Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ১৬ জুন ২০২৫,   আষাঢ় ২ ১৪৩২

হুমায়ুন কবির, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দেশের নারী ফুটবল তারকা সাগরিকার জীবনের অজানা গল্প 

বাংলাদেশি নারী ফুটবলার সাগরিকা।

বাংলাদেশি নারী ফুটবলার সাগরিকা।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ। যোগ হওয়া সময়ের খেলা চলছে। যে কোনও মুহূর্তে বাঁশি বাজানোর অপেক্ষায় রেফারি। ম্যাচের নিয়তি যখন গোলশূন্য ড্র বলেই সবাই ধরে নিয়েছে ঠিক সেই মুহূর্তে গোল করল বাংলাদেশ। কিন্তু, একবারে শেষ মুহুর্তে গোল দিয়ে সমীকরণ বদলে ফেলেন সাগরিকা নামের একটি মেয়ে। যে আজ দেশজুড়ে প্রশংসিত। 

সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ১-০ গোলে হারানোর গল্প এটি। এই জয়ে ১ ম্যাচ হাতে রেখেই ফাইনালে বাংলাদেশে মেয়েরা। আর সেই একমাত্র গোলটি করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের অজ-পাড়াগাঁয়ের মেয়ে মোসাম্মৎ সাগরিকা। যাকে এখন সবাই নারী ফুটবলার সাগরিকা নামেই চেনেন। 

এর আগে নেপালের বিপক্ষেও জোড়া গোল করেছিলেন দেশী নারী ফুটবলার সাগরিকা। ভারতের বিপক্ষে সেই খেলায় পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে মোসাম্মাৎ সাগরিকার গোলে সমতায় ফেরে। পরে টাইব্রেকারে দুই দলের ১১ করে ২২ খেলোয়াড়ের সবাই বল জালে জড়ান। শেষ পর্যন্ত যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ ও ভারতকে।

সাগরিকার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার  রানীশংকৈল উপজেলার হোসেনগাঁও ইউনিয়নের রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামে। রানীশংকৈল- হরিপুর পাকা সড়কের বলিদ্বারা রাঙ্গাটুঙ্গী স্কেল নামক এলাকায় পাকা রাস্তার পাশে একটি ছোট চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার চালান তাঁর বাবা লিটন আলী ও মা মোছা. আনজু বেগম। দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে সাগরিকা ছোট। আর ছেলে মো. সাগর একটি ইট ভাটায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। বাবা লিটনও আগে ইটভাটায় ফায়ারম্যান হিসেবে কাজ করতো।

দুই বছর আগে রাস্তার পাশে একজনের কাছ থেকে বিনা ভাড়ায় একটি ছোট চা বিস্কুটের দোকান শুরু করে। লিটন ও তার স্ত্রী আনজু মিলে সেই দোকান চালিয়ে কোন মতে চলে তাদের সংসার। পাশেই তাদের বাড়ি। একটি খড়ের বেড়া দিয়ে ঘেরা এবং খড় ও  টিন দিয়ে দুই ঘর বিশিষ্ট নির্মিত জরাজীর্ণ একটি বাড়ি। সাগরিকা ৯ বছর বয়সে রাণীশংকৈল রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড প্রমিলা ফুটবল একাডেমিতে খেলা শুরু করে। 

সেখানে টানা ৬ বছর খেলার পর ওই একাডেমিরর পরিচালক তাজুল ইসলামের প্রচেষ্টায় বিকেএসপিতে ভর্তি হন। বিকেএসপির কোঠর নিয়ম কানুন সাগরিকার ভালো লাগেনি। তাই ৪ মাস পর আবার নিজ মাঠ রাণীশংকৈলে ফিরে আসেন। এরপর রাণীশংকৈল রাঙ্গাটুঙ্গী প্রমিলা ফুটবল একাডেমির হয়ে দেশের বিভিন্ন ক্লাবে লীগ খেলা শুরু করেন। ওইসব লীগ খেলার সময় সে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং দক্ষ খেলোয়াড় হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেন। আর তখনি জাতীয় টিমের নজরে পড়ে সাগরিকা। এখন সে ১ বছর ধরে ন্যাসনাল টিমের হয়ে খেলছেন। 

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ফুটবল খেলার শুরুটা সাগরিকার সহজ ছিলনা গ্রামের মানুষজন অনেক কটুকথা শুনিয়েছে তার পরিবারকে। হাফপেন্ট জার্সি পরে ফুটবল খেলা। ধর্ম সার্পোট করেনা।  মেয়র বিয়ে হবেনা- এমন কথা শুনতে হয়েছে তাঁর পরিবারকে। সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলতেছিলেন সাগরিকার বাবা লিটন আলী। 

আই নিউজ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সাগরিকার বাবা-মা বলেন, এজন্য মেয়ের খেলা বন্ধ করে দিছিলাম। পরে লুকিয়ে লুকিয়ে সে মাঠে যেতো, এ কথা শুনে এক মাস মেয়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিছিলাম। শেষে একাডেমির পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম  অনেক অনুরোধ করে অনুমতি নিয়ে মাঠে ফেরান সাগরিকাকে। কিন্তু সেই মেয়েই আজ দেশের ফুটবলের এক সেরা সম্পদ। এটা এখন ভাবতে বুক গর্বে ভরে উঠে বলেন লিটন আলী। 

এ বিষয়ে রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাটেড ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম জানান, সাগরিকা আমাদের একাডেমিতে গত ছয় বছর ধরে খেলছে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমি থেকে কয়েকজন মেয়েকে বিকেএসপিতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সাগরিকা সেখানে গিয়ে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি। পরে গ্রামে ফিরে আসেন। এরপর সেই রাঙ্গাটুঙ্গী থেকেই সাগরিকাকে অন্য নারী ফুটবলারদের সঙ্গে দলে ভেড়ায় মেয়েদের ফুটবল লিগের দল এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মেয়েদের লিগে সাগরিকা পাল্লা দিয়েছেন দেশের শীর্ষ নারী ফুটবলারদের সঙ্গে। 

সেবার সাগরিকা গোল করেছিলেন ১০টি। এরপরই মেয়েদের ফুটবলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন তাকে নিয়ে আসেন মেয়েদের বয়সভিত্তিক দলে। সেই থেকে বাংলাদেশের জার্সিতে ফুটবল শুরু সাগরিকার। তার জন্য বাংলাদেশ আজ গর্বিত। এবং নিভৃত পল্লীর সাগরিকা এখন দেশের অন্যতম সেরা নারী ফুটবল তারকা।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়