ছয়দিন বাগানে কাজ করে, ছুটির দিনে কলেজে যায়।

খোকন ভুমিজের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন- ছোটকালেই বাবা মারা গিয়েছিলেন। পরে মাও মারা গেলেন। দাদা-ই আমার সব খরচ জুগিয়েছে। খেয়ে না খেয়ে আমার এডমিশনের টাকা জোগাড় করে দিয়েছে। বড় হবার পর আমিও চা বাগানের কাজ করতে শুরু করি। কখনো পাতা তুলি, কখনো বাগানে মাটি কাটি। পড়াশোনাদ খরচের জন্য টাকার দরকার হয়। টাকার জন্য ছয়দিনই কাজ করি। ইচ্ছে করলেও প্রতিদিন কলেজে যেতে পারিনা। ছুটির দিনে কলেজে যাই।

যে টাকা মজুরি পাই তা দিয়ে শহরের ডাক্তারের ভিজিটের টাকাও হয়না

মি. খোকন বলেন- বাগান মালিক কতৃপক্ষ চা শ্রমিক সন্তানদের শিক্ষা খরচ দেয় ক্লাস ফাইভ (পঞ্চম শ্রেণী) পর্যন্ত। এরপরের খরচ আমাদেরকেই চালাতে হয়। প্রতিদিন বাগান থেকে কলেজে গেলে একশো টাকার মতো খরচ হয়। এই টাকা আমি কোথায় পাবো? তাই ছয়দিন বাগানে কাজ করি। আর ছুটির দিন কলেজে যাই।

চা শ্রমিকদেরকে বাগানি, কুলি ডাকা হয় উল্লেখ করে খোকন ভুমিজ বলেন- শহরে গেলে অনেকেই কুলি বলে ডাকে, বাগানি বলে ডাকে। এটা শুনতে খারাপ লাগে। আমি পড়াশোনা করে দেখাতে চাই, সমাজের কথিত কুলি সমাজ থেকেও শিক্ষা অর্জন করা যায়। কিন্তু মাঝেমাঝে পড়াশোনা থমকে যায় টাকার জন্য। বাগানের অনেকে অনেক সময় সাহায্য করেন যেন আমার পড়াশোনা বন্ধ নাহয়। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

আইনিউজ/এইচএ

আইনিউজে আরও পড়ুন-


বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS

হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS

আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়