মুজিবুর রহমান রঞ্জু
লাউয়াছড়া বন যতদিন থাকবে, ততদিন গাছ চুরি হবে: রেঞ্জ কর্মকর্তা
টিলা এলাকা থেকে কেটে নেওয়া মেহগনি গাছের গুড়ি
“বন যতদিন থাকবে, ততদিন গাছ চুরি হবে। স্বল্প এই জনবল দিয়ে ১২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়া বিশাল বন রক্ষা করা খুবই কঠিন।” বনের গাছ চুরি নিয়ে এ ধরণের উক্তি করলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন।
এছাড়াও তিনি লাউয়াছড়ায় গাছ চুরি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে সাংবাদিকদেরও দোষারূপ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে লাউয়াছড়া বন থেকে গাছ চুরি সম্পর্কে মুঠোফোনে বক্তব্য গ্রহণকালে এসব কথা বলেন লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনের ১২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়াকে ১৯৯৬ সনে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। জাতীয় এই উদ্যানটিতে বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। তবে এই বনের টিলা থেকে রাতের আঁধারে গাছ চুরি অব্যাহত আছেই। অতিসম্প্রতি বনের দু’টি টিলা ঘুরে কেটে নেয়া ৬টি গাছের তাজা গুড়ি পাওয়া যায়। এতে বন্যপ্রাণীর জন্য বাড়ছে হুমকি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বাঘমারা বনক্যাম্প সংলগ্ন মন্ত্রির টিলা থেকে অতি সম্প্রতি মেহগনি ও চিকরাশি
প্রজাতির ছয়টি গাছ চুরি হয়েছে। সাক্ষী হয়ে পড়ে আছে এসব গাছের গুড়ি। এগুলোতে কোন মার্কিং করা হয়নি। বাঘমারা ক্যাম্পের সম্মুখে ও মুজিবের উঠনি টিলার কিছু অংশে গত আগস্ট মাসের শেষে কেটে নেয়া চারটি গাছের গোড়া পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
তবে এসব বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কিংবা সহকারী বন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয় না বা ঘুরে দেখানোও হয় না। কেটে নেয়া গাছের গুড়ি মাটি ও পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।
চিকরাশি গাছের গুড়ি
রেলপথ, সড়কপথ ও বিদ্যুৎ লাইনের ঝুঁকির মধ্যে থাকা লাউয়াছড়া উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নানা সময়ে সড়কপথ, রেলপথ ও বৈদ্যুতিক তারে পৃষ্ট হয়ে বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। তার উপর গাছ চুরি বনের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। তবে স্বল্প জনবলের কারণে বনের বিশাল এলাকা দেখভাল করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে বন্যপ্রাণী বিভাগ দাবি করছে।
উদ্যানের লাউয়াছড়া, কালাছড়া ও চাউতলী তিনটি বনবিটের মধ্যে বিট কর্মকর্তাসহ আছেন মাত্র ১২ জন। এদের সাথে দেখাশুনায় জাতীয় উদ্যান কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির লোকজন থাকলেও বর্তমানে তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এসব কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির কিছু অসাধু লোকও গাছ চুরির সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দু’একদিন পরপরই গভীর রাতে কেটে নেয়া হয় গাছ। কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির কিছু সদস্যসহ স্থানীয় পর্যায়েও কিছু বন কর্মকর্তারা জড়িত আছেন। এসব বিষয়ে কিছু বলতে গেলেই রেঞ্জ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
মূল্যবান গাছ গাছালি চুরি হওয়ায় বনের গভীরতা হ্রাস ও ফাঁকাহচ্ছে টিলাভূমি। কমে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীর খাদ্যের উৎস। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘ দিন ধরে রাতে বনের ভেতর থেকে বৃহদাকার গাছ গাছালিকেটে পাচার করছে। কেটে নেয়া এসব গাছের খণ্ডাংশ পিকআপ ও ঠেলাগাড়িযোগে দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়। ফলে হুমকির মুখে লাউয়াছড়া উদ্যানের জীববৈচিত্র্য।
বনের গাছ চুরি সম্পর্কে লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন মুঠোফোনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন যতদিন থাকবে, ততদিন গাছ চুরি হবে। স্বল্প জনবল দিয়ে ১২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়া বিশাল বন রক্ষা করা খুবই কঠিন। তাছাড়া সাংবাদিকেরা এসব বিষয় নিয়ে বেশি লেখালেখিকরে। বর্তমানে কোন গাছ চুরি হচ্ছে না এবং গাছের গুড়িগুলো পূর্বের বলে তিনি দাবি করেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জাতীয় উদ্যান রক্ষায় সকলের সহযোগিতা দাবি করে বলেন, স্বল্প জনবল হলেও বন রক্ষায় আমাদের যথারীতি দায়িত্ব রয়েছে। এখানে একটি গাছও যাতে চুরি না হয় সে বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। গাছ চুরি হওয়ার কোন সংবাদ নেই। তারপরও অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।
আইনিউজ/মুজিবুর রহমান রঞ্জু
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’
- করোনা জয় করে সুস্থ হয়েছেন মৌলভীবাজারের ৩ চিকিৎসক