Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৫ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ৩০ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২৯ জুন ২০২২
আপডেট: ২০:৩২, ২৯ জুন ২০২২

ছাত্রকে প্রেমিকার সঙ্গে ‘অপ্রীতিকর অবস্থায়’ দেখে ফেলায় শিক্ষক উৎপলকে হত্যা

সাভারে হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার মূল কারণ ছিল ‘প্রেমিকার সঙ্গে অভিযুক্ত ছাত্রকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে ফেলা’। নিহত উৎপলের সহকর্মী, শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী, স্কুলের স্টাফ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

এ হত্যা মামলায় মূল আসামি আশরাফুল ইসলাম জিতুকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও বাবা উজ্জ্বল হাজীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার গভীর রাতে আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি বিশেষ দল কুষ্টিয়ার কুমারখালী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

বুধবার সকালে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ওই হত্যা মামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠালে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম কামরুজ্জামান।

যে স্ট্যাম্প দিয়ে শিক্ষক উৎপলকে পেটানো হয়েছে, সেটিও জব্দ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়

কী কারণে এভাবে উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের সামনের মার্কেটের মালিক ইমান উদ্দিনের বলেন, ‘আশরাফুল ইসলাম জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনের ব্যবসায়িক পার্টনার আছেন এক ব্যক্তি। তাদের হোটেল ব্যবসা আছে। তার শ্যালিকার ছোট বোন একই কলেজে পড়ে। তার সঙ্গে ছাত্রের আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক। কিছুদিন আগে স্কুলের একটি কক্ষে তাদের অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখার পর শিক্ষক উৎপল তাদের শাসন করেন। ওই মেয়ের পরিবারকে তিনি ফোন করে সব জানিয়ে সতর্কও করেন। মেয়েটি ছেলেটিকে এসব বিষয় জানালে সে ক্ষুব্ধ হয়েই ওই শিক্ষককে পিটিয়েছে। সেদিন তারা তিনজন ছিল। পেটানোর পর চারজন এক সঙ্গে হেঁটে চলে যায়’।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইম ইসলাম বলেন, ‘জিতুর সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। স্যার সেই মেয়ের বাসায় ফোন করে শক্তভাবে বিচার দিয়েছিলেন যেন মেয়েটা ওই ছেলের সঙ্গে না মেশে। এ ক্ষোভ থেকে জিতু স্যারকে খেলার দিন পিটিয়েছে’।

কলেজের হিসাবরক্ষক পারুল আক্তার বলেন, ‘কিছুদিন আগে স্কুলের একটি কক্ষে ওই ছেলে ও মেয়েটাকে অপ্রীতিকর অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আমরা সেভাবে বিস্তারিত জানি না। মেয়েটা আমাদের কলেজের এক শিক্ষকের ছোট বোন। এর বেশি আর কিছু জানি না আমি’।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার (বিপিএম, পিপিএম)।

বুধবার দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুছ আলী কলেজ পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি এ কথা জানান।

মামলায় অভিযুক্ত ছাত্রের বয়স দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলায় কী দেখানো হলো এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। প্রয়োজনে ডাক্তারি পরীক্ষা করে নিয়ে আসব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করি ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য। এ ছাড়া তদন্তে ধীর গতির কোনো কিছু নাই। ঘটনা জানার পর থেকেই পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। পুলিশের কার্যক্রম প্রথম থেকে স্বাভাবিক গতিতে চলছে। এরই মধ্যে আমাদের বেশ কয়েকটি টিম মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। খুব শিগগিরই মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে।

এ সময় ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, অভিযুক্ত ছাত্র দশম শ্রেণিতে পড়লেও তার বয়স ছিল ১৯। সে ক্লাস নাইনে আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছিল। এর আগে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকার একটা মাদ্রাসায় পড়ত। সে ছাত্র হিসেবে খুবই দুর্বল প্রকৃতির। উচ্ছৃঙ্খল।

কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, যেখানে উৎপলকে পেটানো হয়, সেই জায়গা কলেজের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতাধীন বলে আশরাফুল ইসলাম জিতু ঘটনার আগে আগে মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়, যেন কোনো কিছু ক্যামেরায় রেকর্ড না হয়।

এ ছাড়া জিতুর প্রকৃত বয়সের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের একটি নথি সরবরাহ করেন অধ্যক্ষ। যেখানে আশরাফুল ইসলাম জিতুর পরিচয় লেখা ছিল, বাবা মো. উজ্জ্বল, মা জুলেখা বেগম ও তার জন্ম তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০০৩। সে হিসাবে জিতুর বয়স ১৯ বছর।

উল্লেখ্য, গত শনিবার দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে ওই শিক্ষকের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার মারা যান। রবিবার আশুলিয়া থানায় নিহত শিক্ষকের ভাই অসীম কুমার বাদী হয়ে জিতুসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে এখনো অভিযুক্ত শিক্ষার্থী পলাতক রয়েছে।

সূত্রঃ দেশরূপান্তর

আইনিউজ/এসডি

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ