মো. রওশান উজ্জামান রনি
বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন । ছবি- সংগৃহীত
বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন। নিশ্চয়ই কেউ একজন নিজ হাতে ট্রেনের জানালায় পেট্রোল ছুড়ে মেরেছিলো। নিশ্চয়ই কেউ একজন সজ্ঞানে আগুনটা ধরিয়ে দিয়েছিলো। নিশ্চয়ই কেউ একজন অনেক পরিকল্পনা করে কাউকে দিয়ে কাজটা করিয়েছিলো। কোনো দলের হয়ে, কয়টা টাকার জন্য বা কোনো একটা স্বার্থ হাসিলের জন্য কিংবা এমনিই।
বাড়ি ফিরছিলো ওরা। যেমন করে মাঝে মাঝেই ট্রেনে করে বাড়ি ফিরি আমরা সবাই। ব্যাগ ভর্তি কাপড় চোপড়, বুকের ওপর প্রিয় বাচ্চাটা, পাশের সিটে জীবনসঙ্গী। বাসা থেকে মা ফোন দিয়ে নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করেছিলো, "কদ্দূর আসছো?", ওরা উত্তর দিয়েছিলো, "এইতো কমলাপুর, একটু পরেই ট্রেন থেকে নামবো। ভাত খাবো এসে।"
মা ভাত নিয়ে অপেক্ষা করে আছে। ওরা পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। ট্রেনের জানালা দিয়ে যে মানুষটার পোড়া মৃতদেহটা ঝুলে আছে, ওটাই বাংলাদেশ। এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ ছিলো। মাঝে মাঝে ভুলে যাই। মাঝে মাঝেই মনে করিয়ে দেওয়া হয়।
আমরা আবার ভুলে যাবো, কাল বা পরশু নতুন ইস্যু এলেই ভুলে যাবো। শুধু ভুলতে পারবে না সেই মানুষটা, যে ভাত নিয়ে বসে রইলো, কিন্তু সেই ভাত খাওয়ার মানুষটা ট্রেনের জানালায় পোড়া লাশ হয়ে ঝুলে রইলো।"
ট্রেনের ভেতরে আগুনে পুড়ে গেছে নিজের বউ এবং বাচ্চা। নিজেও বাচার জন্য আকুতি করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাচতে পারেন নি। পেছনে আগুন, জানালা দিয়ে ঝুলে ছিলো তার হাত ও মাথা। এরচেয়ে হৃদয়বিদারক আর কি হতে পারে।
দেশের ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়া না হওয়ার সাথে হয়ত এই পরিবারের কোনোও সম্পর্কই ছিলো না। কিন্তু সেই ক্ষমতা কেন্দ্রিক ঝামেলাতেই তাদের প্রাণ গেলো বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন।
:
যাদের জন্য বেঁচে থাকি,
তাদের ছাড়া কিভাবে বাঁচি?
কমোন কিছু প্রশ্ন- বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন।
১. চলন্ত ট্রেনে আগুন লাগছে। ২০ মিনিট+ পর ট্রেন থামালো চালক। এতো লেট হলো কেনো?
২.হঠাৎ করেই তো পুরো বগিতে এরকম আগুন লাগা অসম্ভব। যখন আগুনের উৎপত্তি হইছে তখন কেও কি দেখে নি। ট্রেন এ তো অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকে। সেগুলি ব্যবহার করল না কেন?
৩. ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যেতে ১ ঘন্টা+ লেট হলো কেনো? কেউ জ্যাম এর অজুহাত দিবেন না। কারণ এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ।
৪. প্রত্যেক কামরায় সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে চাইনিজ নিউ কোচগুলোতে। সে সিসিটিভি ফুটেজ গেলো কই?
৫. প্রত্যেকটা বগিতে একজন করে এটেনডেন্স থাকার কথা। তারা তখন কি করছিল?
৬.দেশ এ এতো নিরাপত্তা কর্মী থাকতে এরকম একের পর এক দূর্ঘটনার কেনো হচ্ছে?
ট্রেনে আগুন লেগেছে এটা নিয়ে অনেকেই দেখছি পোস্ট করছে পুরুষের ভালোবাসা, পরুষ মানুষ ইত্যাদি। আমাদের কি উচিত ছিলো না পোস্ট টাকে ভালোবাসার দিকে না নিয়ে, কেন আগুন লাগলো কে বা কারা এর সাথে জড়িত? কিছু দিন পর পর কেন বার বার ট্রেন লাইনের নাট খুলে ফেলা, ট্রেন লাইনের পাত খুলে ফেলে করার করছে এইসব?? কারা সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে?? কারা এ ঘটনার জন্য দয়ি,,, আমাদের উচিত ছিলো এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা?
একজন কিছু খোঁজ করছিলেন বেনাপোল এক্সপ্রেসের ভিতর। তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো কি খুঁজছেন? তিনি বলছেন আমার পাসপোর্টটা হারিয়ে গিয়েছে। লোকটা কেঁদে কেঁদে বলছে আমার ৭ তারিখ ফ্লাইট। হয়তো জীবনের সব সম্বল দিয়ে এমনকি ঋণগ্রস্থ হয়ে বিদেশে কাজের জন্য সব গোছগাছ করে যাচ্ছিলেন। হায়েনারা তার সব স্বপ্ন সাধ নিমিষেই পুড়িয়ে ছাই করে দিল। বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকুও হারিয়ে গেল। পরিবারের সব আশা শেষ করে দিল। ট্রেনের জানালায় ঝুলে থাকা লোকটাকে যখন বাইরের মানুষজন বলছিল নেমে পড়েন ট্রেনে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। সে বলছে , আমি বেঁচে থেকে কি করবো আমার স্ত্রী সন্তান মারা গিয়েছে।তার হাতও ধরেছিল একজন কিন্তু তিনি নামেননি নামার চেষ্টাও করেননি।
বাবার মৃত্যুতে ১০ দিন আগে পাঁচ মাসের ছেলে সৈয়দ আরফানকে নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন এলিনা ইয়াসমিন। তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলায়। বাবার দাফন শেষে ভাই-ভাবির সঙ্গে পাঁচ মাসের সন্তানকে নিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকায় ফিরছিলেন। কিন্তু রাজধানীতে ঢুকতেই ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সেই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয় এলিনার দেহ। ভাগ্যক্রমে বেঁচে আছে তার শিশু সৈয়দ আরফান।
এই বাবা তার ছেলে'কে খুঁজে পাচ্ছেন না। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া তার ছেলে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ছিল। আগুন লাগার পর থেকে ফোন বন্ধ। এই বাবা এখন ঢাকার এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন তার ছেলেকে খুঁজে পেতে। আপনারা আর কিছু না পারেন। অন্তত তার ছেলেকে খুঁজে দিন।
খুজে পেলে প্লিজ কল : 01724164611
ঐ ট্রেনের চ বগিতে থাকা তার বোন (সৌমি) ছিল। গত রাত ধরে তার কোন খোঁজ পাচ্ছি না। ঐ বগিতে বা ঐ ট্রেনে যাতায়াতকারী কেও যদি তাকে দেখে থাকেন তাহলে আমাদেরকে দ্রুত সন্ধান দিলে আমরা খুবই উপকৃত হব। যোগাযোগ : ০১৬১৪৬৬২১৫১
এঘটনায় রিজভী বলেন, ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগিয়ে হতাহতের ঘটনা নিঃসন্দেহে নাশকতামূলক কাজ এবং মানবতার পরিপন্থী এক হিংস্র নিষ্ঠুরতা।’ বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে নিহত চার জনের মধ্যে দুইজন শিশুও রয়েছে৷ আগুনের এই ঘটনাকে নাশকতা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ৷
আইনিউজ/আর
আরও পড়ুন
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের