Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ১৬ ১৪৩২

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:২০, ৩ জানুয়ারি ২০২১
আপডেট: ১৩:২০, ৩ জানুয়ারি ২০২১

সমরজিৎ রায়ের আয়োজনে প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত

ঋতু সাহা ও সমরজিৎ রায়

ঋতু সাহা ও সমরজিৎ রায়

জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সমরজিৎ রায়। একাধারে তিনি সঙ্গীতশিল্পী, শিক্ষক, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। সবসময় তাকে দেখা যায়  আধুনিক গানের আয়োজনে। কিন্তু প্রথমবারের মতো তিনি আয়োজন করলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত।

তাঁরই সঙ্গীতায়োজন ও পরিচালনায় রবি ঠাকুরের "যে রাতে মোর দুয়ারগুলি" গানটি গাইলেন চট্টগ্রামের নবীন মেধাবী শিল্পী ঋতু সাহা। এটি ঋতুর গাওয়া প্রথম গান। ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে আগামী ৫ জানুয়ারি সমরজিৎ রায় এর ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশিত হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নবীন মেধাবী শিল্পীদের খুঁজে বের করে সবার সামনে তাঁদের তুলে ধরার প্রচেষ্টা করে আসছেন শিল্পী সমরজিৎ দীর্ঘ সময় ধরেই যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এই গানটির প্রোগ্রামিং করেছেন রণদীপ মানু, রেকর্ডিস্ট এ.বি. লিমন, মিক্সিং ও মাস্টারিং করেছেন গৌতম বসু। গানটিতে সেতার বাজিয়েছেন রাহুল চ্যাটার্জি। এই গানটির ভিডিও সম্পাদনা করেছেন অনিন্দ্য চৌধুরী।

সমরজিৎ রায় বলেন,"রবীন্দ্রনাথের গান মানেই চির আধুনিক। অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল রবীন্দ্রনাথের কোন গানের সঙ্গীতায়োজন করবো। তাছাড়া অনলাইনে যথাযথভাবে একটি গানের সঙ্গীতায়োজন করা অনেক কঠিন ও কষ্টের কাজ হলেও আমি ব্যাপারটিকে বেশ উপভোগ করি এখন। এই সময়ের নবীন শিল্পীদের মধ্যে ঋতুর গলা বেশ ভালো, তাকে দিয়েই গানটি রেকর্ড করলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে শুনতে। নতুনদের সহযোগিতা করার জন্য আমাদের সবারই এগিয়ে আসা উচিৎ, তাহলেই ওদের চলার পথ অনেকটাই সহজ হবে বলে মনে করি। ঋতুর জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।"

গানটির শিল্পী ঋতু সাহা বলেন,"আমার জীবনের প্রথম গানটিই সমরজিৎ দাদার মতো এমন গুণী মানুষের সঙ্গীতায়োজনে ও পরিচালনায় গাইতে পেরেছি এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। শিল্পী হিসেবে তো বটেই, মানুষ হিসেবেও আমি দাদাকে ভীষণ শ্রদ্ধা ও সম্মান করি। নতুন শিল্পীদের জন্য তাঁর সহযোগিতার মনোভাব এবং উদ্যোগ সত্যি আমাদের জন্য অনেক বিরাট ব্যাপার। দাদার কাছে ঋণী হয়ে রইলাম। সবার আশীর্বাদ একান্তই কাম্য।"

বাড়িতে বসেই স্টুডিওর কোন সরঞ্জাম ছাড়াই কিভাবে সমরজিৎ রায় অনলাইনে একটা গানের মিউজিক ট্র্যাক তৈরি করেন সেই গল্পটি জানতে চাইলে তিনি বিশদ বর্ণনা দেন।

সমরজিৎ বলেন, "আসলে করোনা আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়েছে। আমার বেশিরভাগ গানগুলো কলকাতায় করা। কিন্তু করোনার কারণে যেহেতু এখন ওখানে গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয় তাই একটু বেশি পরিশ্রম হলেও গানগুলো অনলাইনে বসেই কলকাতায় ট্র্যাক বানানোর চেষ্টা করি। সেটা অনেক দীর্ঘ ও পরিশ্রমের কাজ। প্রথমে গানটির লেখার ভাব বুঝে সুর করি। এরপরে গানটির ধরণ বুঝে ভেবে নিই এতে কোন কোন যন্ত্রের ব্যবহার হলে ভালো লাগবে গানটি। তারপরে গানটির স্থায়ী, অন্তরা এবং সঞ্চারীর সুরের আদলে পুরো গানটির মিউজিকের অংশগুলোরও সুর করি। এরপরে একটি মোবাইলে মেট্রোনম বাজিয়ে মিউজিকের অংশগুলো সহ পুরো গানটি অন্য মোবাইলে রেকর্ড করি। তারপর তবলার গান হলে অন্য একটি ট্র্যাকে একইভাবে সেই গানটির উপর মুখে পুরো গানটির তবলার বোল বাজিয়ে দেওয়ার মতোই রেকর্ড করি যেন তবলাবাদক সেটা শুনে শুনেই হুবহু বাজিয়ে দিতে পারেন। তারপর এই ট্র্যাকগুলো কলকাতায় আমার প্রোগ্রামারকে পাঠাই। এরপরে প্রোগ্রামারের সঙ্গে ভিডিও কলে থেকে কাজ শুরু করি। আমার পছন্দ মতো উনি প্রোগ্রামিং করেন যেভাবে আমি বলে দিই। তারপর আমি যেভাবে মিউজিকের অংশ গুলো গেয়ে পাঠাই সেটা শুনে শুনে উনি বাজান এবং আমি সারাক্ষণ ভিডিও কলে থেকে নির্দেশনা দিই কিভাবে বাজাতে হবে। তবলা আর একুস্টিক যন্ত্রের অংশগুলো ছাড়া বাকি সবকিছুই প্রোগ্রামিং এ সম্পন্ন করি। এবারে তবলাবাদককে ট্র্যাকটি পাঠাই।

উনিও স্টুডিওতে গিয়ে একইভাবে আমার সঙ্গে ভিডিও কলে থেকে বাজান। আমি যেটা মুখে গেয়ে পাঠিয়েছি সেটা শুনে শুনে বাজাতে থাকেন এবং আমি নির্দেশনা দিতে থাকি। এভাবে তবলার কাজ শেষ করে সেই তবলার অংশটি প্রোগ্রামার আমাদের আগের ট্র্যাকে যুক্ত করে পুরো ট্র্যাকটা আবার সেতারবাদক বা বাঁশীবাদককে পাঠান। ওনারাও ঠিক একইভাবে আমার সঙ্গে ভিডিও কলে থেকে আমার গেয়ে দেওয়া ডেমো শুনে বাজান এবং আমি নির্দেশনা দিয়ে এই কাজটিও সম্পন্ন করি। তারপরে সবগুলো ট্র্যাক একসঙ্গে করে প্রোগ্রামার আমাকে পাঠিয়ে দেন। এরপরে কন্ঠ দেওয়ার ব্যাপারে আছে এবং পরে মিক্সিং ও মাস্টারিং হয়, সেখানেও একইভাবেই ভিডিওতে থেকে নির্দেশনা দিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে হয়।

পুরো প্রক্রিয়াটাই অনেক বেশি ঝামেলার এবং কষ্টসাধ্য হলেও যেহেতু দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করা এখন সম্ভব নয় তাই এভাবেই আপাতত কাজ করে যাচ্ছি এবং এখন অনেকটা অভ্যস্তও হয়ে গেছি। অনলাইনে ট্র্যাক বানানোর এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বর্ণনা শুনে পাঠকদের যতটা বিরক্তি লেগেছে ঠিক তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশিই কষ্ট হয় আমার এভাবে কাজ করতে। তবে ভালোলাগার বিষয় হলো এতো কষ্টের পরেও গানটি যখন শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে এবং তাঁদের প্রশংসা ও উৎসাহ পাই, সব পরিশ্রমই যেন সার্থক হয়ে যায়।"

Green Tea
বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়