বিনোদন প্রতিবেদক, আইনিউজ
আপডেট: ১৮:২০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
বিএনপির জেনেও প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছিলেন মাজহারুলকে
লেখাটি অনলাইন থেকে সংগৃহীত
এইতো মাত্র তিনদিন হলো পৃথিবী ত্যাগ করেছেন দেশের কিংবদন্তী গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। কীর্তিমান এই মানুষটি রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
কিন্তু তার শিল্পী পরিচয়ের আগে দল পরিচয়ে কোনোদিনই তাকে বিচার করেন নি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনই এক নজির পাওয়া যায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনের ফেসবুক ওয়ালে দেয়া এক লেখায়।
লেখাটি ছিলো এরকম-
শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসাবে ওনার নামসহ আরও দুইজনের নাম জুরীবোর্ড দিয়েছেন। এখান থেকে একজনের নাম চুড়ান্ত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওনার নামের পাশেই টিক চিহ্ন দিলেন। আমলা গোছের কেউ একজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিলেন যে গাজী মাজহারুল আনোয়ার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, তাকে না দিলেই ভালো হয়।
সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী গর্জন করে বলে উঠলেন, “সংস্কৃতিসেবীরা দেশের সম্পদ, কোনও দলের না। আর মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশের গানসহ ওনার অনেক অনেক কালজয়ী গান আছে। দল যাই করুক, পুরস্কার ওনার প্রাপ্য।” ঘটনাটি আমি শুনেছিলাম একজন সরকারী কর্মকর্তার কাছে।
এরপর ২০২১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওনাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পদকেও ভূষিত করেছেন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার এর স্বজনদের কাছে শুনেছি, তিনি বলতেন, এই সরকারের আমলে তিনি পুরস্কার পাবেন,তা ছিল কল্পনার বাইরে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার নেবার সময়ও নাকি সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।
বাংলা গানের সেই বরপুত্র বিদায় নিয়েছেন। আমাদের জন্য রেখে গেছেন “জয় বাংলা বাংলার জয়” “একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল” একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়” সহ অসংখ্য কালজয়ী বাংলা গান। যা আগামী অনেকগুলো বছর নক্ষত্রের মতো আলোকিত করে যাবে বাংলা গানের ভাণ্ডারকে।
২০ হাজার গানের জনক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও তার কীর্তি
সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ চলচ্চিত্রের ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লেখা শুরু হয়েছিলো গাজী মাজহারুল আনোয়ারের। সেই গানের পরবর্তী ইতিহাস এদেশের শ্রোতামহলের জানা। বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ গানটি।
এরপরে লিখেছেন আরও গান, বহু গান। প্রায় বিশ হাজারেরও বেশি গান তিনি লিখে গেছেন তার জীবনে। কিছু গান পেয়েছে কালজয়ী গানের খেতাব। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’- গানটি এখনো টেলিভিশন, বেতার, সমাবেশে মাইকে বাজালে বাঙালীর বুক যেন ভরে যায় বীর ভাবে। এমনই গান রচনা করেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সঙ্গীত কীর্তি আসলে বলে শেষ করবার মতো না। তার লেখা একেকটি গানের যে বুননশৈলী তা আজও নাড়া দিয়ে যায় সাধারণ শ্রোতাদেরকে। দেশাত্মবোধক গান যখন লিখেছেন মাতৃভূমির প্রতি সমস্ত প্রেম দিয়েছেন সে গানে উজাড় করে। জন্ম আমার ধন্য হলো গানটি তার একটি জলন্ত উদাহরণ বলা যায়।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার রচিত অসংখ্য দেশের গানের মধ্যে অন্যতম ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না,আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
জন্ম ও কর্মজীবন
১৯৪৩ সালে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ১৯৬২-৬৩ সালে তিনি পড়াশোনা করেন মেডিকেল কলেজে। কিন্তু চিকিৎসা বিদ্যায় খ্যাতি না কুড়িয়ে তিনি খ্যাতিমান হয়েছেন সঙ্গীত জগতে।
মেডিকেল ছাত্র থাকাকালীন সময়েই রচনা করেন প্রথম গান ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’, যার সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু ও গেয়েছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন।
১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান লিখে ৫০ টাকা আয়ের মাধ্যমে তার পেশাদার গীতিকার জীবন শুরু। আর ১৯৬৫ সালে যুক্ত হন চলচ্চিত্রের সাথে।
সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ ছবিতে ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লেখা শুরু গাজী মাজহারুল আনোয়ারের।
কর্ম জীবনে ২০ হাজারেরও বেশি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। যার মধ্যে অনেক গানই কালজয়ী গান হিসাবে ঠাই করে নিয়েছে শ্রোতাদের মনে। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ উল্লেখযোগ্য গানগুলো এখনো সমানতালে জনপ্রিয়। বিবিসি বাংলা’র জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় তার লেখা তিনটি গান রয়েছে।
ছিলেন সফল চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও
গানের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সফল কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও। ১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লেখাতেও দক্ষতা দেখান তিনি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র নান্টু ঘটক ১৯৮২ সালে মুক্তি পায়। প্রায় ৪১টি সিনেমা পরিচালনা করেন তিনি।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘দেশ চিত্রকথা’। গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম শাস্তি, স্বাধীন, শর্ত, সমর, শ্রদ্ধা, ক্ষুধা, স্নেহ, তপস্যা, উল্কা, আম্মা, পরাধীন, আর্তনাদ,পাষাণের প্রেম, এই যে দুনিয়া।
অর্জন ও জীবন গানের সমাপ্তি
গাজী মাজহারুল আনোয়ার ২০০২ সালে বাংলাদেশের একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন তিনি। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একাধিকবার বাচসাস পুরস্কার, বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড, ডেইলি স্টার কর্তৃক লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জিত পুরস্কারের সংখ্যা ১১০।
অবশেষে রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) জীবনের ইতি টেনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন দেশের বিখ্যাত এই গীতিকার। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যারা যান তিনি। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ভাগনে অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
- ‘গাছ হেংলানেছে- পয়সা মিলেগা’ : চা শ্রমিক ও চা শিল্প
- পোশাক নয়, নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ জরুরি
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের দেশ ।। Most beautiful woman in the world ।। Eye News
যে গ্রামে পুরুষ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন নারীরা | Women are pregnant without men | Kenyan Girls | Eye News
চুল বেঁধে ঘুমিয়ে নিজের যে ক্ষতি করছেন ।। Hair loss problems
পায়খানা ও প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ চেপে রাখলে যে ক্ষতি হয়??
- নিউ জার্সির চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রীমঙ্গলের ২ নির্মাতার ৬টি চলচ্চিত্র
- বিয়ে করেছেন মারজুক রাসেল!
- সেরা পাঁচ হরর মুভি
- ‘হাওয়া’ দেখতে দর্শকদের ভিড়, খোদ নায়িকা সিঁড়িতে বসে দেখলেন সিনেমা
- লুঙ্গি পরায় দেওয়া হয়নি সিনেপ্লেক্সের টিকেট, সেই বৃদ্ধকে খুঁজছেন নায়ক-নায়িকা
- শাকিবের সঙ্গে বিয়ে-বাচ্চা তাড়াতাড়ি না হলেই ভাল হত: অপু বিশ্বাস
- শোকের মাসে শ্রীমঙ্গলের স্কুলগুলোতে প্রদর্শিত হলো ‘মুজিব আমার পিতা’
- গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর শোক
- নারী বিদ্বেষীদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নতুন যাত্রা শুরু : জয়া আহসান
- ‘ইত্যাদি’ এবার সোনারগাঁয়ে