নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
গাছ হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে শোকসভা
গাছ কাটার প্রতিবাদে শোকসভা
'আমি চাই গাছকাটা হলে শোকসভা হবে বিধানসভায়' গাছকাটার জন্য বিধানসভায় শোকসভা হোক এমনটি চেয়েছিলেন জনপ্রিয় জীবনমুখী গানের শিল্পী কবির সুমন। কিন্তু এধরনের কোন শোকসভা পশ্চিম বাংলা'র বিধানসভায় কখনো হয়নি। বাংলাদেশের আইন সভা মানে জাতীয় সংসদেও এমনটি কখনো হবে এমন প্রত্যাশা কারো নেই। তবে গাছ হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে এমন একটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৪ মার্চ) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আদিবাসী অধিকার বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাপেং ফাউন্ডেশন ও খাসিয়াপুঞ্জির অধিকার আদায়ে কাজ করা কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন বড়লেখার খাসিয়া পুঞ্জিতে গাছকাটার প্রতিবাদে ব্যতিক্রমধর্মী এই শোকসভার আয়োজন করে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের আগার খাসিয়াপুঞ্জিতে (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসতি) সম্প্রতি দুটি গাছ কেটে ও আরও প্রায় ২৫টি গাছ কাটার প্রস্তুতির প্রতিবাদ জানাতে মূলত এই শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আয়োজিত শোকসভায় উপস্থিত সকলে গাছ হত্যার প্রতিবাদে কালোব্যাজ ধারণ করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল করিম কিম-এর সভাপতিত্বে সিলেটের খাদিমনগরে সকাল সাড়ে ৯ টায় আয়োজন করা এই শোকসভায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এতে বক্তব্য রাখেন কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন-এর সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাপেং ফাউন্ডেশন-এর প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল আজিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, সিলেট শাখার সভাপতি গৌরাঙ্গ পাত্র, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মন, বৃহত্তর খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের ফিলা পতমী, আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থা হবিগঞ্জ-এর সভাপতি স্বপন কুমার সাঁওতাল, সভাপতি খাসি পেনরয় সমাজ কল্যাণ সমিতি গোয়াইনঘাট-এর সভাপতি ওয়েলকাম লম্বা, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম এর সদস্য সাজু মারচিয়াং।
এছাড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর তরুণ প্রতিনিধির মধ্যে খাসিয়া থেকে লিসডামন খংজং, গারো থেকে পুর্নিকা স্নাল, হাজং থেকে শিবানন্দ হাজং, বানাই থেকে ধুবুরাজ বানাই, পাত্র জনগোষ্ঠীর সুমেলা পাত্র, চা জনগোষ্ঠী থেকে সোহাগ ছত্রী, মঞ্জু কুর্মী, দীপা গড়াইত ও আকাশী খাড়িয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
শোকসভা আয়োজনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে সভার সভাপতি আব্দুল করিম কিম বলেন, গাছ কাটার জন্য কিছু মানুষ মুখিয়ে থাকে। কিছু প্রতিষ্ঠান গাছ কেটে পকেট ভারী করার উদ্দেশ্যে অবিরাম দা-কুড়াল-করাত শান দেয়। দেশের সর্বত্র কেবল গাছ কাটার আয়োজন। বনাঞ্চল হোক, চা-বাগান হোক, নগর হোক, রাজধানী হোক- কোথাও গাছ রক্ষার চেষ্টা নেই। পরিবেশবাদীরা সবুজ আচ্ছাদন রক্ষার জন্য নানাভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে গেলেও কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোন ভূমিকা নেই। বরং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দোহাই দিয়ে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেদারসে বৃক্ষনিধন করে।
কিম বলেন, গত ১৯ শে মার্চ আগার খাসিয়াপুঞ্জিতে অহেতুক দুটি চাপালিশ গাছ কাটা ও আরো কিছু গাছ কাটার উদ্যোগে স্থানীয় বনজিবী পুঞ্জিবাসীরা শোকাহত হয়েছেন। পুঞ্জির খাসিয়া'রা গাছকে সন্তানের মতো ভালোবাসে। গাছের যত্ন নেয়, পরিচর্যা করে। এসব গাছ বেয়ে পানগাছগুলো লতিয়ে উঠে। যা খাসিয়াদের কাছে পানেরজুম বলে পরিচিত। জুমের গাছগুলো তাদের জীবন জীবিকা রক্ষায় অপরিসীম ভূমিকা রাখে। তাই একটি গাছের মৃত্যুতে ওরা সন্তান হারানোর শোক অনুভব করে। সেই শোকের সাথে সংহতি জানাতেই এই শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে।
ফ্লোরা বাবলি তালাং বলেন, আগারপুঞ্জিটির পাশ ঘেঁষে ছোটলেখা চা-বাগান। পুঞ্জিতে রয়েছে ৪৮টি খাসিয়া পরিবার। পান চাষ ও বিক্রি করে করে পুঞ্জিবাসীর জীবিকা চলে। ছোটলেখা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ বিনা নোটিশে আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে গাছ কেটে ফেলে। চা-বাগান কর্তৃপক্ষের এমন অন্যায় কর্মকাণ্ডের নাগরিক প্রতিবাদ প্রয়োজন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
উজ্জ্বল আজিম বলেন, বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রীর বাড়ি বড়লেখাতে। সেই এলাকাতে গাছ হত্যার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। যদিও সিলেট বিভাগের অনেক চা-বাগানে দেদারসে গাছকাটা হচ্ছে। পাশাপাশি সাবাড় করা হচ্ছে বনজ সম্পদ। বনে বা চা-বাগানে বৃক্ষকর্তনের খবর অধিকাংশ ক্ষেত্রে গোপন থাকে। তবে চা-বাগানের ভেতরে থাকা বা বনের পাশে থাকা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কারণে নির্বিচারে গাছ কাটার খবর ঠিকই বাইরে আসে। আগারপুঞ্জির খাসিয়াদের কারণে চাপালিশ, জাম, কাঁঠাল, আওয়াল, গুঁতগুঁতি, হরীতকী, বহেড়াসহ প্রায় ২৫টি বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গাছ আপাতত বেঁচে গেলো।
শোকসভা থেকে বৃক্ষ, বনাঞ্চল ও আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত অধিকার সংরক্ষণে বন আইন যুগোপযোগী করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি চা-বাগান কর্তৃপক্ষের জমিদারী মনোভাব সংশোধন করে স্থানীয় বনজীবি জনগোষ্ঠীর সাথে মানবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়।
আইনিউজ/শাহ শরীফ উদ্দিন
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’
- করোনা জয় করে সুস্থ হয়েছেন মৌলভীবাজারের ৩ চিকিৎসক