Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫,   পৌষ ২ ১৪৩২

আই নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

রপ্তানি পণ্য চুরি করে করে শত কোটি টাকার মালিক মৌলভীবাজারের সাঈদ 

মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদ (বামে বক্সের ভেতর)। ছবি- সংগৃহীত

মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদ (বামে বক্সের ভেতর)। ছবি- সংগৃহীত

মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদ, তার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারেও হলেও নিজ কর্মক্ষেত্রে তিনি সিলেটি সাঈদ নামেই পরিচিত। নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন একটি চৌকস চোরের দলকে। তার নেতৃত্বে বিদেশে রপ্তানির জন্য পোশাক বন্দরে নেয়ার পথে মহাসড়কে গাড়ি আটকে চুরি, ডাকাতি করতো একটি দল। আর এভাবে চুরি করতে করতেই সিলেটি সাঈদ বনে গেছেন শত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক।  

একটি রপ্তানির পোশাক চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে মো. সাহেদকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব। র‍্যাব বলছে, দুই দশকে রপ্তানির পণ্য চুরি করে সাহেদ শত কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন।

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে সাহেদ ও তাঁর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ইমারত হোসেন সজল, শাহজাহান ওরফে রাসেল ওরফে আরিফ ও হৃদয়।

মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারে হলেও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে পণ্য চুরিতে সুবিধা পাওয়ার জন্য তিনি থাকতেন চট্টগ্রামে। তবে তাঁর পরিবারের বসবাস মৌলভীবাজারেই।

জানা গেছে, এই টাকা দিয়েই তিনি নিজের জেলা মৌলভীবাজার সদরের দুর্লভপুরে দুটি বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন। তার একটি ২০ একর জমি নিয়ে। তাঁর এই বাগানবাড়িতে ট্রিপ্লেক্স ঘর, একটি মাছের খামার ও দুটি হাঁস–মুরগির খামার রয়েছে। এই বাড়িতে সাহেদের ছোট স্ত্রী থাকেন।

বাড়িটি তৈরিতে সাহেদ ১৫ কোটির বেশি টাকা ব্যয় করেছেন বলে র‍্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, দুর্লভপুর গ্রামেই আরেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ি করেছেন সাহেদ। ওই বাড়িতে থাকেন তাঁর বড় স্ত্রী। এ ছাড়া নামে-বেনামে সাহেদের অন্তত ২০টি কাভার্ড ভ্যান রয়েছে।

র‍্যাব বলছে, মহাসড়কে রপ্তানির পোশাক চুরির বেশির ভাগ ঘটনা সাহেদের নেতৃত্বে অথবা পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়। তাঁর দলে ৪০ থেকে ৫০ জন সদস্য রয়েছেন। চক্রে অসাধু গাড়িচালক, চালকের সহকারী, গুদামমালিক, গুদাম এলাকার আশ্রয়দাতা, চুরির মালামাল নামাতে দক্ষ কুলি সর্দারসহ একদল শ্রমিক রয়েছেন।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, সাহেদের চক্রের সদস্যরা রপ্তানির পোশাক পরিবহনে সম্পৃক্ত কাভার্ড ভ্যানের চালক ও তাঁর সহকারীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে রপ্তানির পণ্য চুরির কাজে উৎসাহিত করা হয় চালক এবং তাঁর সহকারীকে। চুরির আগে চালকদের মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যের নমুনার ছবি তুলে চক্রের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হত। প্রতিটি চুরিতে তাঁদের লক্ষ্য থাকত ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার পোশাক। একটি চুরির পর চালককে ৩০ হাজার, তাঁর সহকারীকে ২০ হাজার, গুদামের মালিককে ৫০ হাজার এবং গুদাম এলাকায় এই চক্রের আশ্রয়দাতাকে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হতো।

র‍্যাবের ভাষ্য, রপ্তানির পোশাক কাভার্ড ভ্যানে ওঠানোর সময় তা কাগজের বাক্সে (কার্টন) রাখা হয়। একটি বাক্সে অনেক পোশাক থাকে। চোরেরা একেকটি বাক্স থেকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পণ্য চুরি করেন। এরপর বাক্সে সমপরিমাণ ঝুট বা অন্য কিছু ভরে রাখা হয়। কারখানা থেকে বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার আগে কাভার্ড ভ্যানে তালা লাগিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হয়। চোর চক্রের সদস্যরা তালা না ভেঙে কাভার্ড ভ্যানের নাটবল্টু খুলে ফেলতেন। এতে কাভার্ড ভ্যানের উপরিকাঠামোই খুলে যেত। এরপর তাঁরা মালামাল সরিয়ে নিতেন। এভাবে সিল ও তালা অক্ষতই থাকে। বন্দরে পণ্য নামানোর সময় চুরির বিষয়টি আর ধরা পড়ে না।

গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব বলছে, ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর গাজীপুর থেকে পোশাক কাভার্ড ভ্যানে তুলে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কাভার্ড ভ্যানে পণ্য ঢোকানোর পর কারখানা কর্তৃপক্ষ চালক শাহজাহানকে নমুনা হিসেবে কিছু সোয়েটার দেয়। শাহজাহান নমুনার ছবি তুলে সাহেদের কাছে পাঠান। সাহেদ এই ছবি তাঁর অন্যতম সহযোগী তাওহীদুল ওরফে কাউছারের কাছে পাঠান। কাউছার যোগাযোগ করেন চালক শাহজাহানের সঙ্গে। কাউছারের নির্দেশে মধ্যরাতে ডেমরার মিরপাড়ার আয়েশা প্যাকেজিং ভবনের গুদামে কাভার্ড ভ্যান নিয়ে যান শাহজাহান। সেখানে কুলিসর্দার নাজিম, স্থানীয়ভাবে আশ্রয়দাতা মাসুম ওরফে মাসুদসহ আরও পাঁচ–সাতজন প্রতিটি কার্টন থেকে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পণ্য সরিয়ে নেন। পরে পুনরায় প্যাকেজিং করে কাভার্ড ভ্যানটি বন্দরের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কাউছার, নাজিম ও মাসুমকে গত ২৪ ডিসেম্বর অন্য একটি চুরির মামলায় ঢাকার ডেমরা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁরা এখন কারাগারে আছেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ইমারত হোসেন (সজল) ২০১২ সাল থেকে ঢাকার উত্তরায় গার্মেন্টস পণ্যের ‘স্টকলটের’ ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসা করতে গিয়েই সাহেদ, কাউছারসহ চোর চক্রের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। পরে সাহেদের কাছ থেকে কম দামে চুরির পণ্য কিনে বিক্রি শুরু করেন। গত দুই বছরে ১৫০ থেকে ২০০টি চুরির পণ্য কিনে বিক্রি করেছেন তিনি। এর মধ্যে অনেক পণ্য তিনি বিদেশেও রপ্তানি করেছেন। চুরির পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে তিনি কোটি টাকার বেশি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন।

আই নিউজ/এইচএ 

আই নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও দেখুন

জলময়ূর পাখির সাথে একদিনের দারুণ গল্প | A story with Water Peacock

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়