নিজস্ব প্রতিবেদক
সয়াবিন তেলের এমন আকাশছোঁয়া দামের পেছনের কারণ কী?
বাজারে সয়াবিন তেলের দাম এখন পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সম্প্রতি ৩৮ টাকা বাড়িয়ে লিটারপ্রতি ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এই নিত্যপণ্যের দাম। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট করে তুলেছে সাধারণ ক্রেতাদের। ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়িয়েই গেছেন ক্রমাগত। এই টালমাটাল বাজারে ক্রেতাদের উঠেছে নাভিশ্বাস। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।
সয়াবিন তেলের এই আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার পেছনে কিছু বড় কারণ রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার সেই রহস্যগুলো-
খরায় সয়া উৎপাদন ব্যাহত
বাংলাদেশে মূলত ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সয়াবিনের আবাদ কমে আসছে। দক্ষিণ আমেরিকায় এই চাষাবাদ হ্রাসের হার সবচেয়ে বেশি।
মার্কিন কৃষি দপ্তরের (ইউএসডিএ) হিসেব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়েতে রেকর্ড পরিমাণ সয়াবিন শস্যের উৎপাদন হবে। কিন্তু এখন ধারণা করা হচ্ছে, ২১০৮-১৯ অর্থবছরের পর এবারই সবচেয়ে কম সয়াবিন ফলবে দেশগুলোতে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে দেশগুলোতে সর্বমোট ১৮ মিলিয়ন টন কম সয়াবিন উৎপাদিত হয়েছে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়েতে যথাক্রমে ৭, ৯ ও ৩৭% উৎপাদন কমেছে।
এই দেশ তিনটি থেকে বিশ্বে ৫০%-এরও বেশি সয়াবিন সরবরাহ হয়। তাই তাদের উৎপাদন কমে যাওয়ার অর্থ হলো বিশ্বব্যাপী সয়াবিন তেলের ব্যবসা সঙ্কুচিত হয়ে আসা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সয়াবিন উৎপাদক এবং সরবরাহকারী দেশ ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ রিও গ্রান্দে ডো সুল, পারানা এবং মাতো গ্রোসো ডো সুলে তাপবাহ "লা নিনা" পুরো গ্রীষ্মকালে আগুন ঝরিয়েছে।
আরেক শীর্ষ সরবরাহকারী দেশ আর্জেন্টিনার প্রায় পুরোটা জুড়েই নভেম্বর থেকে এল নিনার প্রভাবে চলছে খরা। গত ১৩ মার্চ দেশটি সয়াবিন তেল এবং সয়াবিন জাতীয় খাদ্য রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। ৩১ মার্চ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে তারা সয়াবিন রপ্তানির শুল্ক ৩১% থেকে বাড়িয়ে ৩৩% করে।
পরিবহন খরচ
আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য সরবরাহের প্রধান উপায় হলো সাগরপথ। সে কারণেই বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০% পণ্য আনা-নেওয়া করা হয় সাগরপথে। সে কারণে পরিবহন খরচ ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দামের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কোভিড মহামারির পর দ্রুত এবং অসম গতিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে একেকটি দেশের অর্থনীতি। চাহিদা বেড়েছে ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে ধাতব পদার্থ পর্যন্ত সব কিছুর। সে কারণে ২০২১ সালের তুলনায় ৫০% বেড়েছে সাগরপথে পরিবহন খরচ।
এদিকে, আমদানি-রপ্তানি উভয়ক্ষেত্রেই বেড়েছে পরিবহন খরচ। আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে পরিবহনের সার্বিক খরচ। জাহাজভাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বন্দরের কন্টেইনার, স্ক্যানার এবং হ্যান্ডলিং কস্ট।
বিশ্বের অর্ধেকের বেশি শস্য মজুত করেছে চীন
বিশ্বের জনসংখ্যার ২০% এরও কম মানুষ বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি সয়াবিন এবং অন্যান্য শস্য মজুত করছে। ফলে পৃথিবীজুড়ে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে আশংকাজনকভাবে। পাশাপাশি কিছু দেশ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হচ্ছে।
চীন শস্য মজুত করছে। চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত করেছে।
গত নভেম্বরে চীনের ন্যাশনাল ফুড অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক রিজার্ভস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শস্য মজুত বিভাগের প্রধান কিন ইউইউন সাংবাদিকদের জানান, চীন “ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ” শস্য মজুত করছে।
ইউএসডিএ জানায়, গত পাঁচ বছরে চীনের সয়াবিন আমদানি দুই থেকে বারোগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল এবং অন্যান্য সরবরাহকারী দেশ থেকে তারা একচেটিয়াভাবে সয়াবিন কিনেছে।
পাম তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ইন্দোনেশিয়া
এদিকে, ইন্দোনেশিয়া আবার বাংলাদেশে পাম তেল রপ্তানি বন্ধ করেছে। সয়াবিন তেলের একটি বড় বিকল্প হলো এই পাম তেল।
কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোজ্যতেল সরবরাহকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া অপরিশোধিত পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যার প্রভাবে বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিতিশীলতা।
এই নিষেধাজ্ঞার পরিধি আরও বেড়ে পরিশোধিত পাম তেল এবং ব্যবহৃত রান্নার তেলের ওপরও আরোপিত হবে ভবিষ্যতে।
গত ২৮ এপ্রিল শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা কতদিন চলবে তা জানা না গেলেও এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো পাম তেলের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোতে সংকট বাড়বে।
ইন্দোনেশিয়ার এই সদ্য রপ্তানি নীতি পাম তেলের বাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে।
সূর্যমুখী তেল 'বিলুপ্ত'
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী কৃষিপণ্যের দাম গিয়ে ঠেকেছে মানুষের নাগালের বাইরে। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বনেতারা ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গণমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে শঙ্কার কথা উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের সভায়ও এ নিয়ে হয়েছে আলোচনা।
এখন পর্যন্ত শস্যই এসব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও ভোজ্যতেলের বিষয়টি মোটেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
কৃষ্ণ সাগরের দেশগুলো সূর্যমুখী তেলের বড় রপ্তানিকারক। আর চলমান সংকট উদ্ভিজ্জ তেলের দাম বাড়িয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। পাশাপাশি এ কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য নীতিও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। ফলে সীমিত করা হচ্ছে সরবরাহ এবং বাড়ছে দাম।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সূর্যমুখী তেলের ৪০% মূল্যবৃদ্ধি এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
চলমান সঙ্কটে প্রধান উদ্ভিজ্জ তেল রপ্তানিকারকদের আরোপিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় বেড়েছে মূল্য অস্থিতিশীলতা। পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য দেখা দিয়েছে খাদ্য অনিশ্চয়তার শঙ্কা।
সাধারণ মানুষকে এই উচ্চমূল্যে কতদিন ধরে পণ্য কিনতে হবে তা নির্ভর করছে কবে ইউক্রেনে শান্তি ফিরছে এবং কবে নাগাদ এর কৃষি অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তার ওপর। এই অবস্থা চলতে থাকলে এ বছর তো বটেই, ২০২৩ সাল পর্যন্ত দ্রব্যমূল্যের এই চড়া দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
আইনিউজ/এসডি
আইনিউজ ভিডিও
সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় এ ঈদগাহে নামাজ পড়বে ১৬ হাজার মানুষ
শহরে বেদে নারীদের চাঁদাবাজি, তাদের লক্ষ্য নিরীহ পথচারী ও যাত্রী
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের