Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ০৯ মে ২০২৫,   বৈশাখ ২৬ ১৪৩২

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ৩ মার্চ ২০২০
আপডেট: ১৭:০৮, ৩ মার্চ ২০২০

ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, ৩২ বছর ধরে মা শেকলবন্দি

এ জে লাভলুবড়লেখা : বড়লেখায় ৩২ বছর ধরে শেকলবন্দী মানসিক ভারসাম্যহীন নারী হবিবুন নেছা (৫৮)। মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক।

দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছোট থাকা অবস্থায় মস্তিষ্কে বিকৃতি দেখা দেয় ওই নারীর। আর তখন থেকেই তার লাঞ্চনা-বঞ্চনার জীবন শুরু।

বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক আই নিউজকে বলেন- ‘আমি বিষয়টি জেনেই হবিবুন নেছাকে উদ্ধার করেছি। নিজ হাতে গোসল করিয়ে, নতুন কাপড়-চোপড় দিয়েছি। হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আপেল, দুধ, কমলা, খাবার-দাবার দিয়ে এসেছি। তিনি খাবার খাচ্ছেন।

‘স্বামী মুহিবুর রহমান স্ত্রীর প্রতি ধর্মীয়, মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ব নেয়াতো দুরের কথা। বরং ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পৃথক সংসার শুরু করেন। স্বামী ও ছেলেরা আজ প্রতিষ্ঠিত ফার্নিচার ব্যবসায়ী। কিন্তু ৩২ বছর ধরে ভাইয়ের ছাপরায় (ঘরের কোণে) শেকলবন্দী ।মানবেতর জীবন যাপন করলেও ভরণপোষণ, সুচিকিৎসা কিংবা মাঝেমধ্যে খোঁজ খবর নেয়ারও তারা প্রয়োজন মনে করেনি। তারা যেন ওই নারীর মৃত্যুর খবরেরই অপেক্ষায় ছিলেন। পায়ে লোহার তালাবদ্ধ শেকল আর পাকা খুঁটিতে রশিতে বাধা জীবনই যেন হবিবুনের নিয়তি।’ -কথাগুলো বলছিলেন হবিবুনের বড়ভাই ইসলাম উদ্দিন।

[caption id="attachment_50285" align="alignnone" width="823"] চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে শেকলবন্ধী হবিবুন নেছাকে।[/caption]

তবে অমানবিক এ ঘটনার খবর পেয়ে বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই নারীকে উদ্ধার করেন।

সরেজমিনে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা সদর ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামের মুহিবুর রহমান স্ত্রী হবিবুন নেছার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে সাথে নিয়ে অন্য নারীকে বিয়ে করে পৃথক সংসার শুরু করেন। খোঁজ নেননি মানসিক রোগী স্ত্রীর। দুই ছেলে ও মেয়ে বড় হয়েও মানসিক রোগী মায়ের খোঁজ খবর রাখেনি। প্রায় ৩২ বছর ধরে হবিবুন নেছার বড়ভাই ইসলাম উদ্দিন বোনের দেখাশুনা করছেন। পাকা বসতঘরের উত্তর দিকের একটি ছাপড়া ঘরে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে পায়ে লোহার শেকল ও রশি দিয়ে তাকে বেঁধে রেখেছেন। কংকালসার হবিবুন নেছা শুধু ফেল ফেল করে তাকিয়েই থাকেন। কথা বলতে গিয়ে দুর্বল শরীরের কারণে কোন কিছুই স্পষ্ট করতে পারেন না।

ইসলাম উদ্দিন জানান, বিয়ের ৫-৬ বছরের মধ্যেই ছোট বোনের মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ওষুধপাতি করেছেন। কিন্তু সারেনি। স্বামী ও ছেলে-মেয়েরা খোঁজ-খবর নেয় না। ভাগ্না নাজিম উদ্দিন ও আলা উদ্দিন বিয়ে-সাদি করেছে। উত্তর চৌমোহনায় তাদের ফার্নিচারের ব্যবসা রয়েছে। অনেক অনুনয় বিনয় করা সত্ত্বেও তারা মায়ের কোন খোঁজই রাখে না।

[caption id="attachment_50286" align="alignnone" width="1280"] শেকলবন্ধী হবিবুন নেছাকে উদ্ধার করেন ওসি ইয়াছিনুল হক।[/caption]

বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক আই নিউজকে বলেন- ‘আমি বিষয়টি জেনেই হবিবুন নেছাকে উদ্ধার করেছি। নিজ হাতে গোসল করিয়ে, নতুন কাপড়-চোপড় দিয়েছি। হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আপেল, দুধ, কমলা, খাবার-দাবার দিয়ে এসেছি। তিনি খাবার খাচ্ছেন। মনে হয়েছে- শারীরিকভাবে খুব দুর্বল। মানসিক কিছু সমস্যা থাকতে পারে। যতদিন পর্যন্ত সুস্থ না হচ্ছেন- হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

ওসি মো. ইয়াছিনুল হক বলেন- স্ত্রী কিংবা মা পাগল হলেও স্বামী ও সন্তানদের নৈতিক দায়িত্ব তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া। ভরণপোষণ ও সেবা শুশ্রুষা করা। ৩২ বছর ধরে একজন মানসিক রোগীকে নোংরা স্থানে এভাবে বেধে রাখা অত্যন্ত অমানবিক, মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। স্বামী ও সন্তানদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

এ জে লাভলু/ আরডি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়