সাজু মারছিয়াং
আপডেট: ০১:৪০, ২১ অক্টোবর ২০২১
মানবাধিকার কর্মীরাই মানবাধিকার রক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন
আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে এগিয়ে আসুন- এই স্লোগানকে সামনে রেখে কাপেং ফাউন্ডেশন ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে দিনব্যাপী আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের সম্মেলন ২০২১ আয়োজন করেছে।
বুধবার (২০ অক্টোবর) সম্মেলনের প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে উদ্বোধনী ঘোষণা করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সম্মানিত চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম এনডিসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ড এ্যাম্বাসির সম্মানিত এ্যাম্বাসসেডর এ্যানা ভ্যান লিইয়েন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
উদ্বোধনী সভাতে সভাপতিত্ব করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নিবার্হী পরিচালক পল্লব চাকমা। সম্মেলনের এ অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প সমন্বয়কারী হীরামন তালাং।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাছিমা বেগম বলেন,মানবাধিকার কর্মীরাই মানবাধিকার রক্ষা করেন। তিনি বলেন, সংবিধানে সবার জন্যে মে․লিক অধিকারের কথা উল্লেখ রয়েছে। তিনি সবাইকে মানবাধিকার সুরক্ষার নির্দেশনা মেনে চলার কথা উল্লেখ করেন। তিনি আদিবাসীদের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলেন, উন্নয়ন দরকার কিন্তু পাহাড়প্রকৃতি পরিবেশ সর্বোপরি কোন একটি গোষ্ঠীর অস্তিত্ত্ব সংস্কৃতি জীবিকা ধ্বংস করে সেই উন্নয়ন কাম্য নয় । ভূমি থেকে উচ্ছেদ আদিবাসীদের আদিবাসীদের জন্য বড় ঝুঁকি।
আদিবাসী নারীদের প্রতি সহিংসতা বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু আদিবাসী নারী নয়, মূলধারার নারীরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নারীর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন বন্ধের পক্ষে। এমনকি কমিশন শিশু কিশোরদের প্রতি চলমান নির্যাতন বন্ধেরও জন্যও কাজ করছেন।
এ্যানি ভ্যান লিইয়েন বলেন, বাংলাদেশ একটি বহুজাতির ও বহুভাষার বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। নেদারল্যান্ড দূতাবাস বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সাথে কাজ করার জন্য দায়বদ্ধ।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, এদেশের আদিবাসী ও প্রান্তিক মানুষ প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। সেই বঞ্চনার জায়গায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কাজ করছে যদিও তিনি কমিশনের কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন।
পল্লব চাকমা আগত অতিথিবর্গ ও সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদেও ধন্যাবদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসডিজির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের নিশ্চিত ও সমঅংশগ্রহনের দাবি জানান। এছাড়াও সম্মেলনের দিনব্যাপী আলোচনায় ২য় অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আইপিএইচআরডি সদস্যরা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে গিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে আইপিএইচআরডি নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করবে তার একটি কে․শলপত্র পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয় এবং পরিশেষে সমাপনী অধিবেশও রয়েছে। সমাপনী অধিবেশনে আদিবাসী সংগঠন ছাড়াও দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন এবং এ সম্মেলনে একটি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। এ সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় ১০০ জনের অধিক আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের অংশগ্রহণ করেন। দিনব্যাপী উক্ত সম্মেলনের সমাপনী পর্বে এএলআরডির নিবার্হী পরিচালক শামছুল হুদা ও জাতীয় সংসদের সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের তৃণমূল পর্যায়ের সমস্যার আলোকে নিম্নোক্ত সুপারিশ বা দাবিগুলো উত্থাপন করা হয়-
১. আদিবাসীদেও আদিবাসী হিসেবে তাদের আত্মপরিচয়, মর্যাদা ও মে․লিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
২. জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহিত আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র অনুসমর্থন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আইএলও কনভেনশন নং ১০৭ বাস্তবায়ন ও ১৬৯ নং কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করতে হবে।
৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত, যথাযথ ও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন কার্যকর করতে হবে।
৪. সমতলের আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় ও তাদের ভূমি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
৫. আদিবাসীদের উপর সকল প্রকার নিপীড়ন ও নির্যাতন বন্ধ করার লক্ষ্যে একটি আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৬. আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকমর্ীদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা করতে হবে।
৭. আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আদিবাসী নারী, শিশু ও জনগণের প্রতি সকল ধরণের সহিংসতামূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
৮. সকল ধরণের সহিংসতার শিকার আদিবাসী ভিকটিমের জন্য আইনি সহায়তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের দ্রুত ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৯. স্থানীয় আদিবাসীদের অর্থপূর্ণ স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতীত তাদের প্রথাগত ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং সংরক্ষিত বন, সামরিক-আধা সামরিক ঘাঁটি, পাঁচ তারকা হোটেল, ন্যাশনাল ইকোপার্ক, পর্যটন কমপ্লেক্স, লেইক, উন্নয়ন প্রকল্প ও সরকারি স্থাপনার নামে যে কোন ধরনের ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধ করতে হবে।
১০. টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (ঝউএং) ২০৩০ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রমের সাথে নারীসহ সকল আদিবাসীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
১১. সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্যমন্ত্রণালয়ভিত্তিক বা খাতভিত্তিক পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে এবং বরাদ্দের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার সাথে আদিবাসীদের সরাসরি সম্পৃক্ত করতে হবে।
১২. আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৩. আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রদান করতে হবেএবং যেসব আদিবাসী মানিবাধিকার সুরক্ষাকর্মীগণ নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদেরকে সহায়তা প্রদান করতে হবে। যেমন-
(ক) অস্থায়ী স্থানান্তর;
(খ) আইনি সহায়তা;
(গ) নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা;
(ঘ) পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকা ও
(ঙ) বস্তুগত ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা ইত্যাদি।
আইনিউজ/এসডি
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের