অপরাজিতা অর্পিতা
আপডেট: ২২:৫০, ২২ আগস্ট ২০২১
কবিতা
পিচঢালা রাস্তায় ফেলে আসতে হয় কিছু ম্লান হয়ে যাওয়া অনিবার্য অধ্যায়
(১)
স্মৃতির পিছুটান
অপরাজিতা অর্পিতা
কিছু স্মৃতি জিইয়ে রাখতে নেই
ফেলে আসতে হয় পিছনে,
কিছু পিছুটানের হাত না চাইতেও ছেড়ে দিতে হয় নিঃশব্দে,
অধরা হাতের সাথে সব সম্পর্ক ছেদ করে ভুলে যেতে হয়, কিছু মন কেমনের ক্ষণ।
অস্তিত্বের সাথে লেপ্টে থাকা স্মৃতিগুলো কারণে কিংবা অকারণে যদিও পীড়িত করে প্রায়ই,
তবুও কাঠফাটা রোদে পিচ ঢালা তপ্ত রাস্তায় ফেলে আসতে হয় কিছু ম্লান হয়ে যাওয়া অনিবার্য অধ্যায়।
বিচ্ছেদের পর আর কখনো দেখা হবার কথা ছিলনা আমাদের।
অথচ প্রায়শই আমাদের দেখা হয়ে যায়,
চেনা শহরের আনাচে কানাচে;
পরিচিত ক্যাম্পাস, গলির মোড়ের বইয়ের দোকান, ক্যান্টিন, চার রাস্তার সিগনাল কিংবা বাসস্টপে।
তোমাকে আর কখনো হলুদ পাঞ্জাবিতে দেখবোনা ভেবেছিলাম।
অথচ হলুদ রঙের নানা রকম ভ্যারিয়েশনের পাঞ্জাবী এখন তোমার দখলে।
কেবল তোমার উপহারের নীল শাড়িটায় আমার আর নেই।
তাতে আমি মোটেও আশাহত নই;
ফেলে আসা পদচিহ্নের মতো অনেক অপ্রাপ্তি যে ছেড়ে এসেছি পিছনে।
তাই, প্রেম অপ্রেমের কোন হিসাব আর আমি করিনা।
স্মৃতির পাতায় আমার না মেলানো অংকগুলোই থাকুক নয়তো
আগুনে পুড়েছি বহুবার,
ভালোবাসার খেলায় হেরেছি তার চেয়ে বেশি।
রয়ে, সয়ে, ধাক্কা খেয়ে বার বার উঠে দাঁড়িয়েছি, তবুও আমার উৎসাহের কোন কমতি নেই।
নতুন করে তোমাকে ভালবাসার জন্য আমার কোন ক্লান্তি নেই।
(২)
একদিন সুন্দরী হবো
অপরাজিতা অর্পিতা
একদিন হঠাৎ করে সুন্দরী হয়ে যাবো,
দুধে আলতা গায়ের রঙ, মেঘ বরণ কেশ, কাজল কালো চোখ আর মুক্ত ঝরা হাসির অধিকারিনী হবো।
সমস্ত কবি সাহিত্যিকরা আমাকে নিয়ে কাব্য চর্চায় নেমে যাবে তখন।
আমার রূপমুগ্ধ সবাইকে নিয়ে বসবে আলোচনার আসর।
সমস্ত সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সন্দেহাতীত ভাবেই প্রথম হয়ে যাবো সেদিন।
একদিন হঠাৎ করেই সুন্দরী হয়ে যাবো,
সুউচ্চ ছিপছিপে গড়নে কোমর পর্যন্ত নেমে আসবে ঝলমলে চুল,
ছোটখাট ব্রণ ফুসকুড়ি, বলীরেখা, চোখের নিচের কাল দাগ কোন কিছুই থাকবেনা।
সমস্ত চেহারা জুড়ে থাকবে এক নয়নকাড়া লাবণ্য।
একদিন সত্যি সত্যিই সুন্দরী হয়ে যাবো,
সমস্ত অসুন্দরী তকমা মুছে ফেলে হয়ে যাবো সুন্দরীদের প্রথমা।
যার কোনদিন বয়স বাড়বে না,
চুল পড়বে না, দাঁত নড়বে না।
দেহে নামবে না কোন ক্লান্তির ছাপ,
যার মুখের সজীবতা থাকবে অমলিন প্লাস্টিকের পুতুলের মতো।
সন্তান জন্ম দেওয়ার কোন চিহ্নই থাকবে না যার শরীরে।
একদিন অসহ্য রকমের সুন্দরী হবো,
হাজারো পুরুষের স্বপ্নের রমনী হয়ে
তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে পাড়ি জমাবো
অনেক অনেক সাধারণ অসুন্দর মেয়েদের ভীড়ে।
(৩)
সে আমি আমরা
অপরাজিতা অর্পিতা
বড্ড নিঃসঙ্গ সে, ধানক্ষেতে দাঁড়ানো কাকতাড়ুয়ার মতো।
হঠাৎ একদিন দেখা হলো অচেনা অনেকের ভীড়ে চেনা শহরের কোন গলিতে;
মেটে রঙা শাড়ি আর সাদা পাঞ্জাবিতে।
তার চোখে তীব্র হাহাকার আর আমার গভীর শূণ্যতা।
সামনাসামনি-মুখোমুখি দুজন,
ধূমায়িত কফির পেয়ালা আর সিগারেটের ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে আসা মুখ।
তার দৃষ্টি ছুঁয়ে আমার ঠোঁটে মরে যাচ্ছে বেনসন,
আমি দেখছি গোলাপি লিপস্টিক ভেদ করে পুড়ে যাওয়া ঠোঁট, গরম কফির চুমুকে।
ব্ল্যাক কফির খালি কাপ বলে যায় অনেক কথা,
পুরোনো অনেক স্মৃতি,
সমানুপাতিক সম্পর্ক;
অথচ দুজনের দৃষ্টির যোগফল শূণ্য।
শুকনো গলা খাকরির শব্দে ভাঙলো নিরবতা।
"কি এতো ভাবছিলেন! পুড়ে গেলো যে!
এতো আনমনা হলে কি চলে!"
সিগারেটের জ্বলে যাওয়া শেষ অংশে পুড়ে গেছে আমার হাতের আঙ্গুল।
যতোটা না পোড়া আঙ্গুলের জ্বালা,
তার চেয়ে অনেক বেশি পোড়ায় তার চোখের জল।
আমি প্রশ্ন রাখলাম — "হঠাৎ চোখে জল কেন?"
সে বলল — পয়ত্রিশ বছর পর আপনার জন্মদিনে
প্রিয় বেনসন আর আপনারই ফেলে দেওয়া দিস্তা খানেক নাটকের পান্ডুলিপি
নিয়ে যদি আমি জিগ্যেস করছি —
"আচ্ছা, এখনো কি আপনি আমার চিৎকার শুনতে পান?"
উত্তর পাবো কি!
কাষ্ঠ হেসে উত্তর দিলাম,
"যেদিন আমার লেখা কোন একটি নাটক মঞ্চস্থ হবে সেদিন আমিও চিৎকার করে বলবো, "ভালবাসি"
(৪)
শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধু
অপরাজিতা অর্পিতা
ঝলমলে রৌদ্র উজ্জ্বল প্রভাতে তোমার শোক মিছিলে এসে মনে হলো,
কে আমরা এমন বিহবল শোকে?
কেন আমাদের চোখের পাতা ভিজে উঠছে বারবার?
কেন আমাদের হৃদয় জুড়ে আজ এতো শূন্যতা, এতো হাহাকার!
বিপন্ন, বিবর্ণ এই বদ্বীপে ফুল ফোটানো আর সুর জাগানোর তুমিই তো প্রধান কান্ডারী,
তুমিই জ্বেলেছিলে মশাল বুকের ভিতরে,
শুনিয়েছিলে স্বাধীন হবার মন্ত্র,
"রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো,
এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ! "
একটি উজ্জ্বল প্রভাতে তুমিই তো তুলে দিতে চেয়েছিলে লাল সবুজের স্বাধীন নিশান।
তোমাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি টুকটুকে লাল গোলাপ ফুটেছে আজ,
একটি নতুন শাখা গজিয়েছে কালবৈশাখীতে ভেঙে যাওয়া গাছে,
মৃত্যঞ্জয় গীতিকা গেয়ে চলেছে পাখ পাখালি।
গুচ্ছ গুচ্ছ চাঁপাফুল আর চৈত্রের জ্বলন্ত সূর্যের মতো
তোমার স্মৃতি উড়ে বেড়াচ্ছে মস্তিষ্কের পরতে পরতে,
স্মৃতি বিস্মৃতির শিরায় শিরায়।
কারন তুমি মানেই তো স্বাধীনতা,
তুমি মানেই বুক ভরে বেঁচে থাকা,
তুমি মানেই তো রক্তে মিশে থাকা আমার সোনার বাংলাদেশ।
আইনিউজ/এসডি
আইনিউজ ভিডিও-
তালিবানি যুগের আগে যেমন ছিলেন আফগান নারীরা
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- আজ বাইশে শ্রাবণ
- পারস্যের কবি জালাল উদ্দিন রুমির প্রেম দর্শন
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা