Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২০ জুলাই ২০২৫,   শ্রাবণ ৪ ১৪৩২

আই নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২৩ এপ্রিল ২০২৩

কক্সবাজারে ভেসে আসা ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধার

কক্সবাজারের নাজিরারটেক সৈকত এলাকায় একটি ভাসমান ট্রলার থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ১০টি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ট্রলারের কোল-স্টোর থেকেই মরদেহ গুলো উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সাগরে তাদের হত্যা করে হাত পা বেঁধে কোল-স্টোরের মুখ আটকে দেয়া হয় এবং অক্সিজেনের অভাবে সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়।

রোববার (২৩ মার্চ) সকালে সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ট্রলারটি ভেসে আসে। স্থানীয়রা ওই ট্রলারে মাছ আছে কি না তা দেখতে গেলে কোল-স্টোরের মুখ খুলতেই মানুষের হাতের অংশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ১০টি মরদেহ উদ্ধার করে।

এই বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ট্রলার থেকে উদ্ধার করা মরদেহ গুলো পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মরদেহ গুলো চেনার কোন উপায় নেই। সব গুলো মরদেহ ট্রলারের আইস-স্টোর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ট্রলার ও মরদেহ সনাক্তের চেষ্টা চলছে। ট্রলারে আর কোন মরদেহ আছে কি না তাও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

ফায়ারসার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক (কক্সবাজার) অতিশ চাকমা বলেন, “এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। মরদেহের হাত-পা বাঁধা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৮/১০ দিন আগে তাদের হত্যা করা হয়েছে।”

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, বঙ্গোপসাগরে ট্রলারটি ভাসতে দেখে জেলেরা কুলে নিয়ে আসে। তারপর মরদেহ দেখতে পেয়ে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ও ফায়ারসার্ভিসের লোকজন লাশ গুলো উদ্ধার করে।

এদিকে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে উদ্ধারকৃত ট্রলার ও মরদেহ সনাক্ত করা যায় নি বলে জানালেও ওই ট্রলারটি মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়া গ্রামের শামসুল আলমের মালিকানাধীন ট্রলার বলে দাবী করেছেন তারই স্ত্রী রোকেয়া বেগম।

তিনি জানান, ৭ এপ্রিল মাঝিমাল্লাদের নিয়ে তার স্বামী শামসুল আলম সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসে নি। দীর্ঘদিন ফিরে না আসায় তিনি বিষয়টি প্রশাসন ও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। পরে কক্সবাজারে ট্রলারে মরদেহ উদ্ধারের খবর শুনে ছুটে এসেছেন তিনি এবং ট্রলারটি তার স্বামীর ট্রলার বলে সনাক্ত করেছেন। তিনি আরো জানান, তার এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। ছেলের নাম অনুসারে ট্রলারের নাম রাখা হয় এফবি কালু। কিন্তু সাগরে যাওয়ার আগে ট্রলার মেরামতের কাজ করার সময় নামটি মুছে যায়, পরে আর নামটি লিখা হয় নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামশুল আলমের ট্রলারে তিনি সহ ১১ জন মাঝিমাল্লা ছিলেন। তাদের কেউ বাড়ি ফিরে আসে নি এবং তাদের সাথে পরিবারের কারো যোগাযোগ হয় নি। নিখোঁজ ওই ট্রলারে মহেশখালীর ৮ জন এবং চকরিয়ার ৩ জন জেলে ছিলেন। তারা হলেন- মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়া গ্রামের আবু জাফরের পুত্র শামশুল আলম, মোহাম্মদ মুসা ও শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের পুত্র সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের পুত্র সওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর পুত্র ওসমাণ গনি (১৭), শাহাব মিয়ার পুত্র সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর পুত্র পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের পুত্র নুরুল কবির (২৮) এবং চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের পুত্র সাইফুল ইসলাম, শাহ আলমের পুত্র শাহজাহান (৩৫), জসিম উদ্দীনের পুত্র তারেক (২৫)।

নিখোঁজ থাকা জেলে নুরুল কবিরের পিতা মোহাম্মদ হোসেন জানান, তার ছেলে দিন মজুর। সাগরে মাছ ধরা, ঝালমুড়ি বিক্রি, দৈনিক মজুরী কাটা সহ যা কাজ পান তা করেন। ৭ এপ্রিল তার ছেলে নুরুল কবির সহ একই এলাকার আরো ৫ জন ট্রলারে করে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসে নি। সাগরে তাদের বোটে হামলা হয়েছে বলে তিনি লোকমুখে শুনেছেন। এ ঘটনা প্রকাশের পর তার ছেলের সাথে যাওয়া অপর ৫ জনের পরিবার তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

নিখোঁজ জেলেদের ব্যাপারে কি বলছে এলাকাবাসী
শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সলিম উল্লাহ জানান, তার এলাকা থেকে ৬জন নিখোঁজ হয়েছে। তাদের ৫জনের বয়স ১৬ বছরের নীচে। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় খারাপ কোন রেকর্ড নাই। তাদের পরিবার জানিয়েছে, ঈদের খরচ যোগাতে তারা সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছে। তিনি আরো বলেন, “কক্সবাজারে ট্রলারে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা প্রচার হওয়ার পর পুরো এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে চারিদিকে। শোকে কাতর সবাই।”

অপরদিকে হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়া ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শামসুল আলম জানান, নিখোঁজ ট্রলারের মালিক শামশুল আলম দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে অন্যজনের বোটে শ্রমিক (জেলে) হিসেবে কাজ করতেন। বছর খানেক আগে ভিটি জমি বিক্রি করে একটি বোট ক্রয় করে। সেই বোট নিয়েই সাগরে মাছ ধরতে যায়। তিনি এলাকায় শান্তিপ্রিয় পরিশ্রমি মানুষ হিসেবেই পরিচিত। তার সাথে যাওয়া মুহাম্মদ মুসা নামের অপর জেলের বাড়ি নোয়াখালীতে। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় থাকেন।

ওইদিকে চকরিয়া উপজেলার নিখোঁজ ৩ জনই জেলে হিসেবে দীর্ঘদিন সাগরে মাছ ধরছে বলে জানা যায়।

আইনিউজ/ইউএ

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ