মহিদুর রহমান
গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা
মহিদুর রহমানের `গল্পে গল্পে মহাকাশ` বই থেকে নেয়া
রুদ্র এ বাড়ির একমাত্র পড়ুয়া। পড়ুয়া হলে কি হবে পাঠে মন নেই তার মোটেও। তবে সকাল-সন্ধ্যা পড়ার সময় কেউ একজন পাশে বসলে তার মনটা যেন বইয়ের ভেতরে টেকে। আর তখনই সে খানিকটা সময় পড়ে এবং ভালো করেই পড়ে- আসল কথা, হয় তার আব্বু, না হয় আম্মু অথবা টিচার অর্থাৎ পড়ার সময় পাশে একজন বসে থাকা চাই। তা নাহলে উড়ো মন কোথায় যেন চলে যায়। কোমল মনটা খালি উড়ু উড়ু করে। এ যেনো এক পাগল মন। রুদ্রের মন খুবই উচাটন। সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী এ ছেলেটা খুবই চঞ্চল আর দুরন্ত। যতক্ষণ জেগে থাকে খুব মাতিয়ে রাখে সবাইকে। অথচ আজ তিন চার দিন হলো রুদ্র চুপ। একদম চুপ।
গত দু দিন থেকে রুদ্র ইউটিউবে মহাকাশ বিষয়ক কিছু আপলোড করা ভিডিও ক্লিপ দেখছিল আর তার বর্ণনা শুনছিল। যতোই ইউটিউবে মহাকাশের নানা বিস্ময়কর ঘটনার বর্ণনা দেখছিলো ততই রুদ্র এক অজানা রহস্যের ভেতর হারিয়ে যাচ্ছিল।
কয়েকদিন আগে তার মেঝোমামা ইমরুলকে রুদ্র প্রশ্ন করেছিলো-
- আচ্ছা মামা চাঁদ, সূর্য আর পৃথিবী এরা কি বন্ধু?
ইমরুল কোনো উত্তর দেয়নি। প্রশ্নটা সে এড়িয়ে যায়। তারপর আবার রুদ্র প্রশ্ন ছুঁড়ে,
- মামা সূর্য যদি পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে তাহলে কি গাছপালা, পশুপাখি, মানুষসহ সবকিছু পুড়ে যাবে?
এরপরও ইমরুল কোনো উত্তর দেয়নি। রুদ্রকে তখন খুবই হতাশ দেখায়। মেঝোমামাকে তার অনেক প্রশ্ন করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু রুদ্র খুবই নিরুৎসাহিত হলো। তবু সে আবারো প্রশ্ন করে,
- মামা, চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে কেন ঘুরে?
মেঝোমামা তখন কিছুটা বিরক্তিকরভাবে বললেন,
- তুমি বাঘ, সিংহ, বানর, হরিণ,শিয়াল, কুমির এসবের গল্প শিখবে-জানবে কিন্তু এতো কঠিন বিষয় নিয়ে কেন নাড়াচাড়া করছো?
রুদ্র চুপ হয়ে যায়। আর কোনো কথা বলবার ইচ্ছাই হয় না তার। মেঝোমামার উপর খুবই বিরক্ত হয় সে।
রুদ্র মনে মনে ঠিক করে তার আব্বুকে প্রশ্নগুলো করবে। কিন্তু রুদ্রের আব্বুর খালি অফিস আর অফিস। খালি কাজ। তাই সময় আর সুযোগ হতে বেশ কয়েকদিন চলেও গেল। এরই মধ্যে রুদ্রের মনের আঙিনায় আরও অনেক প্রশ্ন কিলবিল করছিল। বিশেষ করে আকাশ কতটুকু এলাকা জুড়ে বিস্তৃত? এর কি কোন সীমা আছে?
আজ কদিন থেকে খুবই গরম পড়েছে। বাড়ির ফ্যানগুলো ঘুরতে ঘুরতে কেমন ক্লান্ত হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরের যে বাতাস সেটাও অসহ্য। রুদ্রের আব্বু আজ অফিসে যাননি। বাসায় থেকেও ছটফট করছিলেন গরমে। দিন শেষে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো তখনই রুদ্র তার আব্বুকে বলে,
- আব্বু ছাদে খুব বাতাস বইছে। ছাদে চলো না!
তখন সন্ধ্যার আলো প্রায় মুছে গেছে। পূর্বাকাশে পূর্ণ চাঁদ। দক্ষিণ দিকে কিছুটা হেলে পড়েছে। সেই চাঁদের আলো চারদিকে টিকরে পড়ছে। রুদ্র তার আব্বুর সাথে চারতলা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ব দক্ষিণ দিক থেকে ক্রমাগত বাতাসের স্নিগ্ধ স্পর্শে সারা শরীর যেনো জুড়িয়ে যাচ্ছে। রুদ্র তার আব্বুকে বলে,
- রাতের আকাশে চাঁদ থাকে। অনেক তারা থাকে। তারাগুলো মিটিমিটি করে জ্বলে। খুব সুন্দর, তাই না আব্বু?
রুদ্রের আব্বু তখন রুদ্রর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলেন,
- জানো, রাতের মেঘমুক্ত আকাশ খুবই সুন্দর আর বিস্ময়কর।
রুদ্র বলে,
- আচ্ছা আব্বু, আকাশ কতোটুকু এলাকা জুড়ে বিস্তৃত? এর কি কোনো সীমা আছে?
রুদ্রের আব্বু বললেন,
- আমাদের মাথার উপরে রয়েছে অনন্ত আকাশ, সীমাহীন ফাঁকা জায়গা যাকে বলে মহাকাশ। এই ফাঁকা জায়গা আসলে ফাঁকা নয়। এর মাঝে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। তবে এক সময় মানুষ ভাবত, মহাকাশের সীমা আছে। যতদূর পর্যন্ত তাদের চোখ যেত ততোদূর পর্যন্ত তারা ভাবত মহাকাশের সীমানা।
রুদ্র অবাক বিস্ময়ে শুনতে থাকে। রুদ্রের আব্বু বলতে থাকেন,
- এছাড়া তারা মহাকাশকে ডিমের পিঠের মত বাঁকা দেখতো। পরবর্তীতে যখন বিজ্ঞানীরা দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করল তখন
মানুষ তার দৃষ্টিসীমার বাইরের অনেক গ্রহ, নক্ষত্র, ধূমকেতু ও গ্যালাক্সি দেখতে পেল। আর তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছালো যে, মহাকাশের কোনো শেষ নেই। সূর্য, চাঁদ, পৃথিবী, তারা ইত্যাদি মহাকাশেরই সদস্য। এদেরকে একসাথে মহাবিশ্ব বলে।
রুদ্র আরও কৌতূহলী হয়ে ওঠে। তার আব্বুকে প্রশ্ন করে,
- তাহলে মহাবিশ্ব কত বড় তা কি কেউ জানে?
তার আব্বু তখন বলেন,
- মহাবিশ্ব যে কত বড় তা কেউ জানেনা। কেউ জানেনা মহাবিশ্বের আকার বা আকৃতি কেমন? অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন মহাবিশ্বের শুরু ও শেষ নেই। কেউ কেউ এখনো বিশ্বাস করেন মহাবিশ্বের আকার ও আকৃতি আছে। মানুষ প্রতিনিয়তই মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করছে। তবু, এর অনেক কিছুই এখনো অজানা রয়ে গেছে।
রুদ্র তার আব্বুকে তখন কানে কানে বলে,
- জানো আব্বু মেঝোমামা খুব বোকা! এসব কিচ্ছু জানেন না। কিন্তু আমি সেই অজানাকেও জানতে চাই আব্বু।
রুদ্র অজানাকে জানার নেশার ব্যাকুল হয়ে ওঠে। সে দেখে, পূবাকাশে হেলে পড়া চাঁদটা একটু বেশিই যেন চকচক করছে। আর বাড়ির ছাদের উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব কোণ থেকে বাতাস আরও দ্বিগুণ বেগে বইতে শুরু করেছে।
লেখক- মহিদুর রহমান
শিশুরা গল্প পছন্দ করে। সেই গল্প বলাটাও হতে হয় শিশোতোষ। সরল, সাবলীল, চমক আর চমক ভাঙায়। লেখক মহিদুর রহমান সেই কঠিন কাজটি সেরেছেন সহজ ভাবেই। সৌরজগতের অনেক রহস্যেঘেরা কঠিন বিষয় গল্পের আদল দিয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। কী নেই তাতে! মঙ্গলগ্রহ, চাঁদ, সূর্য, ধূমকেতু, মহাকাশ সব লিখেছেন সাজিয়ে, গুছিয়ে, বুঝিয়ে।
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- যাত্রাপালার শিল্পী ও দর্শক-শ্রোতা : অতীত থেকে বর্তমান
- বাবু ফকিরের আশ্রম, গান শিখলে ফাউ মিলে মুড়ি, শিঙারা
- এ পি জে আব্দুল কালাম: ‘দ্য মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’
বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা